সাবমেরিন ক্যাবল মেরামতে কয়েক সপ্তাহ বিচ্ছিন্ন থাকবে টোঙ্গা
মহাসাগরে এমন অগ্ন্যুৎপাত গোটা বিশ্বকে চমকে দিয়েছে। আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জের বেশিরভাগ অংশ বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাত ও সুনামিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে টোঙ্গা। সরকারিভাবে দেশটিতে তিনজনের মৃত্যুর কথা জানানো হয়েছে। এখনো নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে।
অগ্ন্যুৎপাতের কারণে টোঙ্গার সমুদ্রের তলদেশে ক্ষতিগ্রস্ত সাবমেরিন ক্যাবল মেরামত করতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে। আর এটি করতে গেলে বিশ্ব থেকে কয়েক সপ্তাহের জন্য যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে টোঙ্গা।
ভয়াবহ অগ্ন্যুৎপাতে টোঙ্গার একমাত্র আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেটির সংযোগ রয়েছে প্রতিবেশী দেশ ফিজির সঙ্গে। এখন পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগ ও আন্তর্জাতিক ফোন সার্ভিস চালু করা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে সরকারের সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ স্যাটেলাইট ফোন ব্যবহার করছেন।
নিউজিল্যান্ডের গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, আগ্নেয়গিরির ছাই আর মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে এখনো ভালোভাবে যোগাযোগ স্থাপন করতে না পারায় ব্যাহত হচ্ছে ত্রাণ তৎপরতাও।
ফিজির সাবমেরিন ক্যাবল টোঙ্গার ক্যাবল দ্বারা পরিচালিত হয়। এই ক্যাবল সংযোগের মালিকানা রয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি খাতে বিনিয়োগকারীদের। সাউদার্ন ক্রস ক্যাবল নেটওয়ার্ক (এসসিসিএন) দ্বারা পরিচালিত আরেকটি ক্যাবলের মাধ্যমে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে।
এসসিসিএনের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ডিন ভেভারকা বলেন, টোঙ্গা-ফিজির ক্যাবল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় সমুদ্রের তলদেশে ভূমি স্থানান্তরের কারণে। তিনি বলেন, মার্কিন কোম্পানি সাবকমের একটি জাহাজ সমুদ্রের নিচের ক্যাবল সংযোগে বিশেষভাবে কাজ করবে। সেটি টোঙ্গা থেকে ৩২ কিলোমিটার দূরে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় যাবে। জাহাজটি পাপুয়া নিউগিনি থেকে ছাড়বে, তবে অতিরিক্ত ক্যাবলের জন্য প্রথমে সামোয়াতে থামতে হবে এটিকে।
তিনি আরও জানান, ফেব্রুয়ারির শুরুর দিকে ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় এটি পৌঁছানো সম্ভব নয়।
টোঙ্গা সাবমেরিন ক্যাবলের চেয়ারম্যান সামিউয়েলা ফোনুয়া অস্ট্রেলিয়ার গণমাধ্যমকে জানান, আগ্নেয়গিরিটি যতক্ষণ সক্রিয় থাকছে ততক্ষণ মেরামতের জন্য কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত ক্যাবল সংযোগ করতে পারবেন না। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি এখনো অনুকূলে নয়।
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির একজন রিসার্চ ফেলো আমান্ডা ওয়াটসন বলেন, ২০১৯ সালে টোঙ্গা-ফিজি ক্যাবলটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে মেরামত করতে দুই সপ্তাহ সময় লেগেছিল। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রচেষ্টায় আরও বেশি সময় লাগতে পারে। আগ্নেয়গিরির সক্রিয়তা আরও পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনায় মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের প্রতিরক্ষা বাহিনীর তোলা ছবি প্রকাশ পায়। প্রথমবারের মতো প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, পুরো টোঙ্গা কালো ধোঁয়া ও ছাইয়ে ঢেকে গেছে। বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এটি গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা।
টোঙ্গার সরকার জরুরি সহায়তা আহ্বান করায় নিউজিল্যান্ড একটি সামরিক জাহাজ পাঠিয়েছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দেওয়ায় একটি জাহাজে খাবার পানিও সরবরাহ করেছে দেশটি।
হাঙ্গা টোঙ্গা-হাঙ্গা হা’পাই নামের আগ্নেয়গিরিটিতে অগ্ন্যুৎপাতের ঘটনা ঘটে শনিবার। এরপর পুরো প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে সুনামির ঢেউ আছড়ে পড়ে। টোঙ্গার রাজধানী থেকে আগ্নেয়গিরিটি ৬৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। ঘটনাস্থল থেকে নিউজিল্যান্ডের দূরত্ব দুই হাজার ৩০০ কিলোমিটার এবং ফিজির দূরত্ব ৮০০ কিলোমিটার।
সুনামির ঢেউ আঘাত হেনেছে হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান উপকূলেও। প্রচণ্ড ঢেউয়ে পেরুতে মার গেছেন দুইজন। আগ্নেয়গিরিটি ভূমিকম্পের দিক থেকে অত্যন্ত সক্রিয় প্যাসিফিক রিং অব ফায়ারের ওপরেই অবস্থিত বলে জানা গেছে।
সূত্র: নিক্কেই এশিয়া
এসএনআর/এএসএম