বাঁশি সংগীতের একটি বড় মাধ্যম : বারী সিদ্দিকী

বিনোদন ডেস্ক
বিনোদন ডেস্ক বিনোদন ডেস্ক
প্রকাশিত: ০২:০৯ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫
ছবি : উজ্জল চক্রবর্তী

বারী সিদ্দিকী। একজন বাংলাদেশি খ্যাতিমান সংগীত শিল্পী, গীতিকার ও বাঁশি বাদক। লোক গানের শিল্পী হিসেবেও তার গ্রহণযোগ্যতা দেশে ও বিদেশে। বাঁশি কিংবা গানের করুণ সুরে অনেকেই হারিয়ে যান অন্য এক দিগন্তে। গতকাল শনিবার রাতে গুণী এই শিল্পী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে এসেছিলেন স্থানীয় একটি সাংস্কৃতিক সংগঠন আয়োজিত বিজয় মেলায় সংগীত পরিবেশন করতে। সংগীত পরিবেশনের ফাঁকে জাগো নিউজের মুখোমুখি হন তিনি। কথা বলেন ফোক গানের নানা দিক নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন জাগো নিউজের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি আজিজুল আলম সঞ্চয়।

জাগো নিউজ : সংগীতে এলেন কী করে?
বারী সিদ্দিকী : আমার জন্ম নেত্রকোনাতে। সেটি গানের দেশ. ধানের দেশ, শিল্পের দেশ। সেখানে গান পরিবারের সব সদস্যরাই নিয়মিত গান। আমিও ছোট থেকেই দেখেছি আমার পরিবারে গান-বাজনার প্রতি সবার অনুরাগ। অন্যদের দেখে দেখে আমার ভীষণ ইচ্ছে করতো গান গাই। আমার বয়স যখন ৫ বছর তখন থেকেই আমি গান গওয়া শুরু করি। তবে ১২ বছর বয়সে নেত্রকোনার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে আনুষ্ঠানিকভাবে গানের তালিম নিতে শুরু করেছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন বয়সে বিভিন্ন সময়ে ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য লাভ করেছি। তারপর একটু একটু করে নিজেকে আজকের অবস্থানে নিয়ে এসেছি। গান করতে করতে একসময় বাঁশির দিকে মনযোগ দেই। খুব ভালো লাগে বাঁশিতে সুর তুলতে।

জাগো নিউজ : দেশে-বিদেশে আপনি দীর্ঘদিন ধরেই গান করছেন ও বাঁশি শুনিয়ে আসছেন। কিন্তু বলা হয়ে থাকে হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার পর থেকেই আপনার পরিচিত বাড়তে থাকে। এটাকে আপনি কিভাবে দেখেন?
বারী সিদ্দিকী : এটা অবশ্যই সঠিক। হুমায়ূন আহমেদের ছবিতে চার-পাঁচটি গানই আমার গাওয়া এটা অনেক বড় বিষয়। তারপর সবগুলো গানই শ্রোতাপ্রিয়তা পেয়েছিলো। আসলে চলচ্চিত্রের মাধ্যমটাতো একটু ব্যপক,তাই প্রচারটাও হয়েছে ব্যাপক। আমার জনপ্রিয়তার পাতায় এটা একটা মাত্রাতো যোগ করেছে বলেই মানতে হবে। তবে কেউ কেউ বলে বেড়ান ‌‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ ছবিই বারী সিদ্দিকীকে তৈরি করেছে; এটা ঠিক না। শ্রাবণ মেঘের দিন ছবির আরো ২০ বছর আগে থেকে আমি বারী সিদ্দিকী ইউরোপে, অমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, আফ্রিকায় গান-বাজনা করে বেড়াই। অবশ্য সেটা একটু ভিন্ন জাত ও মেজাজের গান-বাজনা ছিল।

জাগো নিউজ : সম্প্রতি ঢাকাতে লোক সংগীত নিয়ে যে ফোক ফেস্ট অনুষ্ঠিত হলো সেখানে তো আপনার পরিবেশনা ছিলো। এত বিশাল আয়োজন, বিশাল উপস্থিতিতে আপনার এই অংশগ্রণটাকে কিভাবে দেখছেন?
বারী সিদ্দকী : ৬০-৬৫ হাজার দর্শকের আমার সামনে, আমি গান পরিবেশন করেছি, আমার অনেক ভালো লেগেছে। যে কোনো শিল্পীর কাছেই এমন আসরে বসে গান করা, বাঁশি পরিবেশন করাটা স্বপ্ন জয়ের ব্যাপার।

Bari Bhai

জাগো নিউজ : লোক সংগীতের বিকাশে এ ধরণের ফোক ফেস্টিভ্যাল কতোটা প্রয়োজনীয় বলে মনে করেন আপনি?
বারী সিদ্দিকী :
অনেক অনেক প্রয়োজনীয়তা আছে। এই ধরণের উৎসব শিল্পী তৈরিতে অনুপ্রাণিত করবে। শ্রোতাদের মধ্যে গান শোনার অভ্যেস তৈরি করবে। সংগীতের বিশ্বায়ন বা পৃথিবী জুড়ে গানের একটি সম্প্রীতি গড়ে তোলাটা সহজ হবে। এতে করে প্রতিযোগিতা বাড়বে, ভালো গাওয়ার মানসিকতাটাও বাড়বে। আর এখানে চান্স পাওয়াটাও একটা বিষয়। আয়োজকদের আমি কৃতজ্ঞতা জানাই এই রকম আন্তর্জাতিক মানের উৎসব আয়োজনের জন্য। তবে তাদের আরো একটু চিন্তা করে আয়োজন করতে হবে। এবারের উৎসবে নানা রকম সমালোচনাও দেখেছি পত্র-পত্রিকায়। নানা টেলিভিশন ও পত্রিকা থেকেই আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সেইসব বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলার জন্য। নামী শিল্পীদের পাশাপাশি উৎসবে বেশ কিছু আনকোরা, অপরিপক্ক, বেসুরা-বেতালা শিল্পীও গান করেছে। এরা উৎসবের মর্যাদা হানি করেছে। আবার ইন্ডিয়া থেকে যাদের আনা হয়েছে তাদের আরেকটু যাচাই-বাছাই করে সুযোগ-সুবিধা দেয়া উচিত ছিলো। সে যাই হোক, উৎসব নিয়ে আমি দারুণ পুলকিত। কারণ এত বেশি দর্শক আমি দেখিনি, আমাদের শ্রোতারাও কোনোদিন এত বড় আসর দেখেননি। তাছাড়া বিনামূল্যে আসা শ্রোতাদের নিয়ে গানের এতবড় আসর পৃথিবীর আর কোথাও হয় বলেও আমার জানা নেই।

জাগো নিউজ : লোক সংগীতের সুদিন হারিয়ে যাচ্ছে। আসলে বলতে গেলে সমগ্র সংগীতাঙ্গনটাই খেই হারিয়ে ফেলেছে আমাদের। সেক্ষেত্রে কী করা যেতে পারে বলে আপনার ধারনা?

বারী সিদ্দিকী : এক কথায় গান এখন মৃতাবস্থায় আছে। এর প্রধান কারণ না জেনে-শুনে-বুঝে যার তার গান করার চর্চাটা আমাদের এখানে বেড়েই চলেছে। অপিরণত বয়সে তারকাখ্যাতি শিল্পীর শিল্পকে নষ্ট করে দেয়। এটাই হচ্ছে। যে বয়সে আমরা শিখেছি, নিজেদের তৈরি করেছি সেই বয়সে এখনকার ছেলে মেয়েরা নিজেদের সেরা দাবি করছে; বুঝুন কী অবস্থা হবে ইন্ডাস্ট্রির। সুরে তাল নেই, লয়ের বালাই নেই। তবে কেন গান করতে হবে? আসলে গানের নামে এখন ভং-চংটাই বেশি হচ্ছে। এমনটি হলে টিকে থাকা যাবে না। অনেক আর্টিস্ট আমার কাছে আসে, এসে বলে আমি স্পেশাল গ্রেডের, আমি ‘এ’ গ্রেড, আমি বিশেষ গ্রেডে গান করি। আমি বলি- গানতো করেন ভালো কথা কিন্তু গানতো কেউ শুনে না। কেন শুনে না? তারা নিরুত্তর থাকেন। আসলে এর উত্তর তারা জানেন কিন্তু মানতে পারেন না। উত্তর হলো তারা গাইতে জানেন না। গান যদি গাওয়া হয় সেটা মানুষ শুনবেই। সমালোচনা করার জন্য হলেও শুনবে। আমি বলি, আপনার ‘তালিম’ নাই। ‘তালিম কা চিজ হনা চাহিয়ে’। আপনার গান শিখতে হবে। তাল কি জিনিস, লয় কি জিনিস, সুর কি জিনিস তা অনুধাবন করতে আপনার তালিম লাগবে। দুর্ভাগ্যের ব্যাপার আমাদের জাতিটা মাঝখান থেকে চলছে, প্রশিক্ষিত না। সব সেক্টরেই এই অবস্থা। যে যে জায়গায় আছে সেখানেই অযোগ্য লোকের ছড়াছড়ি। গন্ডগোল তো হবেই।

Bari Bhai 1
জাগো নিউজ : আমরা জানি বাঁশিতে আপনার একটি বিশাল জায়গা আছে। এই বাঁশির জনপ্রিয়তার প্রসারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কিছু করছেন কী?

বারী সিদ্দিকী : বাঁশি সংগীতের বড় একটি মাধ্যম। এর বিকাশ অবশ্যই উচিত। এটা আমি বা অন্য কারো ব্যক্তিগতভাবে নিলে কোনো লাভ নেই। সরকার যদি ইচ্ছে করে শিল্পকলা একাডেমি আছে, সংস্কৃতিক মন্ত্রণালয় আছে বাঁশিকে সমাদৃত করতে, বাঁশিতে শিল্পীদের আগ্রহ বাড়াতে। শত কোটি টাকার বাজেট সেখানে হয়। সেখানে পদ্ধতিগত জ্ঞানার্জনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৈরি করতে হবে। প্রশিক্ষিত লোকজনকে নিতে হবে। যারা আগ্রহী তাদের শিখাতে হবে, তখন হয়তো বাঁশিতে দশটা বারী সিদ্দিকী কিংবা একটা বিশ্ব বরেন্য বংশীবাদক পাব আমরা।

এলএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।