অ্যালুমিনিয়ামে রেকর্ড, নিকেলের দাম ১১ বছরে সর্বোচ্চ
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫১ এএম, ০৩ মার্চ ২০২২
রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ এবং তার জেরে পশ্চিমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার প্রভাব টের পেতে শুরু করেছে বিশ্ব। আন্তর্জাতিক বাজারে অ্যালুমিনিয়ামের দাম নতুন রেকর্ড গড়েছে আর নিকেলের দাম হয়েছে ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। দাম বেড়েছে জিংক-তামার মতো ধাতুগুলোরও। বুধবার (২ মার্চ) এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ।
বিশ্বে অ্যালুমিনিয়াম ও নিকেলের অন্যতম প্রধান উৎপাদক রাশিয়া। ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে মস্কোর ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা, বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এবং অর্থদাতারা চুক্তি বাতিল করায় মহাসংকটে পড়েছে আন্তর্জাতিক ভোগ্যপণ্যের বাজার। ধাতুর মতো পণ্যগুলো পরিবহনও ক্রমেই কঠিন হয়ে উঠছে। শিপিং কোম্পানিগুলোর ঘোষণা অনুসারে, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক পণ্যবাহী জাহাজ আর রাশিয়ায় যাবে না।
লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জের হিসাবে, অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন ধাতুর উৎপাদন এমনিতেই কম ছিল। বুধবার এর আরও অধঃপতন হয়েছে।
ইউরোপে ধাতুর সরবরাহ কমে গেছে। সেখানে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় স্মেলটাররা (গলনকারী) উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছে। ইউরোপে প্রিমিয়াম বেড়ে যাওয়া যুদ্ধ শুরুর আগে থেকেই ব্যবসায়ীদের কন্টেইনারের বদলে ব্রেক-বাল্ক জাহাজে ধাতু পরিবহনে প্ররোচিত করছিল। এর মধ্যে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় সংকট আরও তীব্র হয়েছে।
সাংহাই ফিউচার এক্সচেঞ্জে বুধবার অ্যালুমিনিয়ামের দাম ৩ দশমিক ৪ শতাংশ ও নিকেলের দাম ৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। বাড়তি বিদ্যুৎ খরচের কারণে উৎপাদন আরও কমার শঙ্কায় জিংকের দাম বেড়েছে চার শতাংশের বেশি।
এদিন লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জে একপর্যায়ে অ্যালুমিনিয়ামের দাম উঠেছিল প্রতি টন ৩ হাজার ৫৯৭ মার্কিন ডলার, পরে অবশ্য ২ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৩ হাজার ৫৬৯ ডলারে স্থির হয়। এর পাশাপাশি নিকেলের দাম ৩ দশমিক ১ শতাংশ এবং তামার দাম এক শতাংশ বেড়েছে।
যুদ্ধ সংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে চীন এরই মধ্যে জ্বালানি ও পণ্য সরবরাহ নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দেওয়ার আদেশ দিয়েছে। গত বছর বেইজিংয়ের পরিশোধিত নিকেলের আমদানির প্রায় ১৮ শতাংশই ছিল রাশিয়া থেকে, অ্যালুমিনিয়ামের ক্ষেত্রে এর হার ১২ শতাংশের মতো।
চীনের বাইরে অ্যালুমিনিয়ামের সবচেয়ে বড় উৎপাদক রাশিয়ার ইউনাইটেড কো. রুসাল ইন্টারন্যাশনাল এবং দেশটির এমএমসি নরিলস্ক নিকেল বিশ্বের প্রায় ১০ শতাংশ পরিশোধিত নিকেল উৎপাদন করে।
সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাতে ব্লুমবার্গ জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত নরিলস্ক নিকেলের শিপমেন্টে গুরুতর কোনো সংকট দেখা যায়নি। কিছু জাহাজ কোম্পানি তাদের নিকেল পরিবহনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে এবং কন্টেইনার ঘাটতিও উদ্বেগ তৈরি করছে। সূত্রের ভাষ্যমতে, সংকটের প্রভাব গুরুতর নয়, ক্রেতারা এখনো ধাতু নিচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি জানান, এতদিন রুসাল ইন্টারন্যাশনালের অনেক চালান আনা-নেওয়া করেছে ড্যানিশ শিপিং কোম্পানি মারস্কের জাহাজগুলো। কিন্তু ইউক্রেন সংকটের কারণে তারা আর এই কাজ করবে না ঘোষণা দেওয়ায় অ্যালুমিনিয়াম সরবরাহে বেশ ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
রাশিয়ার ওপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে সাকডেন ফাইন্যান্সিয়াল লিমিটেডের গবেষণা প্রধান জিওর্ডি উইলকস বলেন, আপনি আগে থেকেই চাপে থাকা বাজারের এক বড় সরবরাহকারীকে সরিয়ে দিচ্ছেন। সংঘর্ষ শুরুর আগেই আমরা ধাতু দুটি (অ্যালুমিনিয়াম ও নিকেল) নিয়ে সমস্যায় ছিলাম। এখন নিকট ভবিষ্যতে আরও বড় সংকট দেখতে পাচ্ছি।
কেএএ/এএসএম