সাগরে আবারো বেপরোয়া জলদস্যু বাহিনী
সাগরে জলদস্যু বাহিনীর তাণ্ডবে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সমুদ্রে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত লাখো মৎস্যজীবী। মাস খানেক আড়ালে থাকলেও ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এই জলদস্যু বাহিনী।
গত রোববারে এক রাতেই ১০ ফিশিংবোটে ডাকাতি হয়েছে। লুট হয়েছে অন্তত ২০ লাখ টাকার মাছ ও মালামাল। ডাকাতদলের বেপরোয়া মারধরে আহত হয়েছে ৪০ জনের অধিক মাঝিমাল্লা। আহতদের সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
জেলা বোট মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে শনিবার রাতে বিভিন্ন পয়েন্টে অন্তত ১০টি ফিশিংবোট জলদস্যুদের কবলে পড়ে। এর মধ্যে শহরের বদর মোকাম এলাকার আলহাজ্ব রফিকুল হুদা চৌধুরীর এফভি আজমীর, নতুন বাহারছরার ফিরোজের এফভি ফায়জা, জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির সভাপতি মুজিবুর রহমান চেয়ার্যমানের ভাই এনাম কোম্পানির এফভি কিশোয়ার, মহেশখালীর আব্দুর রহিমের এফভি শাকেরা, শহরের পেশকার পাড়ার মতিউর রহমানের এফভি হোসাইন উল্লেখযোগ্য।
সূত্র আরো জানায়, এ উপকূলে গত ১০ বছরে সাড়ে ৩`শ জেলে দস্যুদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন। তিন ডজনের বেশি জলদস্যু বাহিনীর হাতে কক্সবাজারের পুরো সমুদ্র উপকূল জিম্মি হয়ে পড়েছে। সমুদ্রে আধিপত্য বজায়কারী এসব জলদস্যু বাহিনীর লোকজন মাছ ধরার বোটগুলোতে হামলা চালিয়ে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে আহরিত মাছ, জাল ও সঙ্গে থাকা বোট। একই সঙ্গে জেলেদের অপহরণ করে আদায় করছে মোটা অঙ্কের অর্থ। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অমানবিক কায়দায় হত্যা ও আহত করে সমুদ্রে ভাসিয়ে দিচ্ছে জেলেদের। জলদস্যুদের উৎপাত বৃদ্ধি পাওয়াতে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত জেলেরা এখন রয়েছেন চরম আতঙ্কে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সমুদ্র এখন মৎস্যজীবীদের জন্য আর নিরাপদ নয়। বেড়ে গেছে ডাকাতদের ক্রমাগত উৎপাত। মালামাল লুটের পাশাপাশি হত্যা করছে জেলেদের। বঙ্গোপসাগর এলাকায় সম্প্রতি আবারও জলদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেছে। বর্তমানে কুতুবদিয়া, সোনাদিয়া, শাহপরীর দ্বীপ ও বাঁশখালী এলাকা জলদস্যুদের নিরাপদ ঘাঁটি। কক্সবাজার জেলা ফিশিং বোট মালিক সমিতি, জেলে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বঙ্গোপসাগরের কক্সবাজার উপকূলের বিভিন্ন এলাকার তিন ডজনাধিক শীর্ষ জলদস্যুর নেতৃত্বে দু’শতাধিক দস্যু রাজত্ব চালাচ্ছে।
এসব জলদস্যুরা হলেন, যথাক্রমে মহেশখালীর সোনাদিয়া এলাকার নাগু মেম্বার, একই এলাকার মৃত এখলাছ মিয়ার ছেলে মোকারম জাম্বু, বাহাদুর মিয়ার ছেলে সরওয়ার বতইল্যা, বদি আলমের ছেলে আঞ্জু মিয়া, শহরের নুনিয়াছড়া এলাকার নজরুল ইসলামের ছেলে ফারুক, মহেশখালীর সোনাদিয়া এলাকার ফরুখ আহমদের ছেলে রুহুল আমিন, মোজাফফর আহমদের ছেলে ফারুক, মৃত এখলাছ মিয়ার ছেলে মাকসুদ, মহেশখালীর পুটিবিলা এলাকার ইউছুপ আলীর ছেলে সামশুল মাঝি, সোনাদিয়া এলাকার এ.কে. ফজলুল হকের ছেলে মোবারক, মোস্তফা আলীর ছেলে সুমন, আব্দুর রহমানের ছেলে আব্দুল মোনাফ, বদি আলমের ছেলে (আঞ্জুর ভাই) নাগু-২, শফিক, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী এলাকার ইয়াছিনের ছেলে আহমদ নবী, কক্সবাজার চরপাড়া এলাকার মৃত কাছিম আলীর ছেলে সিরাজ অন্যতম।
এছাড়া সমুদ্রে যেসব জলদস্যু বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে তারা হলেন, কুতুবদিয়ার এবাদুল্লাহ বাহিনীর প্রধান বাদশা মাঝি প্রকাশ বাদশা বাহিনী, করিম বাহিনী, ভাই ভাই বাহিনী, দিদার বাহিনী, মুন্সিয়া বাহিনী, কামাল বাহিনী, নাসির বাহিনী, জাহাঙ্গীর বাহিনী, ফরিদ বাহিনী, জাম্বু বাহিনী, খলিল বাহিনী, জসু বাহিনী ও কালাবাঁশি বাহিনী।
জানা গেছে, কক্সবাজার সদরের নুনিয়ারছড়া, নাজিরারটেক, ফিশারিঘাট, নতুন বাহারছড়া, মাঝিরঘাট, পেশকারপাড়া, টেকপাড়া, খুরুশকুল, চৌফলদণ্ডী, পোকখালী, গোমাতলি, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, মালুমঘাট, কাটাখালী, চরণদ্বীপ, পেকুয়া, মগনামা, রাজাখালী, মহেশখালী, শাপলাপুর, ঘটিভাঙা, কালামারছড়া, কুতুবদিয়া, উত্তর ধুরুং, উখিয়ার সোনারপাড়া, ইনানী, টেকনাফ, শামলাপুর, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, বাঁশখালী, সোনাদিয়াসহ কক্সবাজার উপকূলে প্রায় ১৫ হাজার ছোট-বড় ট্রলার রয়েছে।
এসব বোটে মহেশখালীতে ২০ হাজার ৩`শ, কুতুবদিয়ায় ১২ হাজার, চকরিয়া-পেকুয়ায় সাত হাজার, কক্সবাজার সদর উপজেলায় ২৫ হাজার, টেকনাফ উপজেলায় ১৫ হাজার, উখিয়া উপজেলায় পাঁচ হাজারসহ উপকূলে প্রায় এক লাখ মৎস্যজীবী গভীর ও অগভীর সাগরে মাছ ধরার কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। সমুদ্রে মাছ ধরার সময় এসব বোটের প্রত্যেকটিতে ২২ থেকে ২৫ জন জেলে থাকেন। এদিকে জলদস্যুদের আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন বোট মালিকরা।
সায়ীদ আলমগীর/এমজেড/পিআর