বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক স্থান
প্রথম শ্রেণির গোয়েন্দা পরীক্ষা সম্পর্কে লিখেছিলেন এফ. স্কট ফিজগেরাল্ড। এ সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন, একই সময়ে দুটি বিপরীত ধারণা মাথায় রাখার ক্ষমতা এবং কাজ করে যাওয়ার ক্ষমতা ধরে রাখা। কয়েক দশক ধরে উচ্চ মাত্রার রহস্যময় এই চর্চা তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে শান্তি বজায় রেখেছে।
ছোট্ট দ্বীপ তাইওয়ানে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বাস। এটি চীনের উপকূল থেকে ১শ মাইল (১৬০ কিলোমিটার) দূরে অবস্থিত। বেইজিংয়ের নেতৃত্বস্থানীয় লোকজনের দাবি চীন একটি দেশ এবং তারা একে পরিচালনা করছে অপরদিকে তাইওয়ান হচ্ছে চীনের একটি বিদ্রোহী অংশ। যুক্তরাষ্ট্র চীনের একক নীতিতে সম্মতি জানায় তবে ৭০ বছর ধরে তারা তাইওয়ানকেও অস্বীকার করেনি।
বর্তমান সময়ে অনেক কিছুই বদলে গেছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র আশঙ্কা করছে যে, তারা আর চীনকে জোর করে তাইওয়ান দখল থেকে বিরত রাখতে হয়তো সক্ষম হবে না। ইন্দো-প্যাসিফিক কমান্ডের প্রধান অ্যাডমিরাল ফিল ডেভিডসন গত মার্চে কংগ্রেসে বলেন, ২০২৭ সালের মধ্যে চীন হয়তো তাইওয়ানকে আক্রমণ করতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন।
কিন্তু তেমন কিছু হলে বিপর্যয় নেমে আসবে। এটা কেবল তাইওয়ানে রক্তপাত এবং দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির কারণে নয় বরং অন্য কারণও আছে। একটি কারণ বলা যায় অর্থনীতি। তাইওয়ান নামের ছোট্ট দ্বীপটি সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের কেন্দ্রে অবস্থিত।
বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান চিপ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে টিএসএমসি। উন্নতমানের ৮৪ শতাংশ চিপ এখানেই তৈরি হয়। টিএসএমসিতে উৎপাদন বন্ধ থাকলে বিশ্বের ইলেক্ট্রিক কোম্পানিগুলোকে অনেক বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন প্রযুক্তি এর প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে। চীন বা যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থানে আসতে আরও কয়েক বছর লেগে যাবে।
আর একটি বড় কারণ হচ্ছে চীন এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দ্বন্দ্বে তাইওয়ান হচ্ছে একটি রণক্ষেত্র। যদিও যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে রক্ষা করার জন্য চুক্তিবদ্ধ নয়। চীনা আক্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তি এবং তার কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকল্পের পরীক্ষা হবে।
যদি এই লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পতন হয় তবে রাতারাতি এশিয়ার ক্ষমতাশীল দেশে পরিণত হবে চীন। তখন মার্কিন মিত্রদের কপালে ভাঁজ পড়বে। কারণ বুঝে যাবে এখন কী করতে হবে। প্যাক্স আমেরিকানার পতন ঘটবে।
গত পাঁচ বছরে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিমে ৯০ টি বড় জাহাজ এবং সাবমেরিন চালু করেছে চীনা নৌবাহিনী। চীন প্রতিবছর একশটিরও বেশি যুদ্ধবিমান তৈরি করছে। তারা মহাকাশ অস্ত্র মোতায়েন করেছে এবং তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় আঘাত করতে পারে এমন নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে। তাইওয়ানে হামলায় চীনের অনুকরণীয় দেশগুলোর লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো হেরে যাবে।
যদিও চীন স্পষ্টতই আরও কর্তৃত্ববাদী ও জাতীয়তাবাদী হয়ে উঠেছে এই বিশ্লেষণটি খুব হতাশাবাদী কারণ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের সাথে বৈরিতা বেড়েই যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এখনও তার লোকজনকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেননি।
তবে দেশটির ক্ষমতাশীন কমিউনিস্ট পার্টি ওই অঞ্চলে সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা এবং ওই অঞ্চলে চীনর শক্তি এবং বিশ্বে ক্রমবর্ধমান ভূমিকার দাবি করে আসছে।
অধিকাংশ সময় বৈরিতায় নীরব থাকাই শ্রেয়। যুদ্ধের মাধ্যমে সমাধান না খুঁজে ভিন্ন পথে হাঁটা উচিত। চীনের প্রয়াত নেতা ডেং শিয়াওপিং বলেন, জ্ঞানী প্রজন্ম রেখে যেতে হবে। পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক জায়গায় দাঁড়িয়েও শান্তির কথা ভাবতে হবে। সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করতে হবে। তাইওয়ানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে যুদ্ধ এড়াতে কঠোরভাবে কাজ করতে হবে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের।
টিটিএন/এমএস