জার্মানিকে পাল্টা জবাব: ডয়েচে ভেলের সম্প্রচার বন্ধ রাশিয়ায়
ইউরোপে রুশ টিভি নেটওয়ার্ক আরটি’র জার্মান চ্যানেল নিষিদ্ধ হওয়ার জবাবে জার্মানির রাষ্ট্রপরিচালিত সম্প্রচারমাধ্যম ডয়েচে ভেলের (ডিডব্লিউ) প্রচার বন্ধ করে দিয়েছে মস্কো। বাতিল করা হয়েছে জার্মান সংবাদমাধ্যমটির মস্কো ব্যুরোর সব সাংবাদিকের অ্যাক্রিডেশনও। অদূর ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আরও কঠোর পদক্ষেপ আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে রুশ সরকার।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) এ বিষয়ে প্রথম ঘোষণা দেয় রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, রাশিয়ার ভেতরে ডিডব্লিউর স্যাটেলাইট ও সব ব্রডকাস্টিং অধিকার বাতিল করা হচ্ছে। এখন থেকে দেশটিতে ডয়েচে ভেলেকে ‘ফরেন এজেন্ট’ হিসেবে দেখা হবে।
ডয়েচে ভেলে মস্কোর এ সিদ্ধান্তকে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘পুরোপুরি অতিরঞ্জিত প্রতিক্রিয়া’ মন্তব্য করে তীব্র সমালোচনা করেছে। জার্মান সরকার বলছে, রাশিয়ার এ পদক্ষেপ অগ্রহণযোগ্য এবং এর সঙ্গে আরটি’র ওপর বার্লিনের নিষেধাজ্ঞার কোনো তুলনায় চলে না।
জার্মানির সংস্কৃতিমন্ত্রী ক্লদিয়া রথ বলেছেন, আরটি’র লাইসেন্সে সমস্যা ছিল। এ নিয়ে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া না দেখাতে আমি রুশদের কাছে জরুরিভিত্তিতে আহ্বান জানাই।
রাশিয়া-ইউক্রেন ইস্যুতে পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর সাম্প্রতিক উত্তেজনার মধ্যেই এ পদক্ষেপের ঘোষণা এলো। ডয়েচে ভেলের সম্প্রচার বন্ধকে বিদেশি গণমাধ্যমের ওপর ক্রেমলিনের ক্রমবর্ধমান বিধিনিষেধের নমুনা হিসেবে উল্লেখ করেছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
জার্মানির রাষ্ট্রায়াত্ত সম্প্রচারমাধ্যম ডয়েচে ভেলে বিশ্বজুড়ে বাংলাসহ মোট ৩০টি ভাষায় কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সংবাদমাধ্যমটির প্রধান পিটার লিমবুর্গ বলেছেন, রাশিয়া যে কাজ করেছে, তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। ডিডব্লিউ মহাপরিচালকের বক্তব্য, অফিস বন্ধ করে, অ্যাক্রেডিটেশন বাতিল করে সাংবাদিকদের মুখ বন্ধ করে রাখতে পারবে না রাশিয়া। ডিডব্লিউ আগের চেয়ে আরও বেশি রাশিয়ার খবর দেখাবে। বিষয়টি নিয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি।
তবে রুশ কর্মকর্তা ও ক্রেমলিনপন্থি গণমাধ্যমগুলো ডয়েচে ভেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাকে স্বাগত জানিয়েছে। রুশ সিনেটর আন্দ্রেই ক্লিমভ এটিকে ‘যথার্থ’ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। স্থানীয় একটি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, জার্মানদের ‘শত্রুভাবাপন্ন’ কাজের প্রতিক্রিয়া এটি।
আরটি’র জার্মান শাখা আরটি ডিই’কে গত ২২ ডিসেম্বর ইউরোপের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক থেকে ব্লক করে দেওয়া হয়। সম্প্রচার শুরুর মাত্র এক সপ্তাহের মাথায় জার্মান কর্তৃপক্ষের অনুরোধ এ ব্যবস্থা নেয় ইউরোপ। অবশ্য ইন্টারনেট ও মোবাইল অ্যাপে এখনো চ্যানেলটি দেখা যাচ্ছে।
নিষিদ্ধ হওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আরটি ডিই বলেছে, তাদের সম্প্রচার হচ্ছিল মস্কো থেকে। আর সার্বিয়ান লাইসেন্স থাকায় ইউরোপীয় আইনানুসারে জার্মানিতেও সম্প্রচার কার্যক্রম চালানোর বৈধতা রয়েছে চ্যানেলটির।
কিন্তু জার্মান কর্তৃপক্ষের দাবি, আরটি ডিইর সম্প্রচার হচ্ছিল বার্লিন থেকে এবং তাদের কাছে ইউরোপীয় আইনে বৈধতার কোনো অনুমতি ছিল না।
সূত্র: এএফপি, ডয়েচে ভেলে
কেএএ/এমএস