সিলেটের তিন পৌরসভায় ভোটগ্রহণ চলছে
সিলেটের তিন পৌরসভায় সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। তবে জকিগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাব খাটানো ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেছেন বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী মেয়রপ্রার্থীরা।
গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া ভোটগ্রহণে ধীরগতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আ. লীগের মেয়রপ্রার্থী।
সিলেটের আরেক পৌরসভা কানাইঘাটে নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। তবে সিলেটের তিন পৌরসভায়ই ভোটার উপস্থিতি রয়েছে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তারা ভোট দিচ্ছেন।
জকিগঞ্জে বিএনপি-জাপাসহ ৩ মেয়র প্রার্থীর অভিযোগ : জকিগঞ্জে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী বদরুল হক বাদল, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী আবদুল মালেক ফারুক আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রভাববিস্তারসহ বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন।
বিএনপি প্রাথী বদরুল হক বাদল অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড হচ্ছে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির এলাকা। তিনি ওই ওয়ার্ডের মধুদত্ত এফআইবিডিবি ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছেন। সেখানে জাল ভোট দেয়া হচ্ছে। কেন্দ্রটি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দখল করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে।’
তিনি আরও জানান, বিষয়টি তিনি রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার ও র্যাবকে জানিয়েছেন।
আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারুক আহমদ অভিযোগ করে বলেন, ‘আনন্দপুর, তীরেরচক ও গোপীর চক নিয়ে গঠিত জকিগঞ্জ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের তীরেরচক কেন্দ্রে তার এজেন্টকে দলীয় প্রার্থীর এজেন্টরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। আমি বিষয়টি প্রিজাইডিং অফিসারকে জানিয়েছি।’ ফারুক আহমদ জগ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।
জকিগঞ্জ পৌরসভার বর্তমান মেয়র, জাতীয় পার্টি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আবদুল মালেক ফারুক অভিযোগ করে বলেন, ‘পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের আনসার ক্যাম্পে আঞ্জুমানে আল ইসলাহ’র কর্মী আজমল আলী লাঙ্গল প্রতীকের ভোটারদের ভোট প্রদানে হুমকি দিচ্ছে। সে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট না দিয়ে আল ইসলাহ সমর্থিত প্রার্থী হিফজুর রহমানের মোবাইল ফোনে ভোট দেয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে।’
প্রার্থীদের অভিযোগ প্রসঙ্গে জকিগঞ্জ পৌরসভার রিটার্নিং অফিসার মোবাশ্বেরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ামাত্রই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বিএনপি প্রার্থীর অভিযোগের ভিত্তিতে সেখানে ম্যাজিস্ট্রেট পাঠানো হয়েছে। জাল ভোটের প্রমাণ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
গোলাপগঞ্জে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি রয়েছে : ভোটকেন্দ্রে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থায় নিজের উদ্বেগের কথা জানিয়ে গোলাপগঞ্জ পৌরসভার বিএনপি দলীয় মেয়র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, এতে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
সকাল দশটার দিকে ৯ নং ওয়ার্ডে তার নিজের ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের জানান, নির্বাচনে অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে মানুষের মধ্যেও ভয়ভীতি রয়েছে।
বিএনপির এই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গুঁজব রয়েছে নির্বাচনের পর উপজেলায় ভোট গণনা করা হবে। তবে তিনি তার পোলিং এজেন্টদের ভোট গণনা শেষ না হওয়ার আগে ভোটকেন্দ্র ত্যাগ না করার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
এদিকে, গোলাপগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থী, বর্তমান মেয়র জাকারিয়া আহমেদ পাপলু ভোটগ্রহণের ধীর গতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
সকাল সাড়ে ১০টার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি অনেক। নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে ভোটগ্রহণে ধীর গতি রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও সন্তোষজনক বলে জানান তিনি।
কানাইঘাটে পুরুষের চাইতে নারী ভোটারদের উপস্থিতি বেশি : কানাইঘাট পৌরসভার নির্বাচনে পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ভোট কেন্দ্রগুলোতে রয়েছে লক্ষণীয়। সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত নারী ভোটারদের দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে দেখা যায় কেন্দ্রগুলোতে।
প্রসঙ্গত, সিলেটের গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট পৌরসভায় প্রত্যেকটিতে ৯টি করে কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করা হচ্ছে। এরমধ্যে কানাইঘাটের ২টি ভোটকেন্দ্র বাদে তিন পৌরসভার বাকি সব কয়টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এই তিন পৌরসভার নিরাপত্তায় ৬ প্লাটুন বিজিবি ও ৩ প্লাটুন র্যাবসহ বিপুল পরিমান আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে ভোটকেন্দ্র গুলোতে।
ছামির মাহমুদ/এআরএস/পিআর