ঘুরে আসুন চন্দ্রমহল ইকোপার্ক


প্রকাশিত: ০৫:৪৯ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫

আমাদের দেশে শীতকালেই তুলনামূলক ঘোরাঘুরিটা বেশি হয়। চারিদিকে শীতল একটা পরিবেশ থাকে। তাইতো সবাই যার যার সুবিধামতো বেরিয়ে পড়ে ভ্রমণ করতে। বাংলাদেশে এতটাই দর্শনীয় স্থান যে মাঝে মাঝে হিমশিম খেতে হয়- কোনটা রেখে কোনটা দেখব। তবে বলে রাখি- ঘুরতে তো আর মানা নেই। সুযোগ পেলেই তো ঘুরে আসা যায়। এবার না হয় বাগেরহাটের চন্দ্রমহলটাই ঘুরে এলাম। পরের বার অবসরে অন্য কোথাও।

কেন এই চন্দ্রমহল
বাগেরহাটের সৈয়দ আমানুল হুদা ১৯৭৪ সালের ৩০ মে উচ্চ শিক্ষার জন্য ১৯ বছর বয়সে অস্ট্রিয়ার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান। সেখানে প্রথমে ম্যানেজমেন্ট ও তার সঙ্গে ট্যুরিজম ও হোটেল ম্যানেজমেন্টের উপর উচ্চ শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৮৩ সালে অস্ট্রিয়াতে চাকরিরত অবস্থায় দেশে কুষ্টিয়ার নাসিমা হুদা চন্দ্রার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৮৫ সালে জার্মান আমেরিকান জাহাজে দায়িত্বশীল পদে চাকরি নেন। ১৯৯৭ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন ও গার্মেন্টস শিল্পের সঙ্গে জড়িত হন। ২০০৬ সালে বাগেরহাট সদর উপজেলার রণজিৎপুরে চন্দ্রমহলের স্বপ্ন পূরণের কাজ শুরু করেন। ২০০৯ সালে আংশিক কাজ সম্পন্ন হওয়ায় দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করেন।

chandro-mahal

অনুপ্রেরণা
চন্দ্রমহল তৈরির সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা তার স্ত্রী নাসিমা হুদা চন্দ্রা। আর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় তার ছোট মামা সৈয়দ আবু ইউসুফ, শিল্পী ওয়াহিদ, শিমুল, খেলাফত মাস্টার, সুনিল মিস্ত্রি, জাহিদ মিস্ত্রিদের অবদান উল্লেখযোগ্য।

চন্দ্রমহল
তাজমহলের আদলে তৈরি; ৪০ ফুট উচ্চতা, ৫০ ফুট প্রশ্বস্ত ও ৪০ ফুট দৈর্ঘের আরসিসি কলাম ও দেশি প্রথায় লিংটন প্রযুক্তিতে তৈরি। বাহির এবং অন্দরে উন্নতমানের টাইলস ও মার্বেল পাথর দ্বারা আবৃত। নিচতলায় ৩টি কক্ষ ও ২টি গোসলখানা রয়েছে। পাতালপুরিতে ১টি কক্ষ ও দোতলায় ৩টি কক্ষ রয়েছে। প্রধান শয়নকক্ষ থেকে ছাদে যাওয়ার সিঁড়ি রয়েছে। ছাদের তিন কোণায় ৩টি গম্বুজের নিচে বসার স্থান ও একপাশে ব্যক্তিগত নামাজের স্থান রয়েছে। মহলের প্রধান গম্বুজ ১০টি ভাগে ভাগ করা ও তার মধ্যে ৫টি অংশ সোনালি আয়না দ্বারা আবৃত।

প্রবেশ মূল্য
জনপ্রতি ৩০-৪০ টাকার টিকিট কেটে চন্দ্রমহলে প্রবেশ করতে হবে। চার বছরের নিচে শিশুর টিকিটের প্রয়োজন নেই।

chandro-mahal

আরো যা দেখবেন
পাতাল সুড়ঙ্গ: চারপাশে পানি বেষ্টিত চন্দ্রমহলে প্রবেশের জন্য পাথর ও রড-সিমেন্ট দ্বারা তৈরি একটি পাতাল সুড়ঙ্গ রয়েছে। এটি ৩০ ফুট লম্বা এবং ১৪ ফুট পানির নিচে দিয়ে তৈরি। সুড়ঙ্গে ৪টি কাচের জানালা আছে- যা দ্বারা বাহিরের মাছ দেখা যায়।

মিনার: চন্দ্রমহলের ১৫ ফুট অদূরে প্রেমের সাক্ষীস্বরূপ ৫০ ফুট উচ্চতার একটি মিনার আছে। এর উপরে ওঠার সিঁড়ি আছে কিন্তু বসবাসরত দেশীয় প্রজাতির পাখির জন্য তা বন্ধ রাখা রয়েছে।

chandro-mahal

যাদুঘর: চন্দ্রমহলে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত একটি যাদুঘর আছে। ডাকটিকিট থেকে শুরু করে প্রাচীন মুদ্রা, পুরাকৃতি, হস্তশিল্প, তলোয়ার, চিত্রশিল্পসহ বিভিন্ন জিনিস রয়েছে।

অন্যান্য স্থাপনা: চন্দ্রমহলে আছে চিড়িয়াখানা, শিশুপার্ক, নানা স্থানে গান্ধী, তেরেসা, ফেলানী ও একাত্তরের রাজাকারসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি ভাস্কর্য, গ্রামীণ আবহে তৈরি মূর্তি, গ্রামীণ নারী-কৃষকের প্রতিকৃতি, শ্বেতপাথরের দাবা, ক্ষুদ্রতম কোরআন শরীফ, প্রাচীনতম গ্রামোফোন, জীবিত সাদা ময়ূর এবং ময়ূরপঙ্খী নাও প্রভৃতি।

নারিকেল বাগান: চন্দ্রমহলের সীমানার মধ্যেই ১০টি পুকুরের চারপাশে রয়েছে সুদৃশ্য নারকেল বাগান। বাগানে দলবেঁধে পিকনিক করে আসতে পারেন।

chandro-mahal

পিকনিক: পিকনিক স্পট ভাড়া ৪শ’ টাকা।

রেস্টহাউজ: এখানে আছে ফ্রেস হওয়ার জন্য ২টি রেস্টহাউজ।

যেভাবে যাবেন
বাসযোগে ঢাকা বা খুলনা থেকে বাগেরহাট জেলার মংলাপোর্টে যেতে রামপাল উপজেলার সোনাতুনিয়া বাসস্ট্যান্ডে নামতে হবে। এখান থেকে হাতের বামে ভ্যানে জনপ্রতি ১৫-২০টাকা ভাড়ায় চন্দ্রমহল যেতে হবে। তবে আপনার ব্যক্তিগত কোন যান এ রাস্তায় নিতে পারবেন না। সোনাতুনিয়া বাসস্ট্যান্ডে পার্কিং প্লেস আছে সেখানে নির্ধারিত ফি’র বিনিময়ে পার্কিং করে রাখতে হবে।

এসইউ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।