গুণগত মানে সমস্যাই কোভ্যাক্সিন সংকটের কারণ, জানালেন ভারতীয় কর্তা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৮:৩৬ পিএম, ০৩ আগস্ট ২০২১
ফাইল ছবি

ভারতীয়দের নিজস্ব আবিষ্কৃত করোনা টিকা ‘কোভ্যাক্সিন’ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা যেন শেষই হচ্ছে না। তৃতীয় ধাপের ট্রায়াল শেষ হওয়ার আগেই গণহারে ব্যবহারের অনুমোদন নিয়ে শুরু থেকে বিতর্ক ভারত বায়োটেকের তৈরি এই টিকা নিয়ে। এখন পর্যন্ত জরুরি ব্যবহারের জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ছাড়পত্র পায়নি কোভ্যাক্সিন। এর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। এবার সেই ‘সমস্যা’র কথাই স্বীকার করে নিলেন ভারত সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা।

গত সোমবার ভারতের কোভিড টাস্কফোর্সের প্রধান এন কে অরোরা এনডিটিভি’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ব্যাঙ্গালুরুতে নতুন যে কারখানায় কোভ্যাক্সিন উৎপাদন শুরু হয়েছে, তার প্রথম কয়েকটি ব্যাচে টিকার গুণগত মান নিয়ে ‘সমস্যা’ ছিল।

তার কথায়, টিকা উৎপাদনের বিষয়টি অনেকটা রকেট বিজ্ঞানের মতো। আমরা অনেক বেশি কোভ্যাক্সিন উৎপাদনের আশা করছিলাম। তারা ব্যাঙ্গালুরুতে নতুন কারখানা চালু করেছে। মোট উৎপাদন বাড়াতে সরকারি তিনটি কারখানাও একযোগে কাজ করছে। ভারত বায়োটেকের কাছ থেকে আমরা ১০ থেকে ১২ কোটি ডোজ আশা করছি।

তবে প্রত্যাশিত পরিমাণে কোভ্যাক্সিন পাওয়া যায়নি জানিয়ে ডা. অরোরা বলেন, ব্যাঙ্গালুরুর কারখানাটি ভারত বায়োটেকের সবচেয়ে বড় কারখানা। প্রাথমিক উৎপাদনের দুটি ব্যাচের টিকা মান পরীক্ষায় পাস করেনি… এর গুণগত মান ঠিক ছিল না। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যাচ ঠিকঠাক এসেছে। সেগুলো বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হয়েছে। আমরা আশা করছি, আগামী চার থেকে ছয় সপ্তাহের মধ্যে ভারত বায়োটেকের টিকার উৎপাদন অনেক বাড়বে।

covaxin--3.jpg

এদিকে, কোভ্যাক্সিন নিজ দেশে সমালোচনার মুখে পড়লেও বাংলাদেশে সেটির ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে উঠেপড়ে লেগেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে এজন্য প্রয়োজনীয় তহবিলের অনুমোদনও দিয়েছে নরেন্দ্র মোদির সরকার।

ভারত সরকারের একটি অভ্যন্তরীণ নথির বরাতে সোমবার হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশে ‘কোভ্যাক্সিন’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল নিশ্চিত করেছে ভারত সরকার। ভারত বিভিন্ন দেশে তাদের মিশনগুলোর সাহায্যে স্থানীয় নীতিনির্ধারণী কর্তৃপক্ষগুলোর দ্বারস্থ হয়ে কোভ্যাক্সিন ব্যবহারের অনুমোদনের জন্য জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

ওই নথিতে বলা হয়েছে, বিদেশে, বিশেষ করে প্রতিবেশী অঞ্চলে ‘কোভ্যাক্সিন’র সম্মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বাংলাদেশে এর ট্রায়াল পরিচালনার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এজন্য বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করতে ভারতের জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ এবং ভারত বায়োটেকের কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত একটি দলের ঢাকা সফরের ব্যবস্থা করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এছাড়া বাংলাদেশে কোভ্যাক্সিন ট্রায়ালের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিলেরও অনুমোদন নিশ্চিত করেছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এখন বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পেলেই ট্রায়াল শুরু হতে পারে।

covaxin--3.jpg

গত জানুয়ারিতে প্রকাশিত রয়টার্সের এক প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে হিন্দুস্তান টাইমস জানায়, বাংলাদেশের মেডিকেল গবেষণা কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন, ‘কোভ্যাক্সিন’ ট্রায়ালের জন্য আবেদন করেছে ভারত বায়োটেক। এ বিষয়ে অবগত কয়েকজনের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমটি আরও দাবি করে, গত ১৮ জুলাই দেশে ‘কোভ্যাক্সিন’ ট্রায়াল পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল গবেষণা কাউন্সিল (বিএমআরসি)। এতে বাংলাদেশের পক্ষে সই করেছেন বিএমআরসি চেয়ারম্যান সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমআরসি চেয়ারম্যান জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত মাসে এ ব্যাপারে চুক্তি সই হয়েছে। থার্ড ফেজের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। থার্ড ফেজ হলো- ইতোমধ্যে এ টিকা মানবদেহে সফলতার সঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে। এখন ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের সংখ্যা যত বেশি বাড়ানো যায় তত প্রতিষ্ঠানের সুনাম আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাড়ে। ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলসহ বিভিন্ন দেশে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে।’

মানুষের ওপর দেশে যেকোনো ধরনের প্রতিষেধকের ট্রায়ালের অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ হলো বিএমআরসি উল্লেখ করে সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি আইসিডিডিআরবির মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে কাগজপত্র জমা দিয়েছে, যার পর ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের অনুমোদন দেয়া হয়।’

কবে থেকে কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শুরু হতে পারে, এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক মোদাচ্ছের আলী বলেন, ‘বিএমআরসি চূড়ান্ত অনুমতি দিয়েছে। এখন টিকা কী প্রক্রিয়ায় আনা হবে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের জন্য কত ভলান্টিয়ার নিয়োগ দেয়া হবে ইত্যাদি প্রস্তুতি সাপেক্ষে ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের কাছে নথিপত্র উপস্থাপন করবে। অধিদফতরের অনুমোদন পাওয়ার পর তারা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যাবে।’

কেএএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।