করোনা রোগীদের সহায়তায় ব্যস্ত স্কুল শিক্ষক
অডিও শুনুন
করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। দেশটির সব রাজ্যে মৃত্যু ও শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। পশ্চিমবঙ্গেও করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছরের মার্চ থেকে রাজ্যের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে বাড়িতে বসেই মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন শিক্ষকরা।
তবে এভাবে বেতন নেয়া অপছন্দ পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথির কুলাই পদিমা নিম্ন বুনিয়াদী বিদ্যালয়ের শিক্ষক শ্যামল জানার। নিজের টাকায় ওষুধ ও খাবার কিনে তা করোনা আক্রান্তদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে পৌঁছে দিচ্ছেন এ স্কুল শিক্ষক। আর তার এ মহৎ কাজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী স্ত্রী মনিকা।
অসহায় আক্রান্তরা যাতে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেজন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের নম্বর দিয়েছেন স্কুল শিক্ষক শ্যামল। তার কাছে ফোন আসলেই সাহায্যপ্রার্থীর ঠিকানা জেনে নেন তিনি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিজের মোটরসাইকেলে চড়ে আক্রান্তের বাড়িতে পৌঁছে যাচ্ছেন।
শ্যামল জানিয়েছেন, গত কয়েকদিন কাঁথি শহর ও শহরের পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জায়গা থেকে কল আসা শুরু হয়েছে। কল পেলেই তিনি ঠিকানা জেনে নিয়ে সেখানে পৌঁছে যান। প্রয়োজনীয় খাবার ও ওষুধ পৌঁছে দেন আক্রান্ত ও তাদের স্বজনদের। এসব সহায়তা সামগ্রী তিনি নিজের বেতনের টাকায় কিনেছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শিক্ষক শ্যামল গরিব ছাত্র-ছাত্রীদের প্রতি বছর খাদ্যসামগ্রী উপহার দেন। প্রতি মাসে অসহায় নিঃসন্তান বৃদ্ধদের সহায়তা করেন তিনি। গরিব পরিবারের কন্যাসন্তানের বিয়েতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন শ্যামল। শুধু শিক্ষকই নন, শ্যামলবাবু এলাকায় পরিবেশপ্রেমী হিসাবেও পরিচিত। তিনি সময় পেলেই কাঁথির কাছাকাছি বঙ্গোপসাগরের তীরে পৌঁছে যান। সমুদ্র তীরে পড়ে থাকা প্লাস্টিক কুড়িয়ে বর্জ্যমুক্ত করার চেষ্টা করেন।
তার এমন কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সাধারণতন্ত্র দিবসে সরকারি মঞ্চে কাঁথি প্রশাসনের পক্ষ থেকে কাঁথি মহকুমা শাসক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক কোভিড যোদ্ধা সম্মানে ভূষিত করেন। করোনাকালে ভাইরাস যখন প্রিয়জনদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করেছে, তখন গ্রামের শ্যামল স্যারই যেন সকলের ‘ত্রাণকর্তা’ হয়ে উঠেছেন।
এএএইচ/এমকেএইচ