আজ রাজশাহী মুক্ত দিবস

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৪:০৪ এএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫

আজ ১৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের ওই দিনে রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে উড়ানো হয় লাল-সবুজের বিজয় কেতন। মহান মুক্তিযুদ্ধের লাল গোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী উড়ান সেই পতাকা। ওই দিনই মুক্ত হয় রাজশাহী। সেই থেকে রাজশাহীবাসীর স্মৃতিপটে জলজল করছে আজকের দিনটি।

তার দুই দিন আগেই ১৬ ডিসেম্বর। ৪৩ বছর আগের এই দিনে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে এসেছিলো বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামের গৌরবোজ্জ্বল বিজয়। পঞ্চান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে উঠেছিলো নতুন সূর্য। এ দেশ মুক্ত হয়েছিলো দখলদারদের হাত থেকে। দিনটি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবের, অহংকারের।

কিন্তু, রাজশাহীতে স্বাধীনতার সেই সূর্য কিরণ পৌঁছে তার আরও দুই দিন পর। শহর শত্রুমুক্ত হয়। মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও গেরিলা যোদ্ধাদের ক্রমাগত আক্রমণে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদররা কোনঠাসা হয়ে পড়ে। অবশেষে রাজশাহীতে উড়ে স্বাধীন দেশের পতাকা। মুক্তিকামী জনতার ঢল নামে রাজশাহী শহরের সড়কে-সড়কে, অলিতে-গলিতে, পাড়া-মহল্লায়।

যুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী গঠনের পর শুরু হয় ত্রাস, হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ নানা নিপীড়ন। পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বধ্যভূমিতে হত্যা করলো চার হাজার মানুষকে। পাশবিক নির্যাতনের শিকার হন শত শত নারী।

পাকিস্তানি সৈন্যরা দোসরদের মদদে নিরীহ লোকজনদের হত্যা করে পার্শ্ববর্তী পদ্মায় ফেলে দেয়। ওই সময় মুক্তিযোদ্ধারা ঢুকতে থাকেন রাজশাহীর বিভিন্ন অঞ্চলে। এরই মধ্যে ২৫ নভেম্বর পাকিস্তানি সৈন্যরা রাজশাহী নগরীর শ্রীরামপুর চরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জীবন্ত অবস্থায় বালির মধ্যে পুঁতে হত্যা করে। সবকিছু সহ্য করে স্বাধীনতার দিন গুণতে থাকেন এ অঞ্চলের মানুষ।

মিত্র বাহিনীর বিমানকে স্বাগত জানাতে সবাই তখন আকাশের দিকে তাকিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। সে সময় পাক সেনাদের বিমান বোমা ফেলতে থাকে রাজশাহীতে। লালগোলা সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও শেখপাড়া সাব-সেক্টর কমান্ডার মেজর রশিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের সঙ্গে লড়াই করে মুক্ত করে ফেলে রাজশাহীর গ্রাম অঞ্চল।

মহদিপুর সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর রাজশাহী অ্যাডভান্সের পরিকল্পনা নিলেন। তিনি ১৪ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেহায় চরে শহীদ হলেন। মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী রাজশাহীর দিকে দ্রুতগতিতে অগ্রসর হতে থাকে। ১৬ ডিসেম্বর পরাজয় বরণের পর যৌথ বাহিনীর এ অগ্রগামী দল পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছ থেকে সাদা পাগড়ি ও আত্মসমর্পনের চিঠি নিয়ে রাজশাহী শহরে বীরদর্পে ঢোকে।

স্বজন হারানোর কষ্ট আর স্বাধীনতার উল্লাসে গোলাপজল, ফুলের পাপড়ি দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা-মিত্র বাহিনীকে বরণ করে নেয় রাজশাহীবাসী।

১৮ ডিসেম্বর মুক্ত হয়ে যায় রাজশাহী। রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে স্বাধীন বাংলার পতাকা তোলেন লালগোলা সাব সেক্টর কমান্ডার মেজর গিয়াস উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

শাহরিয়ার অনতু/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।