জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় এক টেবিলে দক্ষিণ এশিয়ার সাত দেশ
ভয়াবহ জলবায়ু ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ এবং পাকিস্তানে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট ধীরগতির দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম- সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ফসলের ফলন কমে আসা, বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি এবং খরা।
এই দেশগুলো প্যারিস চুক্তির সময় জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় যেসব কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তা পালনে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায় আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে দেশগুলোতে বছরপ্রতি অভিবাসীর সংখ্যা ৩৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন ছাড়িয়ে যেতে পারে। ২০৫০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বছর প্রতি ৬২ দশমিক ৯ মিলিয়নে গিয়ে পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। এসব সমস্যা কিভাবে নিরসন করা যায় এবং সমস্যা মোকাবিলায় দ্রুত যে কোনো পদক্ষেপ নিতে আলোচনায় বসেছে আট দেশ।
বৃহস্পতিবার (৪ নভেম্বর) স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর স্কটিশ ইভেন্ট সেন্টারের বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নে 'সার্কভুক্ত দেশগুলোর পরিবেশমন্ত্রীর উপস্থিতিতে ‘সাউথ এশিয়া কো-অপারেটিভ ইনভায়রনমেন্ট প্রোগ্রাম’ অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন, পাকিস্তানের পরিবেশমন্ত্রী মালিক আমিন আসলাম খান, শ্রীলঙ্কার পরিবেশমন্ত্রী রামিন্দ্রা আমার ওয়েরা, নেপালের পরিবেশমন্ত্রী রামসে প্রসাদ যাদব, মালদ্বীপের পরিবেশমন্ত্রী আমিনা শাইনা, ভারতের পরিবেশমন্ত্রী ভূপেন্দ্র যাদব, ভুটানের পরিবেশমন্ত্রী লিয়েন পো ইয়েরি পেনজর অংশ নেন। তবে বৈঠকে আফগানিস্তানের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন না।
সভায় পাঁচটি বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে অন্যতম জলবায়ু মোকাবিলায় আঞ্চলিক সংলাপ জোরদার করা, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়গুলো শনাক্ত করা। এছাড়াও রয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় যৌথভাবে সামলানো, প্রয়োজনে অর্থ, প্রযুক্তি ও নলেজ শেয়ার করা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় একটি রোডম্যাপ প্রস্তুতের সিদ্ধান্তও হয়।
বৈঠকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি নিয়ে আলোচনা হয়। আগামী দুই দশকে গোটা বিশ্বের তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে, যার জেরে অত্যধিক গরম আবহাওয়া, দীর্ঘস্থায়ী বর্ষা এবং খরার প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে। দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু পরিবর্তনের লক্ষণ দীর্ঘদিন ধরেই স্পষ্ট। সমুদ্র স্তরের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং বন্যা বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলঙ্কার মত উপকূলীয় দেশগুলিকে হুমকির মুখে ফেলেছে। নেপালে তাপমাত্রা বাড়ার জেরে হিমবাহ গলে যাচ্ছে। আফগানিস্তান, ভুটানে দেখা দিচ্ছে খরার প্রকোপ। শুধু তাই নয়, সেদিন বেশি দূরে নয় যখন মালদ্বীপের মতো দ্বীপরাষ্ট্র তলিয়ে যাবে সমুদ্রের গহ্বরে- এসব বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়া। করোানর কারণে আমরা একসঙ্গে বসতে পারিনি। আজ সবাই একসঙ্গে বসেছি। জলবায়ু পরিবর্তন এখন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। এর ফলে বন্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলোচ্ছ্বাস ও ঘুর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। তাই সবাইকে একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে জলবায়ু মোকাবিলার আহ্বান জানান তিনি।
এমওইএস/কেএসআর/জিকেএস