বহলা ট্রাজেডি দিবস আজ : মেলেনি শহীদদের স্বীকৃতি

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৩১ এএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫

আজ ১৩ ডিসেম্বর। বিরলের বহলা ট্রাজেডি দিবস। পাক হানাদাররা ৭১’র এই দিনে বহলার গ্রামবাসীদের একত্রিত করে ৩২টি তরতাজা প্রাণকে নিমর্মভাবে হত্যা করেছিল। এদের একত্রে এই গ্রামে গণকবর দেয়া হয়েছিল। তিন বছর আগে গণকবরটিতে দৃষ্টিনন্দন একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও শহীদদের নাম ফলক হয়নি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছরেও শহীদদের পরিবার রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি পায়নি।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে সংঘবদ্ধ মুক্তিবাহিনীর প্রতিরোধের মুখে পাকসেনারা পিছু হটতে থাকে। এই দিনে বিরল উপজেলার ভান্ডারা কিংবা রাণীপুকুর ইউপি থেকে পাক হানাদাররা পিছু হটে দিনাজপুর শহরের দিকে আসতে থাকে। সন্ধ্যার আগ মুহূর্তে কাঞ্চন জংশন এবং রেলব্রিজ সংলগ্ন বিজোড়া ইউপির বহলা গ্রামের দক্ষিণ প্রান্তে নিরীহ গ্রামবাসীর কাছে মুক্তিবাহিনীর সংবাদ জানতে চায় পাক হানাদার বাহিনী। কারণ এ গ্রামের সন্নিকটে সারাঙ্গাই-পলাশবাড়ীতে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প ছিল যা আশপাশেই হবে বলে অনুমান করেছিল তারা।

কিন্তু কোনো গ্রামবাসী মুখ খুলেনি। ফলে প্রথমে তাদের গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেয়া হয়। পাক হানাদারদের নির্দেশ না মানায় গোটা গ্রাম ঘিরে একত্র করে নিয়ে পুরুষদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াতে বলে পাক সেনারা। এ সময় মাগরিবের আজান পড়ে। গ্রামবাসীরা নামাজ আদায় করতে চাইলে নামাজের অনুমতি না দিয়ে ফায়ারিং শুরু করে মুহূর্তেই ৩২টি তাজা প্রাণ গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে দু’জন বাদে সবাইকে একত্রে বহলা গ্রামে গণকবর দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের ৪৪ বছরেও এরা শহীদ হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো স্বীকৃতি পাননি। তাদের অনেকের পরিবার অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটালেও সরকারের পক্ষ থেকে সহানুভূতি পায়নি।

এছাড়া সেদিন আহত অবস্থায় বেঁচে যান ৫ জন। পরের দিন মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে ১৪ ডিসেম্বর বিরলসহ দিনাজপুর শত্রুমুক্ত হয়।

ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া ওই গ্রামের আনিছুর রহমান বাবুল বলেন, ২৯ মার্চ ৭১ দিনাজপুরবাসী বিডিআর সেক্টর সদর দফতর কুঠিবাড়ীতে হামলা চালিয়ে দখল করে নেয়। সেখানকার রসদ লুট করে আনা হয় বহলায়। তাছাড়া এই বহলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের অন্যতম ঘাঁটি। তাই খান সেনাদের আক্রোশ ছিল এ গ্রামের উপর। ফলে সেদিন গ্রামের নিরীহ পুরুষদের সারিবদ্ধভাবে গুলি চালানো হয়েছিল। গুলিবিদ্ধ হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান তিনি। পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে নিজ খরচে দু’দফা অপারেশনের মাধ্যমে গুলি শরীর থেকে অপসারণ করেছেন।

বেঁচে যাওয়া ওই গ্রামের আরেকজন মহির উদ্দীন বলেন, তার মেরুদণ্ডের মধ্যে সে দিনের গুলি এখনো রয়েছে।  

এ ব্যাপারে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার রহমান আলী বলেন, আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহীদ ও আহতদের তালিকা পাঠিয়েছি।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে গণকবরের পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হলেও ৪৪ বছরেও শহীদদের নাম ফলক হয়নি। প্রতি বছর দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করে থাকে।

এমদাদুল হক মিলন/এসএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।