শৈলকুপায় পৌর নির্বাচনে তুঙ্গে কবরস্থান বিতর্ক
ঝিনাইদহের শৈলকুপার পৌরসভা নির্বাচন জমে উঠতে শুরু করেছে। আর এরই সঙ্গে এখন শৈলকুপা পৌরসভা ভোটের মাঠে সবচেয়ে বেশি আলোচিত বিষয় পৌর কবরস্থান।
পৌর ভোটার সূত্রে জানা যায়, শৈলকুপা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ গত পাঁচ বছরে কবরস্থান নির্মাণের জন্য হিন্দু-মুসলমানদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করেছেন। নাগরিক সুবিধা নিতে গেলেই দিতে হয়েছে এই চাঁদা। কিন্তু আজও কবরস্থান নির্মাণ হয়নি। এমনকি জায়গাও নির্ধারণ করা হয়নি। যা সাধারণ ভোটারদের মাঝে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সরেজমিনে পৌরসভা এলাকার ভোটারদের সঙ্গে কথা বললে এক শ্রেণির ভোটার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কবরস্থান নির্মাণ নিয়ে। সাধারণ ভোটাররা অভিযোগ করেন, পৌরসভা এলাকায় পৌর কবরস্থান নির্মাণ হবে শুনে তারা খুশি হয়েছিলেন। বর্তমান মেয়র কাজী আশরাফুল আজম নির্বাচিত হবার পর তিনি কবরস্থান নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। আর এই কবরস্থান নির্মাণের কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা আদায় শুরু করেন।
সকল প্রকার নাগরিক সুবিধা পেতে পৌরসভায় গেলে দিতে হয়েছে কবরস্থানের চাঁদা। হিন্দু-মুসলিম সব সম্প্রদায়ের কাছ থেকেই নেয়া হচ্ছে এই চাঁদা। গত পাঁচটি বছর ট্রেড লাইসেন্স, ওয়ারেশ কায়েম সনদসহ সকল নাগরিক সুবিধা পেতে পৌর এলাকার নাগরিকদের দিতে হয়েছে এই টাকা। তারাও প্রথম দিকে খুশি হয়ে টাকা দিয়েছেন। কিন্তু বছরের পর বছর কবরস্থান নির্মাণ না করে টাকা দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
পৌরসভা কর্তৃপক্ষ বলছেন উত্তোলনকৃত টাকা ব্যাংকে জমা রাখা আছে। কিন্তু কবরস্থান নির্মাণ করতে যে টাকার প্রয়াজন পাঁচ বছরেও সেই পরিমাণ টাকা জমা হয়নি। যে কারণে তারা নির্মাণ কাজে হাত দিতে পারেনি।
প্রসঙ্গত, ঝিনাইদহ শৈলকুপা পৌরসভা নির্বাচনে এবার মেয়র পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তারা হলেন, বর্তমান মেয়র সরকার দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত কাজী আশরাফুল আজম, সাবেক মেয়র বিএনপি মনোনীত খলিলুর রহমান, মনোনয়ন বঞ্চিত পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক তৈয়বুর রহমান খাঁন।
শহরের থানা রোডের কার্ত্তিক ট্রেডার্সের মালিক কার্ত্তিক সাহা জাগো নিউজকে জানান, কবরস্থানের টাকা দেয়ার সময় তারা আপত্তি করেছিলেন, কিন্তু কাজ হয়নি। তিনি ২০১৪ সালের জন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স করতে গিয়েছিলেন। এই কাজে ট্রেড লাইসেন্স বাবদ তাকে ২শ` টাকা জমা দিতে হয়েছে। আর কবরস্থানের জন্য দিতে হয়েছে ৫০ টাকা। তিনি বলেন, এই টাকা দেয়ার সময় দাবি করেছিলেন শ্মশান প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা হোক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেটা মানেনি।
শৈলকুপা পৌরবাসী আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে জানান, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ টাকা আদায় করতে গিয়ে ভিন্ন ধর্মের মানুষের কাছ থেকেও জোর করে টাকা নিয়েছেন। যেকোনো কাজে গেলেই দিতে হয়েছে কবরস্থানের ৫০ টাকা।
শহরের গিরিধারী জুয়েলার্সের মালিক ঝন্টু জোয়ার্দ্দার জাগো নিউজকে জানান, তিনিও কবরস্থানের টাকা দিয়েছেন।
প্রতিপক্ষ প্রার্থী এবং ভোটারদের অভিযোগ অদৃশ্য কবরস্থানের কথা বলে এভাবে টাকা আদায় করা ঠিক হয়নি। তাছাড়া প্রশ্ন এসেছে একটি কবরস্থান নির্মাণের উদ্যোগ নিয়ে ৫ বছরেও যে কর্তৃপক্ষ সফল হতে পারেনি তারা আগামীতে কতটুকু সফলতা আনতে সক্ষম হবেন।
এ ব্যাপারে বর্তমান মেয়র কাজী আশরাফুল আজমের সঙ্গে কথা বললে তিনি জাগো নিউজকে জানান, এই টাকা কারো কাছ থেকে জোর করে নেয়া হয়নি। নাগরিকরা খুশি হয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, যে পরিমাণ টাকার প্রয়োজন সেই পরিমাণ টাকার জোগাড় করতে না পেরে নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। এই টাকা ব্যাংকে জমা আছে। কত টাকা জমা আছে জানতে চাইলে এই মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না তবে আগামীতে করা হবে বলে জানান।
এমজেড/এমএস