এখন কান দিয়ে গান শুনে মন ভরে না


প্রকাশিত: ১১:৪৭ এএম, ০৫ জানুয়ারি ২০১৬

অন্যান্য বছরের তুলেনায় গেল বছর অডিও সিডি বিক্রির হার কমেছে। নতুন বছরে এর চেয়ে ভালো কিছু প্রত্যাশা করা যাবে না অডিও ইন্ডাস্ট্রি থেকে। কারণ, দিনকে দিন গান শোনার অভ্যাস কমছে মানুষের।

একসময় মানুষজন অবসরে চোখ বন্ধ করে গান শোনে মন ভরাতেন। এখন শ্রোতারা মন ভরান গান দেখে। অর্থাৎ মোবািইল, কম্পিউটার বা টিভিতে গান দেখতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন এখনকার শ্রোতারা। তাদের অভ্যেসটা একদেন গড়েনি। এদেশে ভিসিআর প্রবর্তনের পর থেকে সিনে দর্শকের মাঝে হিন্দি সিনেমা বা সেসব ছবির গান দেখার প্রবণতা বাড়ে।

সেসময় অবশ্য বাংলাদেশের সিনেমার গান কিংবা মিউজিক ভিডিও আকর্ষিত করতো দর্শকদের। নব্বই দশকে এদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলের পদার্পণ হলে বিদেশি মিউজিক টিভি চ্যানেলগুলোর মাধ্যমে গান দেখার অভ্যেস বৃদ্ধি পেতে থাকে দর্শকদের।

তবুও তখন ভালোই চলছিলো অডিও ব্যবসা। ধীরে ধীরে বিশ্বময় প্রযুক্তির অগ্রগতি এতোই বৃদ্ধি পেতে থাকলো, যে কারণে পিছিয়ে নেই আমরাও। প্রযুক্তির এগিয়ে যাওয়া যে সবসময় সুফল বয়ে আনে না তো বোঝা যায় এদেশের অডিও ব্যবসার দিকে নজর দিলে। আশির দশকে শুরু হওয়াি আমাদের জমজমাট অডিও ইন্ডাস্ট্রি এখন মৃতপ্রায়।

তবুও কিছু অডিও কোম্পানি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অডিও ব্যবসা ধরে রাখতে। কিংবা তারা সচেষ্ট, আমাদের গানের জগতকে বাঁচাতে। অদৃশ্য অনেক অশুভ মক্তির চক্রান্তে দীর্ঘদিন ধরে মোবািইলের রিংটোন-ওয়েলকাম টিউন রাইট নিয়ে জোড়ালো দ্বন্দ্ব ছিলো অডিও কোম্পানি মালিক ও সংগীতশিল্পীদের মাঝে। এসব ভূয়া আন্দোলনের নামে মোবাইল কোম্পানিগুলো থেকে মোটা অংকের টাকা ধান্দা করে গলাবাজি থামিয়েছেন তথাকথিত আন্দোলনকারীরা।

অথচ সেসব ভাতে মরা শিল্পীরা একসময় অডিও কোম্পানির হাতে পায়ে ধরে জীবন ধারণ করতেন। নানান ঝুঁকি নিয়ে সেসব শিল্পীদের ওপর বছরের পর বছর লগ্নি করে তাদের তারকা বানিয়েছেন অডিও ইন্ডাস্ট্রির ব্যবসায়ীরা। তারকা হয়ে গাড়ি বাড়ির মালিক হওয়ার পরে এখন কিছু শিল্পী বেঈমানী করছেন। তারা অডিও ব্যবসা নিয়ে মন্দ প্রচার চালাচ্ছেন।

এমন চড়াই উৎড়াইয়ের সুরঙ্গ পথ দিয়েই এগুচ্ছে আমাদের অপুষ্টিতে ভোগা সংগীতাঙ্গন। তবুও থেমে নেই- এটাই আশার কথা। নানা প্রতিবন্ধকতার পরও অনেকে ভালো গান করছেন। অনেকেই ভালো গান লিখছেন। অনেকিই অনেক কষ্ট করে নিজের টাকায় শ্রোতাদের গান শুনিয়ে তারকা খ্যাতি পাচ্ছেন। এভাবেই ভালো মন্দে দিন কেটেছে ২০১৫।

এ বছরটাও যে তেমনই যাবে তা নিশ্চিত। কারণ বিশ্ব জুড়ে প্রযুক্তির নতুন স্পর্শে বিমোহিত হচ্ছে মানুষ। তবে, বাঙালি জাতি গান পাগল। ঢেঁকি যেমন স্বর্গে গেলেও ধান ভানে, তেমনি এ জাতিও নিশ্চিন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত গান শুনবেই তা নিশ্চত। সে যেভাবেই হোক, যে দেশের বা ভাষারই গানই হোক আর তা যত মন্দ বা পথই হোক।

আর এসব কারণেই এত প্রতিবন্ধকতার ভেতরেও হাবিব, আরেফিন রুমি, ইমরান, পড়শী, শহীদ, কাজী শুভ, বেলাল খান, খন্দকার বাপ্পী, খেয়া, নওমী, আনিকা, ইবনাত, ঐশীসহ আরো অনেকে গান গেয়ে সুনামের পাশাপাশি তারকাখ্যাতি পাচ্ছেন। আশা করা যাচ্ছে, চলতি বছরে আরো কিছু ভালো গান ও ভালো শিল্পী উপহার পাবেন দেশবাসী। এদেশেরে সংগীত জগতের নানাবিধ সমস্যার মাঝেও দেশজুড়ে অনেক তরুণ-তরুণী যে গান লেখা কিংবা গাওয়ায় উৎসাহী হয়ে উঠেছেন, তা অাশা জাগানিয়া।

তবে নিরাশার ব্যাপার হলো, এখন কেউ সংগীতশিল্পী হতে চাইলে ব্যক্তিগতভাবে তাতে কিছু অর্থ লগ্নি করে উন্নতমানের মিউজিক ভিডিও বানাতে হয়। সেই ভিডিও যদি দর্শকের ভালো লাগে তবেই শিল্পীর সুনাম ছড়ায়। এক্ষেত্রে গানের মানের বিষয়টি ফিকে হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি অডিও কোম্পানীড়গুলোর ঝুঁকি থেকে যায় নতুন কারো জন্য লগ্নি করায়। তবুও তারা করে যাচ্ছেন সাধ্যমত।

এর মাঝে মোবাইল অপারেটর কোম্পানিগুলো অডিও কোম্পানিকে ওয়েলকাম টিউন থেকে আয়ের অংশ নিয়মিত প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন জটিলতায় ভুক্তভোগী আমাদের সংগীতাঙ্গন। এ নিয়ে যেন কোনো মাথাব্যাথা নেই তথ্য কিংবা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের। অথচ দেশের প্রচলিত কপিরাইট আইন অনুযায়ী অডিও ইন্ডাস্ট্রির এ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। যেমনটি হচ্ছে পাশের দেশ ভারতে। সে দেশের কপিরাইট আইন অনুযায়ী গীতিকার, সুরকার, সংগীত পরিচালক বা অডিও কোম্পানীর মধ্যে ওয়েলকাম টিউন কিংবা ইউটিউবের মাধ্যমে আয় করা অর্থ সরকারী উদ্যোগে গঠিত একটি পৃথক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বন্টন করা হয়। ইচ্ছে করলে বাংলাদেশ সরকারও এমন একটি উদ্যোগ নিতে পারেন।

সবশেষে জয় হোক বাংলা গানের, জয় হোক আমাদের অডিও ইন্ডাস্ট্রির।

লেখক : সাংবাদিক, গীতিকার, সাহিত্যিক

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।