সীমান্তে সার্বক্ষণিক তৎপর থাকে বিজিবি : নজরুল ইসলাম
দেশের যে কয়েকটি জেলার সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে প্রতিনিয়ত বাংলাদেশে মাদক ঢোকে বা ঢুকে পড়ছে তার মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অন্যতম। ভারতের ত্রিপুরা সীমান্ত ঘেঁষা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, কসবা ও বিজয়নগর উপজেলায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যদের নিয়মিত অভিযান আর নানা তৎপরতায়ও বন্ধ হচ্ছে না মাদকের অবৈধ অনুপ্রবেশ।
এসব বিষয় নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন বিজিবির ১২ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. নজরুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন জাগো নিউজের ব্রাহ্মণবাড়িয় প্রতিনিধি আজিজুল আলম সঞ্চয়।
জাগো নিউজ : ১২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধীনে কতটুকু সীমান্ত রয়েছে এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অংশে কতটুকু?
নজরুল ইসলাম : সর্বমোট ৬৮ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা রয়েছে ১২ ব্যাটালিয়নের অধীনে, এর মধ্যে সবটুকু সীমান্তই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার অংশে।
জাগো নিউজ : সীমান্তের বর্তমান পরিস্থিতি কেমন?
নজরুল ইসলাম : সীমান্তের বর্তমান অবস্থা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক ভালো। আমরা নিয়মিত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) সঙ্গে পতাকা বৈঠক করে থাকি। সীমান্তে সার্বিক নিরাপত্তা এবং কোনো ধরনের অনাকাঙ্খিত ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য আমরা সার্বক্ষণিক তৎপর রয়েছি। সীমান্তে কোনো ধরনের সমস্যা নেই। বিজিবির তৎপরতায় সীমান্তে মাদক চোরাচালন, নারী ও শিশু পাচার, অবৈধ অনুপ্রবেশসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদে জীবনযাপন করছেন।
জাগো নিউজ : সীমান্তে বিজিবি এত তৎপর থাকা সত্ত্বেও কিভাবে ভারত থেকে মাদক ঢুকছে বা ঢুকে পড়ছে?
নজরুল ইসলাম : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সঙ্গে ঢাকার সড়ক, নৌ ও রেলপথে যোগাযোগ অত্যন্ত ভালো। বিজিবি সীমান্তে তাদের দায়িত্ব অত্যন্ত সুন্দরভাবে ও তৎপরাতর সঙ্গে এবং সার্বক্ষণিক টহলের মাধ্যমে পালন করছে। মাদক চোরাচালান শুধুমাত্র বিজিবির একার পক্ষে রোধ করা সম্ভব নয়। মাদক ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে মাদক সেবনকারী ও কিছু অসাধু ব্যক্তিবর্গ এবং নানা মতাদর্শের লোক এর সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। এটি এককভাবে রোধ করা সম্ভব নয়। জনগণসহ আমরা সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করলে সীমান্তে অবশ্যই মাদক চোরাচালানসহ সব ধরণের অরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুন্যের কোঠায় নেমে আসবে।
জাগো নিউজ : আপনি যোগদানের পর ১২ বিজিবি ব্যাটালিয়ন সীমান্তে অপরাধ নির্মূলে কতটুকু সফল হয়েছে বলে মনে করেন?
নজরুল ইসলাম : আমরা সীমান্তে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে মাদক চোরাচালানকারীদের আটক করছি। মাদক চোরাচালন প্রতিরোধে আমরা অনেকটা সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। সীমান্তে বিজিবি অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা বিজিবির পাশাপাশি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, র্যাব ও পুলিশ মিলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছি এবং এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে।
জাগো নিউজ : গত এক বছরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন সীমান্তে বিজিবি কয়টি অভিযান পরিচালনা করেছে, এসব অভিযান কি পরিমাণ মালামাল উদ্ধার হয়েছে?
নজরুল ইসলাম : সীমান্তবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিনটি উপজেলার ২১টি বর্ডার আউটপোস্টের (বিওপি) মাধ্যমে প্রতিদিন ৮৫টি অভিযান পরিচালিত হয়ে থাকে। সেই হিসেবে প্রতি মাসেই দুই হাজার ৫শ` ৫০টি অভিযান পারিচালিত হয়ে থাকে। এছাড়াও নানা সময়ে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হয়। গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার ৬শ` ৩৭ বোতল ভারতীয় হুইস্কি, সাত হাজার ৫শ` বোতল ফেনসিডিল, দুই হাজার ১৪৯.২ কেজি গাঁজা, ৫শ` ২৩ বোতল আরসিকফ, আট বোতল কোরেক্স, ১শ` ৩৫ বোতল ইনসিরেক্স, ২৮ বোতল জেলিরেস্ট, ২শ` ৭ বোতল বিয়ার (ক্যান), চার বোতল রেক্সমার্ক, ৬শ` ৭ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, তিন গ্রাম হেরোইন এবং ৯৬.২৫০ লিটার দেশীয় মদ উদ্ধার করেছে বিজিবি।
জাগো নিউজ : জাগো নিউজকে সময় দেয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
নজরুল ইসলাম : জাগো নিউজকেও ধন্যবাদ।
এমজেড/এমএস