গাবতলীতে পুলিশের ছত্রছায়ায় চাঁদাবাজি হয় না


প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ০৫ ডিসেম্বর ২০১৫

রাজধানী ঢাকার প্রবেশপথের নিকটস্থ থানা দারুসসালাম। রাজধানীর বড় পশুর হাট, বড় বাস টার্মিনাল গাবতলী এই থানার অন্তর্ভুক্ত। সম্প্রতি সেই গাবতলীতেই দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে থানাটির দায়িত্বরত এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা নিহত হন। এরপর এই থানার এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা দেখা দেয়। এই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব পালন করছেন মো. সেলিমু্জ্জামান।

গাবতলীর হাট ও বাস টার্মিনালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পুলিশি যোগসাজশে অবৈধ সব দোকান বাণিজ্য, মাজার কেন্দ্রীক পুলিশী দৌরাত্ম, নামে-বেনামে পুলিশের সোর্স পরিচয়ে যাত্রী ও সাধারণ মানুষকে হয়রানি এবং এএসআই হত্যার পর থানার এলাকাটির নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজের মুখোমুখি হয়েছেন ওসি সেলিমুজ্জামান। পাঠকদের জন্য এর চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো।
 
জাগো নিউজ : জাগো নিউজের পক্ষ থেকে আপনাকে শুভেচ্ছা। কেমন আছেন?
 
সেলিমু্জ্জামান : জাগো নিউজকেও শুভেচ্ছা। জ্বি আমি ভালো আছি। ব্যস্ত সময় কাটছে।
 
জাগো নিউজ :  রাজধানীর প্রবেশ পথ গাবতলী। এই প্রবেশ পথ দিয়েই মূলত উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ  স্থলপথে রাজধানীতে প্রবেশ করে। এ কারণেই এই পথে অপরাধীদের বিচরণ বেশি। আপনি কি মনে করেন?
 
সেলিমু্জ্জামান : নানা কারণে ডিএমপির অন্যান্য থানার মধ্যে দারুসসালাম থানা গুরুত্বপূর্ণ। এটা এর বিশেষ কারণই বলতে পারেন। সাধ্যমতো সময়ই প্রবেশ পথে নিরাপত্তা জোরদারসহ সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখা হয়। অনাকাঙ্খিত একটি ঘটনা ঘটলেও এখন কিন্তু আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই রয়েছে।
 
জাগো নিউজ : আপনি তো বলছেন নজরদারি রাখেন। প্রবেশ পথ হিসেবে এখানে একটি স্থায়ী চেকপোস্ট রয়েছে বলে জানি। কিন্তু আপনার থানা এলাকায় বিকল্প পথে ঢোকা যায়। গাবতলী হাট ও টার্মিনালেও প্রবেশ করা যায়। সে ক্ষেত্রে এক পার্শ্বের নজরদারি কাজে আসবে কি? সিসি টিভিও কিন্তু সব স্থানে নেই।
 
সেলিমু্জ্জামান : দেখুন, স্থায়ী চেকপোস্ট বলতে গাতবলী পর্বত সিনেমা হলের সামনেই। মূল রাস্তা এটিই। এছাড়াও কিন্তু আমাদের মোবাইল টিম আছে। মোবাইল টিমের মাধ্যমে আমরা সম্ভাব্য ঝুকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নজরদারি করি। প্রয়োজন পড়লে অস্থায়ী চেকপোস্ট বসানো হয়।

        
 
জাগো নিউজ : আপনার থানা এলাকার অপরাধ মানচিত্র আছে দেখলাম। কিন্তু সে অপরাধ মানচিত্রে গাবতলী পশুর হাটের কথা লেখা থাকলেও গাবতলী বাস টার্মিনাল ও গাবতলী মাজার রোড সংলগ্ন এলাকার নাম নেই। অথচ এ দুই এলাকায় কিন্তু অপরাধ সংখ্যাটা বেশিই।
 
সেলিমু্জ্জামান : অপরাধ মানচিত্র হালনাগাদ করা হয়নি। গাতবলীর নাম যোগ করতে হবে। তবে মাজার রোডস্থ অপরাধ প্রবণ এলাকাগুলো এখনো শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
 
জাগো নিউজ : গাবতলীতে অসংখ্য অবৈধ দোকানপাট বসছে। রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী মহল জড়িত থাকলেও এখানে সবই হচ্ছে পুলিশের ছত্রছায়ায়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অবৈধ দোকানপাট বসে বলে নানা মহলের অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত জানতে চাই।
 
সেলিমু্জ্জামান : দেখুন দোকানপাট বসবে কি বসবে না তা দেখার জন্য আমি বা থানা পুলিশ বসে নেই। তা দেখার দায়িত্ব কিন্তু ওই সিটি কর্পোরেশনের। এব্যাপারে আপনি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলুন। এখানে পুলিশের ভাগ খাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
 
জাগো নিউজ : পুলিশই টাকার বিনিময়ে অবৈধ দোকানপাট বসতে দিচ্ছে অভিযোগটা প্রমাণ সাপেক্ষ হলে আপনি কি করবেন? অভিযোগ কিন্তু স্বয়ং আপনার বিরুদ্ধেও রয়েছে।
 
সেলিমু্জ্জামান : আমার বিরুদ্ধে? এটা আপনি কি বললেন! আমাকে সরকার কি টাকা কম দেন যে আমি টাকার বিনিময়ে অবৈধ দোকানপাট বসাতে যাবো? এসব অভিযোগ আমলে নিই না আমি।

জাগো নিউজ : গাবতলীতে এক শ্রেণির লোক রয়েছে যারা সাধারণ যাত্রী ও পথচারীদের প্রতিনিয়ত হয়রানি করছেন। তারা পুলিশের সোর্স বলে পরিচয় দিচ্ছেন। তাদের কাছে গাঁজা কিংবা ইয়াবা ট্যাবলেটও মিলেছে। সেসব দিয়ে হয়রানি করা হয়। এরপর থানা পুলিশের আগমন ঘটে। এমনও অভিযোগ আছে যে, গাতবলীতে পুলিশের চেয়ে সোর্সের সংখ্যা বেশি।
 
সেলিমু্জ্জামান : এমন কথা প্রথম শুনলাম (হেসে)। কই কেউ তো থানায় অভিযোগ করেন না! আর সোর্স তো সরাসরি যাত্রী কিংবা পথচারি সাধারণকে চার্জ কিংবা তল্লাশী করতে পারেন না। সোর্সের সংখ্যা কেন বেশি হবে? আমরা আসামি কিংবা অপরাধী ধরার ক্ষেত্রেই মাত্র কিছু কিছু সোর্সের সহযোগিতা নিয়ে থাকি। আপনি যেহেতু বললেন বিষয়টি আমি খতিয়ে দেখবো।

        
 
জাগো নিউজ : দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে নিহত এএসআই ইব্রাহিম মোল্লা সহকর্মী হিসেবে কেমন ছিলেন? তার পরিবারের সঙ্গে কি যোগাযোগ আছে?
 
সেলিমু্জ্জামান : হুম… সহকর্মী হিসেবে ইব্রাহিম খুবই ভালো ছিলেন। আমি খুবই মর্মাহত। আমার সঙ্গে ইব্রাহিমের পরিবারের যোগাযোগ রয়েছে। তার স্ত্রীর জন্য সরকারি চাকরি কিংবা আর্থিক সহযোগিতার জন্য ডিএমপি ও পুলিশ সদর দফতরে অনুরোধ করা হয়েছিল। পুলিশ সদর দফতর ইতোমধ্যে ইব্রাহিমের পরিবারকে আর্থিকভাবে সহযোগীতা করেছে।
 
জাগো নিউজ : সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি হত্যাকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপর হামলা জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এরপর দায়িত্ব পালনে সতর্কতার নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। আপনার থানার এএসআই নিহত হয়েছেন। এজন্য কি চাপ বোধ করছেন? ডিএমপি’র নির্দেশন গুলো কি সহকর্মীরা মানছেন?
 
সেলিমু্জ্জামান : হুম… ডিএমপির নির্দেশনার বিষয়টি জানানো হয়েছে। দায়িত্ব নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। আতঙ্কের কথা বলবেন তো, আতঙ্ক তো থাকবেই। তবে সতর্কতাই এর সমাধান।
 
জাগো নিউজ : বাউল শিল্পীদের গাবতলী মাজার ও এর পাশের এলাকায় গানের স্টুডিও বসতে দিচ্ছে না পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সহযোগিতায় আলাদাভাবে টাকার বিনিময়ে স্টুডিও বসছে। ভক্ত ও শিল্পীদেরই অভিযোগ, প্রতি রাতেই স্টুডিও প্রতি দুই থেকে ১০ হাজার পর্যন্ত টাকাও নিচ্ছে পুলিশ ।
 
সেলিমু্জ্জামান : দেখুন আপনার প্রশ্নে আমি বিব্রত। গাবতলী মাজার তো আমার থানা এলাকার মধ্যে না। তবে ২/১ টি স্টুডিও বসতো আমার এলাকায়। অশ্লীলতার জন্য বন্ধ করেছি।
 
জাগো নিউজ : থানার ওসি’র দায়িত্ব অনেক। ব্যস্ততাও কম নয়। সব মিলিয়ে কাজের বাইরে নিজের পরিবারকে কিভাবে সময় দেন?
 
সেলিমু্জ্জামান : আমি থানা ভবনের উপরেই পরিবার নিয়ে থাকি। পরিবার ও থানাকে তাই আলাদা করে দেখতে পারি না। খুব কাছ থেকেই আমার পরিবার আমার কাজের ব্যস্ততা দেখতে পায়। সে কারণে পরিবারকে সময় দেয়া না দেয়া নিয়ে কোনো চাপ নেই।
 
জাগো নিউজ : আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
সেলিমু্জ্জামান : আপনাকেও ধন্যবাদ।

জেইউ/এআরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।