করোনার উৎপত্তি নিয়ে সংশয়, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৫:৪৭ পিএম, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

এক বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বে তাণ্ডব চালাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে প্রথম এই ভাইরাস শনাক্ত হয়। কিন্তু এর উৎস কোথায় তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েই গেছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি গবেষক ও বিশেষজ্ঞরাও। তবে তার আগেই এই ভাইরাসের উৎস এবং এর ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে দুষতে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।

কোভিড-১৯ ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সদস্যদের একটি তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানেও চীনকেই দায়ী করা হয়েছে। ওই তদন্ত প্রতিবেদনের বিরোধিতা করে চীনের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওশু একটি বিবৃতি দেন। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস থেকে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ওই গোয়েন্দা প্রতিবেদন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি একটি মিথ্যা প্রতিবেদন। এর কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি বা বিশ্বাসযোগ্যতা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক ড. রালফ বারিক ও তার নর্থ ক্যারোলাইনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইউএনসি) টিম দ্বারা পরিচালিত করোনাভাইরাসের গবেষণা কাজ নিয়ে বিভিন্ন মহলে গুরুতর প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সম্প্রতি চীনা দূতাবাস এ বিষয়ে আরও একটি বিবৃতি দিয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে বর্তমানে আমরা যে বৈশ্বিক মহামারির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি, সেক্ষেত্রে সংক্রামক রোগগুলোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সেনা মেডিকেল গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইউএসএএমআরআইআইডি) সঙ্গে উক্ত গবেষণা দলের সহযোগিতার গুরুতর পরিণতি কি না, তা নিয়েও দেখা দিয়েছে নানা সংশয়।

কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সঙ্গে ল্যাবের (ইউএসএএমআরআইআইডি) সম্পৃক্ততার বিভিন্ন সন্দেহজনক দিক এবং ২০১৯ সালে অসংখ্য নিয়ম ভঙ্গের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসির (দ্য সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) ল্যাবটি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এই ল্যাবের কার্যকলাপকে আরও সন্দেহজনক ও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

ড. রালফ বারিক ও তার ইউএনসির গবেষণা দল বেশ কিছুদিন যাবৎ করোনাভাইরাস-সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে একটি হল গেইন-অব-ফাংশন (জিওএফ) গবেষণা। এটি করোনাভাইরাস জিনোমের ম্যানিপুলেশন ও মডিফিকেশনের জন্য খুব সহজেই প্রয়োগ করা যায় এমন সিন্থেটিক জীববিজ্ঞান কৌশল ধারণের জায়গা তৈরি করে।

উল্লেখিত ল্যাব থেকে বা দুর্ঘটনাক্রমে ড. রালফ বারিক ও তার গবেষণা দল থেকে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেন ছড়িয়েছে কিনা এমন সম্ভাবনার সন্দেহ তাদের বিস্তৃত গবেষণা ও এ কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত পেটেন্ট দ্বারা আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

jagonews24

২০০৩ সালে একটি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা যায় ড. রালফ বারিকের গবেষণা দল ইউএসএএমআরআইআইডি’র সঙ্গে অংশীদারিত্ব করেছিল এবং দুই মাসের মধ্যে পূর্ণদৈর্ঘ্য সিডিএনএ তৈরি করেছিল। এটি স্পষ্টভাবেই ইঙ্গিত করে ২০০৩ সালেও এই প্রতিষ্ঠানের সার্স-সম্পর্কিত করোনাভাইরাস রূপান্তরিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সার্স ভাইরাসের আরএনএ সম্পর্কে উন্নত সক্ষমতা ও বিস্তারিত জানাশোনা ছিল।

২০০৮ সালে আরেকটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে যেখানে, ড. রালফ বারিক একটি প্রাণি থেকে ভাইরাস পুনর্গঠনে তার সাফল্যের কথা উল্লেখ করেছিলেন; এর জিনোম ব্যাকবোন বাদুড় সার্স জাতীয় করোনাভাইরাস থেকে সংগ্রহ করা হয়েছিল।

২০১৫ সালে প্রকাশিত ‘এ সার্স-লাইক ক্লাস্টার অব সার্কুলেটিং ব্যাট করোনাভাইরাস শো পটেনশিয়াল ফর হিউম্যান ইমার্জেন্স’ শিরোনামের একটি গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়েছিল যে, ইঁদুর-অভিযোজিত সার্স-কোভ ভাইরাস থেকে জিনোম ব্যাকবোন দিয়ে একটি করোনাভাইরাস তৈরি করা হয়েছিল।

এছাড়াও ড. রালফ বারিক ও তার দল ইউএসএএমআরআইআইডি’র সঙ্গে কাজ করেছেন এবং তাদের বিভিন্ন পেটেন্টের মালিকানা রয়েছে, যার অধিকাংশই করোনাভাইরাস জিনোমের ম্যানিপুলেশনের সঙ্গে সম্পর্কিত। একইসাথে ইউএসএএমআরআইআইডি ল্যাবের বিরুদ্ধে নীতি লঙ্ঘনের বিভিন্ন অভিযোগ এই ল্যাব থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর সম্ভাবনার দাবিকে আরও দৃঢ় করেছে।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি এ ল্যাবের নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে ল্যাব পরিদর্শনে গিয়েছিল এবং জানতে পেরেছিল যে, ল্যাব কর্তৃপক্ষ এবং এর কর্মীরা জৈব নিরাপত্তা ও নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি মেনে চলতে ব্যর্থ হয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে অনেকেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ফোর্ট ডেট্রিকে অবস্থিত এই ল্যাবের কার্যকলাপের একটি নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য সার্স-কোভ-২ এ ব্যাট করোনাভাইরাস মিউটেশনের সম্ভাব্যতা সম্পর্কে সত্য উদঘাটন করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রত্যেকের এখন নিজের দায়িত্ব নিজের পালন করা উচিৎ। অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসর দেশগুলোর উচিৎ দ্রুতগতিতে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি খুঁজে বের করা, যেনো বিজ্ঞানীরা লাখ লাখ জীবন বাঁচাতে সমাধানের জন্য তাদের কাছে সহজে তথ্য পেতে পারেন। এজন্য দল-মত সকল পার্থক্য নির্বিশেষে সব দেশের যৌথভাবে এ সমস্যা সমাধানে কাজ করতে হবে।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।