মুস্তাফিজে বোল্ড গেইল
বড় বড় ব্যাটসম্যানরা তার বলে খাবি খাবেই। এটাই যেন নিয়তি। ক্রিস গেইল কেন বাদ যাবেন! তাকেও যে নিতে হবে মুস্তাফিজের কাটার কিংবা স্লোয়ারের স্বাদ। লিগ পর্বের শেষ ম্যাচেই মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল দু’জনের; কিন্তু শেষ চার নিশ্চিত হওয়ায় দু’জনকেই বিশ্রামে রেখেছিল ঢাকা এবং বরিশাল।
অবশেষে ইলিমিনেটর রাউন্ডে মুখোমুখি হয়ে গেলেন গেইল-মুস্তাফিজ। তবে, অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছিল না ভক্তদের। কারণ, শুরুতে রনিকে হারালেও ঝড় তুলছিলেন গেইল। একেরপর এক বাউন্ডারি আর ছক্কায় দিকভ্রান্ত করে ফেলছিলেন ঢাকার বোলারদের।
বাধ্য হয়ে ইনিংসের ৫ম ওভারে মুস্তাফিজকে বোলিংয়ে নিয়ে আসেন ঢাকার অধিনায়ক সাঙ্গাকারা। কিন্তু কি নিয়তি, এই ওভারে গেইলের মুখোমুখিই হলেন না মুস্তাফিজ। ৬ বলের সবগুলোই মোকাবেলা করলেন সাব্বির রহমান। প্রথম ৫ বল ডট। শেষ বলে দিলেন মাত্র ১ রান।
৫ ভার গ্যাপ দিয়ে ইনিংসের ১০ম ওভারে আবারও মুস্তাফিজের হাতে বল তুলে দিলেন সাঙ্গাকারা। উদ্দেশ্যে গেইল আর সাব্বির রহমান মিলে যে রানের পাহাড় বানাচ্ছে, তাতে আঘাত হানা। এবার মুস্তাফিজের সামনে সাব্বির। প্রথম বলে কোন রান নেই। দ্বিতীয় বলে সাব্বির নিলেন ১ রান। এটাই যেন কাল হয়ে দাঁড়াল গেইলের জন্য।
১০ম ওভারের তৃতীয় বলেই মুখোমুখি হলেন গেইল-মুস্তাফিজ। বিশ্বের অন্যতম বিধ্বংসী ব্যাটসম্যানকে সামনে পেয়ে যেন নিজের তুনের আসল তীরটা বের করে নিয়ে আসলেন সাৎক্ষীরা এক্সপ্রেস। এতদিন হয়তো গেইল তার কথা শুনে আসিছিলেন। এই প্রথম মোকাবেলা করবেন।
কিন্তু কীসের কি! দুর্দান্ত স্লোয়ারের সঙ্গে অফ কার্টারের মিশেল। গেইল খেলারই চেষ্টা করলেন না। ডিফেন্স করতে গেলেন। কিন্তু বুঝতেই পারলেন না। উড়িয়ে নিয়ে গেলো ক্যারিবীয় দানবের স্ট্যাম্প। মুস্তাফিজকে মোকাবেলা করতে এসে প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে গেলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান। এভাবে তরুন এই বাঁ-হাতি পেসারের কাছ থেকে অভ্যর্থনা পাবেন, যেন নিজেকেই বিশ্বাস করাতে পারছিলেন না গেইল।
অথচ ইনিংসের শুরু থেকেই ঝড়ের পূর্বাভাস দিচ্ছিলেন গেইল। ঢাকা যদি শেষ পর্যন্ত তাকে না থামায়, তো নিশ্চিত ছক্কা মেরে যেভাবে বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করেন গেইল, ঠিক তেমনি বিপিএল থেকেই ঢাকাকে আউট করে দেবেন তিনি।
এ ম্যাচের আগে খেলেছেন তিন ম্যাচ। প্রথম দুটিতে ছিলেন ব্যর্থ। দুই ম্যাচেই সংগ্রহ ছিল তার ৮ রান করে। তৃতীয় ম্যাচে এসেই দেখালেন তার দানবীয় রূপ। চিটাগাং ভাইকিংসের বিপক্ষে খেলেছিলেন ৪৭ বলে ৯২ রানের এক টর্নেডো ইনিংস।
ইলিমিনেটর রাউন্ডে হারলেই বিদায়। জিতলেও সরাসরি সুযোগ থাকছে না ফাইনালে ওঠার। খেলতে হবে প্রথম কোয়ালিফায়ারে হারা দল রংপুরের বিপক্ষে। সে পর্যন্ত যেতে হলে যে গেইলকে জ্বলে উঠতে হবে! প্রয়োজনটা বোঝেন ক্যরিবীয় ব্যাটিং দৈত্য। সে অনুযায়ী ঢাকার বিপক্ষে জ্বলে উঠলেন তিনি।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই রনি তালুকদারকে হারিয়ে বিপদে পড়া বরিশালের দুশ্চিন্তার কারণ নেই, যতক্ষণ ক্রিজে গেইল থাকেন। শুরু থেকেই মারমুখি এই বাঁ-হাতি। ১৯ বল খেলে তুলে ফেলেছিলেন ৩১ রান। ৪টি বাউন্ডারির সঙ্গে ছক্কা দুটি।
কিন্তু মুস্তাফিজের কাছে ধরাশায়ী হতে হলো তাকে। বোল্ড হয়ে ফিরে গেলেন তিনি। তবে গেইলকেও যেন ছাড়িয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশি হার্ডহিটার সাব্বির রহমান। পুরো বিপিএলে ব্যর্থ থাকার পর দলের একেবারে প্রয়োজনের মুহূর্তে জ্বলে উঠেছে তার ব্যাট। গেইলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তুলছেন বরিশালের রান।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত গেইল ফেরার পর প্যাভিলিয়নের পথ ধরেছেন সাব্বিরও। তার আগে অবশ্য ৩৯ কলে করেছেন ৪১ রান। ১৩তম ওভারে নাবিল সামাদের বলে একেবারে বাউন্ডারি লাইনে মোসাদ্দেক হোসেনের হাতে ধরা পড়েন সাব্বির। ৩টি বাউন্ডারির সঙ্গে মেরেছিলেন ৩টি ছক্কা।
এ রিপোর্ট লেখার সময় বরিশালের রান ১৪.২ ওভার শেষে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮৯। উইকেটে মেহেদি মারূফ ৬ রানে এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১০ রানে।
আইএইচএস/আরআইপি