‘মরণোত্তর’ বীর স্বীকৃতি পাওয়া ইউক্রেনের সেই ১৩ সেনা রাশিয়ার হাতে

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৪:৩৮ পিএম, ০১ মার্চ ২০২২
ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ার আক্রমণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ইউক্রেনের ছোট্ট জিমিনি দ্বীপ বা স্নেক আইল্যান্ডের নিরাপত্তায় থাকা ১৩ সেনা নিহত হয়েছিলেন বলে খবর ছড়িয়েছিল। তারা শক্তিশালী রুশ বাহিনীর সামনে আত্মসমর্পণ না করে লড়তে লড়তে বীরের মতো প্রাণ হারিয়েছিলেন বলে দাবি করেছিল ইউক্রেন। সেসময় ভাইরাল একটি অডিও ক্লিপে তাদের ‘শেষ মুহূর্তের’ কথাগুলো শুনে আবেগতাড়িত হয়েছিলেন অনেকেই। কিন্তু এবার শোনা যাচ্ছে, সেই ১৩ সেনা এখনো বেঁচে রয়েছেন।

ভাইরাল সেই অডিও ক্লিপে শোনা যায়, রুশ যুদ্ধজাহাজ থেকে স্নেক আইল্যান্ডের নিরাপত্তারক্ষীদের অস্ত্র ফেলে আত্মসমর্পণ করতে বলা হচ্ছে। তাদের বলা হয়েছিল, আপনাদের অস্ত্রগুলো জমা দিন এবং আত্মসমর্পণ করুন। তা না হলে আপনাদের ওপর গুলি ছোড়া হবে। আপনারা কি আমাদের কথা বুঝতে পারছেন?

এর জবাবে এক ইউক্রেনীয় সেনা যা বলেন, তার বাংলা ভাবার্থ দাঁড়ায় ‘দূরে গিয়ে মর’-এর মতো। অর্থাৎ, তারা আত্মসমর্পণে রাজি নন। এরপর ইউক্রেনীয় সেনারা রাশিয়ার ওই যুদ্ধজাহাজের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন এবং সেখান থেকে সরে যেতে বলেন। পরে রুশ বোমা হামলায় তারা মারা যান বলে দাবি করে ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিও ওই দ্বীপে থাকা ১৩ সেনা নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে তাদের সাহসিকতার প্রশংসা করেন এবং সবাইকে মরণোত্তর ‘যুদ্ধ বীর’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দেন।

অবশ্য রাশিয়া সেই সময় বলেছিল, দ্বীপটিতে থাকা ইউক্রেনীয় সেনারা আত্মসমর্পণ করেছেন। এখন দেখা যাচ্ছে, তাদের কথাই ঠিক। সোমবার (১ মার্চ) ইউক্রেনীয় নৌবাহিনী ফেসবুকের এক পোস্টে নিশ্চিত করেছে, তাদের সহকর্মীরা জীবিত ও সুস্থ রয়েছেন।

ফেসবুক পোস্টে বলা হয়েছে, ওই দ্বীপের সীমান্তরক্ষী ও নৌসেনারা ‘দ্বিগুণ সাহসিকতায় রুশ দখলদারদের প্রতিহত করছিলেন। কিন্তু গোলা-বারুদ ফুরিয়ে যাওয়ায় তারা লড়াই চালিয়ে যেতে পারেননি’। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, রুশ বাহিনী জিমিনি দ্বীপের বাতিঘর, টাওয়ার ও অ্যান্টেনাসহ সব অবকাঠামো ধ্বংস করে দিয়েছে, যার ফলে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ইউক্রেনীয় নৌবাহিনীর অভিযোগ, লড়াইয়ের পর জিমিনি দ্বীপে তারা একটি বেসামরিক উদ্ধারকারী জাহাজ পাঠিয়েছিল। এর ক্রুদেরও আটক করছে রাশিয়া।

অবশ্য গত শুক্রবারই (২৫ মার্চ) রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র ঘোষণা দিয়েছিলেন, জিমিনি দ্বীপের ৮২ জন ইউক্রেনীয় সামরিক কর্মকর্তা ‘অস্ত্র ফেলে স্বেচ্ছায় আত্মসমর্পণ’ করেছেন। তবে রুশ বাহিনী দ্বীপটিতে কোনো হামলা চালিয়েছিল কি না অথবা কেউ হতাহত হয়েছিলেন কি না তা উল্লেখ করেননি তিনি।

রাশিয়ার ওই কর্মকর্তা বলেছিলেন, বন্দিদের সহিংসতায় অংশ না নেওয়ার প্রতিশ্রুতিতে কাগজে সই করতে বলা হচ্ছে এবং অদূর ভবিষ্যতে তাদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

কৃষ্ণ সাগরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত জিমিনি দ্বীপটি ইউক্রেনীয় উপকূল থেকে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার এবং ক্রিমিয়া থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে। আয়তন মাত্র ১৬ হেক্টর হলেও কৌশলগত কারণে এটিকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়।

সূত্র: বিবিসি

কেএএ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।