ইউক্রেন সংকট: পকেটে হাজার হাজার টাকা তবুও মিলছে না খাবার
মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল মনিরুজ্জামান উজ্জ্বল , বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:৪৭ পিএম, ০২ মার্চ ২০২২
‘দুদিন আগে কারফিউ শেষে দিনের বেলায় খাবার কিনতে কিয়েভের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে যাই। স্টোরটির বাইরে তখন মানুষের দীর্ঘলাইন। সবার চোখেমুখে আতংক। সবার মনে আশঙ্কা, এই বুঝি হামলা হলো, প্রাণটি গেলো। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে যখন ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের ভেতরে ঢুকি তখন দেখি খাবারের সব তাক প্রায় শূন্য। শেষ পর্যন্ত দুটি পাউরুটি পাই। কিন্তু তখন বাঙ্কারে অপেক্ষা করছিলেন কমপক্ষে ৩০ জন মানুষ।’
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ইউক্রেনের কিয়েভের নাগরিক মিঠু বুধবার (২ মার্চ) দুপুরে এভাবেই জাগো নিউজকে সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেন।
মিঠু বলেন, খুবই আতংকের মধ্যে আছি। রাতে ঘুম হয় না। খাবারের নিদারুণ সংকট দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে নতুন করে খাদ্যপণ্য মজুদ না হওয়ায় দোকানপাট ও হাটবাজারে খাদ্যপণ্যের অভাব দেখা দিয়েছে। মানুষের পকেটে হাজার হাজার টাকা থাকলেও খাবার পাওয়া যাচ্ছে না। সামনের দিনগুলোতে খাদ্যসংকট আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার হামলার পর স্বাভাবিক জীবনযাপনে ছন্দপতন ঘটে। ইউক্রেনে বসবাসরত বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা প্রাণ রক্ষার্থে পোল্যান্ডসহ আশপাশের দেশে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিতে ছুটে যান। তাদের কেউ গাড়িতে, কেউ ট্রেনে আবার কেউবা মাইলের পর মাইল হেঁটে পোল্যান্ড সীমান্তে যান।
কিয়েভে বাস করা হাবিবুর রহমান হাবিব নামে এক বাংলাদেশি নাগরিক বলেন, গত এক সপ্তাহেরও কম সময়ে খাদ্যসামগ্রীর নিদারুণ সংকট তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দোকানপাটে যেখানে মালামালে ঠাসা থাকতো এখন সেখানে মালামালশূন্য।
তিনি জানান, যুদ্ধের কারণে শুধু ইউক্রেনের নাগরিকরাই নয়, বিপাকে পড়েছে রাশিয়ার সৈন্যরাও। তারা কামান ও ট্যাংক নিয়ে হামলা চালাচ্ছে। ইউক্রেনের সেনারা তাদের প্রতিহত করছে। ইউক্রেনের অনেক স্থানে রুশ বাহিনী কোনঠাসা হয়ে দোকানপাট থেকে মালামাল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় ইউক্রেনের সৈন্য ও সাধারণ মানুষের হাতে ধরা পড়ে বেদম মার খাচ্ছে।
এক ভিডিও বার্তায় হাবিব বলেন, এ মুহূর্তে খুব ভয়ানক ও বিপদজনক অবস্থায় রয়েছি। রাতে ঘুম হচ্ছে না। রাশিয়ার সেনারা এদেশে প্রচুর বোমা ফেলছে। বাসাবাড়ি ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে গোলাগুলি হচ্ছে, রকেট লঞ্চার মারছে। এ অবস্থায় খুব কষ্ট, চিন্তা ও বিপদজনক অবস্থায় আছি। বর্তমানে পকেটে টাকা থাকলেও খাবার-দাবার পাওয়া যাচ্ছে না। যুদ্ধ যেন তাড়াতাড়ি শেষ হয়ে যায় সেজন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চান তিনি।
এমইউ/ইএ/এএসএম