হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে নওগাঁর মাঠ
ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতির রূপও বদলে গেছে। বদলেছে ফসলের ধরণ। গাঢ় হলুদের বর্ণ ছেয়ে গেছে গ্রামবাংলা চিত্র। মাঠে মাঠে অপার সবুজের সমারোহ এখন হলুদে ভরে উঠেছে। দিগন্তজুড়ে সরিষা ফুলের নয়নাভিরাম দৃশ্য শোভা পাচ্ছে। প্রকৃতি যেন নয়ন জুড়ানো হলুদ আভায় রূপ নিয়েছে।
নওগাঁয় এ বছর সরিষার আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। বৈরি আবহাওয়ার সত্ত্বেও সরিষার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সরিষায় ফল ধরতে শুরু করেছে। সরিষা খেত থেকে বাড়তি আয় হিসেবে মধু আহরণে করে থাকেন স্থানীয় মৌ চাষিরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, গত আগস্ট মাসে বন্যায় নওগাঁর রাণীনগর, আত্রাই ও মান্দা উপজেলা ১৪ হাজার হেক্টর জমি তলিয়ে যায়। বন্যা কবিলত ওই এলাকায় হাজার হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন তালিকা করে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের মাঝে কৃষি সহযোগিতা প্রদান করে।
জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১৬ হাজার কৃষকদের প্রতি বিঘা জমিতে এক কেজি সরিষা, ২০ কেজি গম, দুই কেজি ভট্টার বীজ ও সার দেয়া হয়। এছাড়া নতুন জাতের সরিষার উদ্ভাবন করা হয়েছে। বারি-১৪ ও ১৫। এটি টরি-৭ থেকে অনেক উচ্চ ফলনশীল সরিষা এবং অধিক ফলন পেয়ে কৃষক লাভবান হচ্ছেন। মাঠ পর্যায়ে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের পরামর্শ অব্যাহত রেখেছেন।
আত্রাই উপজেলার হাতিয়াপাড়া গ্রামের মামুনুর রশিদ জানান, এ বছর পাঁচ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন। কৃষি অফিস থেকে কিছু সরিষার বীজ এবং বাজার থেকে কিছু বীজ কিনে জমিতে রোপন করেছেন। সরিষা গাছে প্রচুর ফুল ধরায় আশানুরূপ ফলন পাবেন বলে মনে করছেন। এছাড়া বাজারে দাম ভাল হলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে পুরোদমে ইরি-বোরো চাষ করতে পারবো।
ভোঁপাড়া গ্রামের মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি দুই বিঘা জমিতে বারি-১৪ সরিষার আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষায় কোনো প্রকার রোগবালাই না থাকায় এবার ফলন পাবেন।
রাণীণগর উপজেলার কৃষক আব্দুস সালাম জানান, সরিষার জমিতে ধানের আবাদ ভাল হয় এবং খরচ কিছুটা কম হয়। বাজারে সরিষা বেঁচে সেই টাকা দিয়ে ইরি-বুরো ধানের আবাদ করায় সুবিধা হয়। সরিষার ফল দেখে আশা করছেন বিঘা প্রতি প্রায় ৫/৬ মণ হারে হতে পরে। এখন বাজারে দাম ভাল পেলেই হয়।
মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের কৃষক নুরুল ইসলাম জানান, সরিষা খারাপ হলে বিঘা প্রতি সাড়ে তিন মণের মতো হয়। তবে গাছে ফল দেখে মনে হচ্ছে ভাল হতে পারে। সরিষা আবাদে খরচ কম হয়।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরদারী ও সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে ও ভালো মূল্য পেলে এলাকায় সরিষা চাষের পরিধি আরো বেড়ে যাবে বলে আশা করছেন কৃষিবিদসহ কৃষকরা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জানান, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। কৃষকদের পরামর্শ দেয়ায় এবার উপজেলায় ব্যাপক সরিষার আবাদ হয়েছে। বোরো ফসলের আবাদের জন্য যেসব জমি ফেলে রাখা হতো এবার সে সমস্ত জমিতেও সরিষার আবাদ করা হয়েছে।
সঠিক সময়ে পরামর্শ দেয়ায় কৃষকরা সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। আগামীতে জেলায় সরিষা চাষ আরো বৃদ্ধি হয়। সেজন্য কৃষকদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
আব্বাস আলী/এআরএ/পিআর