রক্তে ভাসছে গাজা


প্রকাশিত: ০৩:৪০ এএম, ১৫ জুলাই ২০১৪

গাজা উপত্যকা রক্তে ভাসছে। নারীর রক্ত। শিশুর রক্ত। বৃদ্ধ-বৃদ্ধার রক্ত। ইসরাইলের অব্যাহত হামলায় গাজা উপত্যকা যেন মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। সপ্তম দিনের মতো হামলায় এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭৪ ফিলিস্তিনি। তবে এ সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। রোববার ইসরাইলি সেনারা আকাশ থেকে বেত লাহিয়ায় হুঁশিয়ারিমূলক লিফলেট বিতরণের পর রোববার রাতে হামলা জোরালো হয়েছে। পবিত্র রমজানে গাজার মুসলমানদের ওপর এমন হামলায় আন্তর্জাতিক বিশ্ব যুদ্ধবিরতির জন্য জোর আহ্বান জানাচ্ছে। চলছে কূটনৈতিক উপায়ে যুদ্ধবিরতির। কিন্তু সে দাবির প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে বেসামরিক মানুষদের বাড়িতে, মসজিদে হামলা করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিচ্ছে ইসরাইল। আকাশ ও স্থলপথে গাজা উপত্যকায় মুহুর্মুহু হামলা চালাচ্ছে তারা। গতকাল হামাসের সামরিক শাখা কাসাম ব্রিগেডের তিনটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। এতে কোন হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। এছাড়া তারা হামলা করেছে গাজার দক্ষিণের উপত্যকা ডেইর আল বালাহ’তে। হামলা হয়েছে জাবালিয়াতে। সেখানে অজ্ঞাত সংখ্যক মানুষ আহত হয়েছে।

বেত লাহিয়ায়ও হামলা হয়েছে। ইসরাইলের হামলায় জীবন বাঁচাতে কমপক্ষে ১৭ হাজার মানুষ নিরাপদ আশ্রয়ে গিয়েছেন। ফিলিস্তিনে শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এক বিবৃতিতে বলেছে এ কথা। নিহতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়ে যাওয়ায় গাজা ভিত্তিক প্যালেস্টাইনিয়ান সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস বলেছে, নিহতদের বেশির ভাগই বেসামরিক। তাদের সংখ্যা ১৩০। এর মধ্যে ৩৫টি শিশু ও ২৬ জন নারী। ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে ১৪৭টি বাড়ি। মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কয়েক শ’ বাড়ি। ইসরাইলের অভিযোগ, গাজা থেকে যোদ্ধাগোষ্ঠী হামাস রকেট হামলা চালাচ্ছে ইসরাইলের ভিতরে। এতে কোন ইসরাইলি নিহত হয়নি। আহত হয়েছে অল্প সংখ্যক ইসরাইলি। এর জবাব হিসেবে ইসরাইলের নৃশংস হামলা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে। গতকাল সকালের দিকে উত্তর ইসরাইলে চারটি রকেট হামলা করা হয়েছে লেবানন থেকে। এছাড়া রকেট হামলা করা হয়েছে সিরিয়া থেকে। রোববার ইসরাইলের নৌ কমান্ডোরা উত্তর গাজায় প্রবেশ করে হামলা চালায়। ওদিকে আন্তর্জাতিক মহল যখন যুদ্ধবিরতির আহ্বান জোরালো করেছে তখন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, হামাসের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বৃদ্ধি করছে সেনারা। ফলে সহজে এ হামলা বন্ধ হওয়ার কোন লক্ষণ মিলছে না। মন্ত্রীদের তিনি বলেন, কখন এ অভিযান শেষ হবে আমরা জানি না। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি এরই মধ্যে ফোন করেছেন তাকে। এ সময় তিনি অস্ত্রবিরতিতে মধ্যস্থতার প্রস্তাব দেন। ক্রমবর্ধমান হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের বিষয়টি তুলে ধরেন। জন কেরি বলেন, তিনি আঞ্চলিক নেতাদের সঙ্গে রকেট হামলা বন্ধের বিষয়ে আলোচনা করছেন, যাতে পরিস্থিতি শান্ত করা যায়। রক্ষা করা যায় বেসামরিক মানুষজনকে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনের মানুষজনকে রক্ষায় জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তা দিতে। পোপ ফ্রাঁসিস বিশ্বনেতাদের কাছে এ রক্তপাত বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি এজন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপের ওপর জোর দেন। ওদিকে ফিলিস্তিনে যখন একের পর এক লাশ পড়ছে সাত দিন পরে গতকাল আরব লীগের বৈঠক করার কথা। মিশরের রাজধানী কায়রোতে এ বৈঠক বসার কথা। আন্তর্জাতিক নেতারা ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে এ হামলা বন্ধের জন্য যখন জোর প্রচেষ্টা শুরু করেছে, ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তখনই নড়ন-চড়ন শুরু হলো আরব লীগের। মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে রোববার বলা হয়, গতকাল রাতে ওই বৈঠক হওয়ার কথা।

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।