তালেবানের নয়া প্রতিশ্রুতি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৫৫ এএম, ১৮ আগস্ট ২০২১
আফগানিস্তান নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) প্রথম সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন তালেবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ। তালেবানের সামনের দিনগুলো কেমন হবে, তার কতগুলো প্রতিশ্রুতি সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন তিনি।
তালেবানের মুখপাত্র শুরুতেই, অন্যান্য দেশের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সর্ম্পক স্থাপন করার কথা তুলে ধরেন। তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ প্রতিশ্রুতি দেন যে, তারা নারীদের অধিকারকে শ্রদ্ধা করবে। আফগানিস্তানে আর সংঘাত চায় না তালেবান। দেশের ভেতর ও বাইরে আর কাউকে শত্রু হিসেবে চায় না তারা। সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছে গোষ্ঠীটি।
তালেবানের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আফগানিস্তান থেকে আমরা বিদেশিদের বের করতে পেরেছি। পুরো জাতিকে স্বাগত জানাচ্ছি। এটি পুরো জাতির জন্য গর্বের বিষয়। প্রত্যেক জাতির স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার আছে। ২০ বছর পর আফগানরা সেই স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছে। আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। এই ইসলামিক আমিরাত কোন প্রতিশোধ নেবে না। কারও সঙ্গে সংঘাতে জড়াবে না। আফগানিস্তানের ভূমি ব্যবহার করে অন্য কোনো দেশের ওপর হামলা চালানোর সুযোগও দেওয়া হবে না।
জাবিউল্লাহ মুজাহিদ বলেন, আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। আমরা অনেক ভুলও করেছি। মতাদর্শ ও বিশ্বাসের দিক দিয়ে কোনো তফাত নেই আমাদের। তবে অতীতের থেকে এখনকার অবস্থান ভিন্ন তালেবানের।
তিনি বলেন, আফগানদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। বিদেশি প্রতিনিধি, দূতাবাস, আন্তর্জাতিক সংগঠন, তাদের মিশন সবাইকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেওয়া হবে। বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিন্তে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।
তালেবান এই মুখপাত্র বলেন, নারীদের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক আমিরাত প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে শরিয়া মোতাবেক নারীদের অধিকার নিশ্চিত করা হবে। আমাদের বোনেরা সমান সুযোগ পাবেন, সমান অধিকার পাবেন। তাদের জন্য সব ধরনের সুযোগ সুবিধা থাকবে। তারা চাইলে যে কোন সেক্টরে কাজ করতে পারবেন। আমরা নারী-পুরুষ কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে চাই। আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আশস্ত করতে চাই নারীদের প্রতি কোন বৈষম্য করা হবে না। তবে শরিয়া মোতাবেক সব হবে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি দ্রুত দেশের অর্থনীতি পুনর্নির্মাণে কাজ শুরু করবো। আমরা আমাদের দেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে চাই। প্রত্যেক আফগান নাগরিক তার জীবন-মান উন্নত করার সুযোগ পাবেন।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যমকে কাজের সুযোগ দেওয়া হবে। বেসরকারি সংবাদমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে। তবে সংবাদমাধ্যমের তালেবানের বিরুদ্ধে কাজ করা উচিত হবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
আফগানিস্তানে আফিম চাষ বন্ধ করে দেশকে মাদকমুক্ত করার কথা জানান তালেবানের এই নেতা। আফিম (পপি) চাষের ওপর নির্ভরশীল কৃষকদের জন্য বিকল্প চাষাবাদে সহায়তা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বানও জানান তিনি।
শেষে জাবিউল্লাহ বলেন, আমি সংবাদ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এসময় বিভিন্ন ইস্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরও দেন তালেবান মুখপাত্র।
অনেকটা বিনাযুদ্ধে রোববার কাবুলের নিয়ন্ত্রণে নেয় সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান। ২০ বছর আগে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশ চালায় এই সংগঠনটি। সেসময় দুর্নীতি দমনসহ বেশ কয়েকটি ইতিবাচক কাজ করলেও তাদের বিস্তর সমালোচনা রয়েছে কঠোর শরিয়া আইন নিয়ে। বিশেষ করে নারী অধিকার ইস্যুতে গোটাবিশ্বে কঠোর সমালোচনা রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন দেখার বিষয় তালেবান কতটুকু পারে তাদের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে?
সূত্র: আল জাজিরা
এসএনআর/এমকেএইচ