মহামারিকালেও রমরমা অস্ত্রের ব্যবসা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:১৭ পিএম, ০৬ ডিসেম্বর ২০২১

করোনা মহামারির কারণে লকডাউন, সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়া, গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্কসহ বিভিন্ন নেতিবাচক প্রভাব থাকার পরেও ২০২০ সালে বিশ্বে অস্ত্র বিক্রির একশটি কোম্পানি ব্যবসায় ব্যাপক মুনাফা লাভ করেছে। সম্প্রতি সুইডেনের স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপ্রি) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

সিপ্রির গবেষক আলেকজান্দ্রা মার্কস্টেইনার বলেন, করোনা মহামারির প্রথম বছর, ২০২০ সালের তথ্য দেখে তিনি সত্যিই বিস্মিত। যখন ইন্টারন্যাশনাল মনিটরি ফান্ড (আইএমএফ) বলছে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকোচন ঘটেছে ৩ দশমিক ১ শতাংশ সেখানে একশটি কোম্পানির সামগ্রিক অস্ত্র বিক্রি বেড়েছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ।

বিশ্বের একশটি অস্ত্র তৈরি কোম্পানি ২০২০ সালে ব্যবসা করেছে মোট ৫৩১ বিলিয়ন ডলারের, যা বেলজিয়ামের অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর চেয়েও বেশি।

বিশ্বের একশটি অস্ত্র তৈরি ও বিক্রির কোম্পানির মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১টি কোম্পানি ব্যবসা করেছে ৫৪ শতাংশ। সিপ্রির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এবারও যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র কোম্পানিগুলোই শীর্ষে রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি লকহিড মার্টিন একাই ৫৮ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে গত বছর, যা লিথুনিয়ার জিডিপির চেয়েও বেশি।

শুধু অস্ত্র বিক্রি নয় বেড়েছে কার্যকর লবিংও। বন ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কনফ্লিক্ট স্টাডিজের (বিআইসিসি) রাষ্ট্রবিজ্ঞানী মার্কাস বায়ার বলেন, অস্ত্র কোম্পানিগুলো ইচ্ছাকৃতভাবে প্রভাব বিস্তার করছে।

তিনি মার্কিন এনজিও ওপেন সিক্রেটসের একটি প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলো প্রতিবছর মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার রাজনৈতিকদের লবিংয়ের জন্য খরচ করে তাদের কোম্পানিতে অর্থায়ন করার জন্য।

গত দুই দশকে প্রতিরক্ষা পলিসিকে প্রভাবিত করতে তাদের লবিস্ট ও দাতাদের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য প্রচারাভিযানের পেছনে ২৮৫ মিলিয়ন ডলার এবং লবিংয়ে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ হয়।

মহামারিকালেও রমরমা অস্ত্রের ব্যবসা

আলেকজান্দ্রা মার্কস্টেইনার ব্যাখ্যা করেছেন যে, মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগ মহামারি চলাকালীন অস্ত্র শিল্পের জন্য বেশ কিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করে সহায়তা প্রদান করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, তারা নিশ্চিত করে যে, প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলোর কর্মীদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বাড়িতে থাকার আদেশ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে কিনা। অন্যদিকে, কিছু আদেশ ছিল যেন কোম্পানিগুলো নির্ধারিত সময়সূচির আগে তহবিল স্থানান্তর করতে পারে।

দক্ষিণ এশিয়ায়ও বেড়েছে অস্ত্র ব্যবসা। পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফ্রাঙ্কফুটের (পিআরআইএফ) বিশেষজ্ঞ সিমোন উইসোটজকি বলেন, তিনি অবাক হয়েছেন যে, বিশ্বের এই অঞ্চলটি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। তিনি ভারতের প্রতি ইঙ্গিত দিয়ে বলেন, একশটির মধ্যে ভারতেরও তিনটি কোম্পানি রয়েছে, যাদের সামগ্রিক বিক্রি ১ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে, যা দক্ষিণ কোরিয়ার সমান।

সিপ্রির এ তালিকায় চীনা পাঁচটি কোম্পানিও রয়েছে। চীন সামরিক আধুনিকায়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়ার ফলে তাদের অস্ত্র কোম্পানিগুলো লাভবান হচ্ছে। চীনা কোম্পানিগুলোর বিক্রি বেড়েছে ১৩ শতাংশ।

তথ্য প্রযুক্তিকে এই অস্ত্র ব্যবসার কাজে লাগানো হচ্ছে আরও বেশি মুনাফা লাভের জন্য। সিমোন বলেন, বেসামরিক এবং সামরিক প্রযুক্তি ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং অস্ত্রপ্রযুক্তি আর আলাদা নয়। তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলোই অস্ত্র ব্যবসার প্রধান হিসেবে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে।

মার্কস্টেইনার জোর দিয়ে বলেন, আপনি যদি অস্ত্র শিল্পের একটি পরিষ্কার চিত্র চান, আপনি কেবল লকহিড মার্টিনের মতো ঐতিহ্যবাহী খেলোয়াড়দের সম্পর্কে কথা বলতে পারবেন না। সম্প্রতি কয়েক বছরে গুগল, মাইক্রোসফট এবং ওরাকলের মতো কিছু সিলিকন ভ্যালি জায়ান্ট অস্ত্র ব্যবসায় তাদের সম্পৃক্ততা আরও গভীর করার চেষ্টা করেছে এবং লাভজনক চুক্তিতে উপনীত হয়েছে।

মাইক্রোসফট ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগের ২২ বিলিয়ন ডলারের চুক্তির কথাও জানা যায় সম্প্রতি। এই চুক্তির আওতায় মার্কিন সেনাবাহিনীকে ইন্টিগ্রেটেড ভিজ্যুয়াল অগমেন্টেশন সিস্টেম নামে এক ধরনের সুপার-গ্লাস সরবরাহ করার জন্য কোম্পানিটিকে চুক্তিবদ্ধ করা হয়েছে, যা সৈন্যদের যুদ্ধক্ষেত্র সম্পর্কে বাস্তব-সময়ের কৌশলগত তথ্য সরবরাহ করবে।

মহামারিকালেও রমরমা অস্ত্রের ব্যবসা

এদিকে ফ্রান্সের সঙ্গে অস্ত্র বিক্রিতে পিছিয়ে পড়েছে রাশিয়া। ২০১৯ সালের চেয়ে রাশিয়ার নয়টি কোম্পানি ৬ দশমিক ৫ শতাংশ অস্ত্র বিক্রি করেছে।

মার্কাস বায়ারের মতে, একশটি দেশের তালিকায় ৫ শতাংশ বিক্রি কমেছে রাশিয়ার, যেটি সরাসরি ভারত ও চীনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারণ তারা নিজেরাই উৎপাদন করছে। পূর্বে তারা রাশিয়ার বড় ক্রেতা ছিল।

ইউরোপের অস্ত্র কোম্পানিগুলো একশটি দেশের মধ্যে ২১ শতাংশ সামগ্রিকভাবে অস্ত্র বিক্রি করেছে। ২০২০ সালে ইউরোপের ২৬টি কোম্পানি অস্ত্র বিক্রিতে মুনাফা করেছে ১০৯ বিলিয়ন ডলার। যেখানে চারটি সম্পূর্ণ জার্মান অস্ত্র কোম্পানি এই মোট মুনাফার নয় বিলিয়ন ডলারের নিচে।

সূত্র: ডয়েচে ভেলে

এসএনআর/টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।