ফের রেকর্ড ভাঙার দোরগোড়ায় ফ্রিদা কাহলোর চিত্রকর্ম
এক অসাধারণ, অনন্য আত্ম-প্রকৃতি বিশ্লেষকের নাম ফ্রিদা কাহলো। মেক্সিকোর আধুনিক চিত্রকলার পুরোধা। গোটা বিশ্বে মেধাবী ও গুরুত্বপূর্ণ বিমূর্ত ধারার এই শিল্পী ছিলেন সক্রিয় নারীবাদীও। তার আঁকা আত্ম-বিশ্লেষণধর্মী একটি ছবি ফের আনুমানিক তিন কোটি মার্কিন ডলার নিলামের রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে। এবার তার ‘দিয়েগো অ্যান্ড আই’ সর্বজনীনভাবে বিক্রি হওয়া লাতিন আমেরিকান শিল্পকর্ম হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর ছবিটি লন্ডনে প্রদর্শিত হবে। নিউইয়র্কে বিক্রির জন্য নিলামে উঠবে নভেম্বরে।
প্রকাশ্যে নিলামে তোলা ছবিগুলোর মধ্যে লাতিন আমেরিকার সবচেয়ে মূল্যবান চিত্রকর্মের জায়গা করে নিচ্ছে দুঃখময় জীবনের কাহিনী আঁকিয়ে ফ্রিদা কাহলোর এই ছবিটি, যার মাধ্যমে তিনি তার প্রতারক স্বামীকে চিত্রায়িত করেছেন নিজের চিত্রকথা বিশ্লেষণে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান সোথবি'স বুধবার ঘোষণা দিয়েছে, ফ্রিদা কাহলোর ১৯৪৯ সালে আঁকা, দিয়েগো ওয়াই ইয়ো (দিয়েগো অ্যান্ড আই) ছবিটি ৩০ মিলিয়ন অর্থাৎ তিন কোটি মার্কিন ডলারে নিলামে উঠতে যাচ্ছে। যদি এটি এর কাছাকাছি দামে বিক্রি হয়, তবে লাতিন আমেরিকার শিল্পীদের ছবি বিক্রির রেকর্ড ভাঙবে এটি।
কোম্পানিটি জানায়, সবশেষ ১৯৯০ সালে কাহলো ও লাতিন আমেরিকার চিত্রকর্ম নিলামে তোলা হয়েছিল। নিউ ইয়র্কের মর্ডান আর্টের সহ-প্রধান জুলিয়ান ডাউস বলেন, কাহলোর চিত্রকর্ম গুণ ও অনন্যতার কারণে দুষ্পাপ্যও বটে। ছবিটির রেকর্ড ভাঙার বাইরেও একধরনের স্বকীয়তা রয়েছে, যা সবাইকে আকর্ষণ করে। যার ভেতরের কাহিনী এখনো নজর কাড়ছে, তার স্বামী দিয়েগো রিভেরা এবং তার সম্পর্কের টানাপড়েন যেখানে ছাপ ফেলেছে।
সোথবি'স লাতিন আমেরিকার চিত্রকর্মের পরিচালক আন্না দি স্ট্যাসি বলেন, ফ্রিদা কাহলো ছিলেন আধুনিক চিত্রশিল্পের বিশ্বের একজন আইকন। তার চিত্রকর্মে ব্যক্তিগত বিশ্লেষণিক চিন্তাধারা ও পরাবাস্তব প্রসঙ্গ এমনভাবে পরিস্ফুটিত যে ছবিটি নিজেই অনন্য হয়ে উঠেছে।
১৯২২ সালের সেই চিত্রকর্মে তার চোখের ওপর রিভেরার ছবি আঁকেন। দিয়েগো রিভেরাও একজন চিত্রশিল্পী ছিলেন। ১৫ বছর বয়সে ফ্রিদা রিভেরার প্রেমে পড়েন। এরপর ১৯২৮ সালে তারা আবার মিলিত হন এবং সে বছরে বিয়ে করেন। কাহলো এক সময় তার নোটবুকে লিখেছিলেন, আমি আমার জীবনে দুটি বড় দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়েছি, এর একটি হচ্ছে দুর্ঘটনা এবং আরেকটি হচ্ছে দিয়েগো।
১৮ বছর বয়সে বাস দুর্ঘটনার শিকার হন ফ্রিদা কাহলো। এক পর্যায়ে ১৯৫৩ সালে তার পা দুটি কেটে ফেলতে হয়। এরপর স্বামীর কাছ থেকেও বড় ধাক্কা পান তিনি। সেই ছবিটি ফ্রিদা এঁকেছিলেন এক বিশেষ মুহূর্তে যখন তার ক্রমেই শারীরিক অসুস্থতা বাড়ছিল অন্যদিকে তার স্বামী রিভেরা অভিনেত্রী মারিয়া ফেলিক্সের সঙ্গে প্রেম করছিলেন। তিনি কাহলোরও বন্ধু ছিলেন।
সেসময় রিভেরা ও মারিয়া ফেলিক্সের সম্পর্কের কথা খুব চাউর হয়েছিল, ফলে রিভেরা তাকে বিয়ে করার জন্য কাহলোকে ডিভোর্স দেওয়ায় তৎপর ছিলেন। সেসময় তিনি বলেছিলেন, আমি ফ্রিদাকে ভালোবাসি, কিন্তু আমি মনে করি আমার উপস্থিতি তার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই খারাপ।
কাহলো সেসময় হেসে উড়িয়ে দেন বিষয়টি এবং জানান, তিনি কিছু মনে করেননি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, তিনি ভেতরে ভেতরে চরম আঘাত পান, পরে তার চিত্রকর্মে বিমূর্ত হয়ে উঠে তার সেই দুঃখবোধ।
ফ্রিদা কাহলোকে বিপ্লবী, তীব্র বোধসম্পন্ন, খামখেয়ালি, শক্ত মনের, আবার একই সঙ্গে যত্নশীল, স্নেহময় আর একেবারেই অনন্য বলে বিশ্লেষণ করেন গবেষকরা।
সূত্র: দ্যা গার্ডিয়ান
এসএনআর/এএ/জিকেএস