‘ভোটের আগে ভাই-ভাই পরে দেখা নাই’
`ভোটের আগে ভাই-ভাই, ভোটের পরে দেখা নাই, হিন্দু-মুসলিম ভাই-ভাই মাদকমুক্ত সমাজ চাই।` এমন মন্তব্য করে ভোটাররা বলেন, প্রতিবার ভোট এলে আমাদের অনেক কদর বাড়ে। কিন্তু ভোটের পর আর কোনো খবর থাকে না। তারপরও ভোট অনেক আনন্দের। এবার প্রার্থী দেখে যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিব।
পৌরসভা নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা ততই জমে উঠছে। সবখানেই এখন ভোটের হাওয়া। বিভিন্ন প্রতিশ্রুতি ও ওয়াদা করে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটারদের কাছে ভোট প্রার্থনা করছে। নির্বাচনী এলাকা ছেঁয়ে গেছে প্রার্থীদের সাদা-কালো বিভিন্ন সাইজের পোস্টারে। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছে গানে গানে মাইকে প্রচারণা।
টাঙ্গাইলের মির্জাপুর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের চিত্র এখন এমনই। পৌরসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরাও এখন তৎপর হয়ে উঠেছে। প্রতীক বরাদ্দের পর আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ঝিমিয়ে পড়া নেতাকর্মীরা ভোরের ঘন কুয়াশা ও রাতের কনকনে শীত উপেক্ষা করে বাড়ি বাড়ি, পাড়া-মহল্লায় গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন।
এদিকে মির্জাপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থী না থাকায় তাদের কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না। জাতীয় পার্টি (এ) মহাজোটের সঙ্গে থাকলেও নেতাকর্মীদের নিরব ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে। অপরদিকে জামায়াত ইসলামের নেতাকর্মীরা বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ না করলেও ভেতরে ভেতরে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন।
মামলা-হামলার ভয়ে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, দীর্ঘ সময় তারা নানা কারণে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় ছিলেন না। চায়ের টেবিলের রাজনৈতিক আলোচনাও ছিল সীমিত। পৌরসভায় মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ায় তারা এখন পুরোদমে মাঠে নেমেছেন। তারা মাঠে যাওয়ায় সমর্থকদের মাঝেও প্রাণ ফিরে এসেছে। রাজনীতিতে শাসক দল আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতাকর্মীরাও দলীয় প্রার্থীর প্রতীক নৌকা হওয়ায় ঘরে বসে না থেকে ভোটের মাঠে তৎপর হয়ে উঠেছেন। তাদের কথা দলীয় প্রতীকধারী অর্থাৎ নৌকা পরাজিত হবে এটা তারা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারবেন না। স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি ক্ষোভ থাকলেও দলীয় প্রতীকের কারণেই তারা মাঠে নেমেছেন বলে জানান।
প্রার্থীদের পাশাপাশি তাদের কর্মী সমর্থকদের নেই চোখে ঘুম। তাই প্রার্থী ও সমর্থকদের হাতে হাতে এখন নির্বাচনী লিফলেট। সবাই ভোটের মাঠে সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছেন।
এবার প্রার্থীরা দিচ্ছেন নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি। সারাদিন ভোটের প্রচার-প্রচারণা শেষে গভীর রাতে পরের দিনের কর্মপন্থা নির্ধারণ করছেন। সকাল হলেই চলছে চায়ের কাপে ভোটারদের হিসাব নিকাশ। প্রচার পাগল মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। কেউ কেউ নিজেদের প্রার্থীর প্রচার চালাতে নিচ্ছেন নানা রকম কৌশল। কেউ ভ্যান, বাইসাইকেল, অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশায় করে পছন্দের প্রার্থীর সাদাকালো পোস্টার ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরের অলিতে গলিতে। কেউবা মোটরসাইকেলের পেছনের রেজিস্ট্রেশন প্লেট ঢেকে ফেলেছেন পছন্দের প্রার্থীর স্টিকার দিয়ে। সমর্থকরা তাদের প্রার্থীদের নিয়ে যে যেমন করে পারছে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মীর শরীফ মাহমুদ জানান, দলীয়ভাবে নির্বাচনে নিজ দলের প্রার্থীকে জয়যুক্ত করতে সবাই একত্রে কাজ করছেন। সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রাখতে ভোটাররা নৌকা মার্কায় ভোট দিবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সাংসদ আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. জুলহাস মিয়া জানান, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে এবং ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারলে আমাদের প্রার্থী জয়লাভ করবে। তাছাড়া সরকার দলের নেতাকর্মীরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ দায়িত্ব পালনের জন্য সেনাবাহিনীকে নামানো দরকার বলে তারা মনে করেন।
এসএস/এমএস