ভর্তি নিয়ে উৎকণ্ঠায় লাখো অভিভাবক
সব বাবা মা-ই চান সন্তানকে পছন্দের স্কুলে ভর্তি করতে। কিন্তু এ যেন সোনার হরিণ! রাজধানীর সরকারি-বেসরকারি স্কুলে গত বছরের চেয়ে আসন সংখ্যা কম হওয়ায় এ হরিণ এবার অধরাই থেকে যাবে অনেকের। একইসঙ্গে অনেক স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তি না করার সিদ্ধান্তে হতাশ হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এছাড়া রয়েছে বিশেষ কোটাসহ প্রভাবশালীদের তদবির। ফলে পছন্দের স্কুলে ভর্তি নিয়ে লাখো অভিভাবক রয়েছেন উৎকণ্ঠায়।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) সূত্রে জানা যায়, ঢাকা মহানগরীতে ৩টি ফিডার শাখাসহ ৩৮টি সরকারি এবং ৪৫৬টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে এবার রাজধানীর ভালো স্কুলগুলোতে সব শ্রেণিতে ভর্তি করা হবে না। এমনকি প্রথম শ্রেণিতেই অনেক স্কুল ভর্তি নিবে না। অথচ সবচেয়ে বেশি ভর্তি প্রতিযোগিতা হয় প্রথম শ্রেণিতে।
গতবছর সরকারি স্কুলের প্রথম শ্রেণিতে সাড়ে ৯ হাজার আসনের বিপরিতে ৭২ হাজার ৯০১ শিক্ষার্থী আবেদন করেছিল। এবার ১৬টি সরকারি স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে মাত্র ১ হাজার ৬৮০ শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। অন্যান্য শ্রেণিতে ১০ হাজার ২৩৭ জন ভর্তি করবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের তথ্যমতে রাজধানীতে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য শিশু রয়েছে প্রায় দুই লাখ। এ হিসেবে প্রথম শ্রেণিতে দেড় লক্ষাধিক শিশু অভিভাবকদের পছন্দের স্কুলে ভর্তি হতে পারবে না।
সরকারি ছাড়া রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল মডেল হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আ. রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ নুর মোহাম্মদ পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর উচ্চ বিদ্যালয়, বিএফ শাহীন স্কুল, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, হলিক্রস উচ্চ বালিকা স্কুল ও কলেজ, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, অগ্রণী স্কুল ও কলেজ, সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়, মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জুনিয়র ল্যাবরেটরি স্কুল ও কলেজ, গ্রীনফিল্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাইল স্টোন কলেজ, ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুলসহ ৪০টি স্কুলে ভর্তি নিয়ে অভিভাবকরা রীতিমতো যুদ্ধে নেমে পড়েন। এরই মধ্যে এসব স্কুল ভর্তি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। কোনো কোনো স্কুলে ভর্তি ফরম বিতরণ শেষ হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। তবে সরকারি স্কুলে আবেদন শুরু হবে ৩০ নভেম্বর রাত ১২টার পর থেকে।
জানা গেছে, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের মতিঝিল শাখার দিবা শিফটে ১ম, ২য়, ৩য় এবং প্রভাতী ও দিবা শিফটের ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করবে না। এছাড়া বনশ্রী শাখার দিবা শিফটে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৫ম এবং প্রভাতী শিফটে ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শ্রেণিতে ভর্তি করবে না। মোহাম্মদপুর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে তৃতীয় শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণি পর্যন্ত সীমিত আসনে ভর্তি করা হবে। মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কোন শ্রেণিতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করবে না। সেন্ট জোসেফ উচ্চ বিদ্যালয়ে শুধু তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করবে। রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ৯ম শ্রেণিতে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর ভর্তি নেয়া হবে।
ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে তৃতীয় শ্রেণিতে দিবা ও প্রভাতী উভয় শিফটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে যথাক্রমে একশ` ও ৫০ জন করে ভর্তি করা হবে। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে উভয় শিফটে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ৫০ জন করে ভর্তি করবে। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রণালয়সহ রয়েছে বিশেষ কোঠা। ফলে এ বছর ভালো স্কুলে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তিতে তীব্র প্রতিযোগিতা হবে। বিশেষ করে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির জন্য এক ধরনের যুদ্ধে নামতে হবে অভিভাবকদের।
এ বিষয়ে মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উপাধ্যক্ষ (বালক) মুর্শেদা শাহীন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থী কমিয়ে কোয়ালিটি বাড়াতে চাই। তাই এ বছর কোনো শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি নিব না। যেসব সব শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে তারা অন্যত্র চলে গেলেও শূন্য কোঠায় ভর্তি করা হবে না।
ভর্তি ইচ্ছুক অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পছন্দের স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করতে প্রতিদিন ছুটছেন বিভিন্ন স্কুলে। একাধিক প্রাইভেট টিউটরসহ সাহায্য নিচ্ছেন বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের। কোমলমতি শিশুদের হাতে তুলে দিয়েছেন নিষিদ্ধ ভর্তি গাইড। এর বাইরেও অপকৌশলে ভর্তির উপায় খুঁজছেন অনেকে।
মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনে কথা হয় জুরাইন এলাকার বাসিন্দা ইশরাত জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার মেয়েকে (জাইমা) মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করার জন্য গত জুন মাস থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়ে কোচিং সেন্টারে ভর্তি করেছি। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে দেই। মেয়ের প্রস্তুতিতে আমি সন্তুষ্ট। কিন্ত স্কুলে ভর্তির খোঁজ নিতে এসে শুনলাম এ বছর দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি করবে না। এখন আমার মেয়ের কী হবে?
এই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে ভর্তি না করার সিদ্ধান্তে হতাশার কথা জানালেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া তাসনিমুন নাদিমের মা সাদিয়া বেগম, মতিঝিল রেলওয়ে কলোনি এলাকার আব্দুস সালাম মিয়া। শুধু এই তিনজনই নয়। সন্তানকে পছন্দের স্কুলে ভর্তির জন্য রাজধানীর লাখো অভিভাবক রয়েছেন চরম উৎকণ্ঠায়।
মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহানা বেগম জানান, ভর্তি তদবিরে তিনি অতিষ্ঠ। প্রতিদিনই মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পর্যন্ত ভর্তির তদবির করেন। অনেক লোকজন আসেন বিভিন্ন প্রভাবশালীর নামে কাগজপত্র নিয়ে।
তবে লটারি এবং ভর্তি পরীক্ষায় যোগ্যদেরই ভর্তি করা হবে বলে জানান তিনি।
এনএম/জেডএইচ/আরএস/এমএস