বিশ্বজুড়ে জঙ্গি হামলার আশঙ্কা
সন্ত্রাসী হামলার আশঙ্কায় নববর্ষ উপলক্ষে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেয়া হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিশেষ করে ব্রাসেলসে হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে দুই জঙ্গিকে আটকের পর নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো ইউরোপ।
ব্রাসেলসে নববর্ষ উদযাপনের সব ধরনের কর্মসূচি বাতিল করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে লণ্ডনে। তুরস্কে সাদা পোশাকে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা সাধারণ জনগণের সঙ্গে মিশে আড়ালে থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা তল্লাশি করবেন।
ব্রিটেনের প্রভাবশালী দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেলজিয়ামের প্রাণকেন্দ্রে হামলার আশঙ্কায় বৃহস্পতিবার দেশটির বিভিন্ন স্থানে তল্লাশি চালিয়েছে পুলিশ। এ সময় অন্তত ছয় সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে ব্রাসেলসের বিভিন্ন জনপ্রিয় স্থান ও স্থাপনায় হামলা পরিকল্পনায় জড়িত সন্দেহে দুজনকে আটক করেছে দেশটির পুলিশ। একই সঙ্গে গত মাসে প্যারিসে জঙ্গি হামলায় জড়িত একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জঙ্গি হামলার হুমকির মুখে নববর্ষ উপলক্ষে আতশবাজিসহ সব ধরনের অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ করেছে বেলজিয়াম।
প্যারিসের ছয়টি স্থানে গত ১৩ নভেম্বর একযোগে জঙ্গি হামলায় ১৩০ জন নিহত হওয়ার পর ইউরোপ জুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেকে বেলজিয়ামে কয়েক দফা জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করা হয়। প্যারিস হামলার মূল হোতা আবদেল হামিদ আবাউদ এবং সালাহ আবদে সালাম বেলজিয়ামে আত্মগোপনে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
তবে ফ্রান্সে শঙ্কার মাঝেও নববর্ষের অনুষ্ঠান উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে শুধুমাত্র দেশটির রাজধানী প্যারিসে ১১ হাজার পুলিশ, সেনা ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া সারাদেশে আরো ৬০ হাজার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নববর্ষ উপলক্ষে টহল দেবেন বলে জানানো হয়েছে। দেশটির সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হবে চ্যাম্পস এলিসিতে। সেখানে হাজার হাজার মানুষ মনোজ্ঞ আতশবাজি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। প্যারিসের মেয়র অ্যান্নি হিডালগো বলেছেন, আমরা এর মাধ্যমে বিশ্বে একটি বার্তা দিতে চাই।
মস্কোর ঐতিহ্যবাহী রেড স্কয়ার বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। মস্কোর মেয়র সের্গেই সবইয়ানিন বলেছেন, এতে লুকানোর কিছু নেই যে, সন্ত্রাসীদের হামলা চালানোর জন্য একটি পছন্দের স্থান এটি। এ স্থানটিতে নববর্ষ উপলক্ষ্যে দেশটির হাজার মানুষ আনন্দে মেতে উঠে।
এদিকে, নববর্ষে যে কোনো ধরনের নাশকতা ঠেকাতে ব্রিটেনে স্বশস্ত্র নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যসহ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সেন্ট্রাল লণ্ডনে নববর্ষের আতশবাজির অনুষ্ঠানে বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের ৩ হাজার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। মাদ্রিদে পুয়ের্তা ডেল সল স্কয়ারে ৬ শ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
নববর্ষের অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কের টাইম স্কয়ারে প্রত্যেক বছর অন্তত ১০ লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এ স্থানটিতে ছয় হাজার পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তুরস্কে নববর্ষের অনুষ্ঠানে আইএস জঙ্গিগোষ্ঠী হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দেশটির পুলিশ।
সোমালিয়া সরকার দেশটিতে আল শাবাব জঙ্গিগোষ্ঠীর হামলার আশঙ্কায় নববর্ষ উদযাপন বাতিল করেছে। তবে নববর্ষ উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় আতশবাজি আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশেও নতুন বছর উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
এসআইএস/পিআর