অন্য করোনা রোগীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের বেড ছাড়লেন ৮৫ বছরের বৃদ্ধ
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভারতজুড়ে হু হু করে বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। এর ফলে হাসপাতালগুলোতে দেখা দিচ্ছে অক্সিজেন এবং শয্যার হাহাকার। এমন পরিস্থিতিতে নিজের বেড অন্য এক করোনা রোগীকে ছেড়ে দিয়ে মানবিকতার নজির গড়লেন ৮৫ বছরের এক বৃদ্ধ।
ঘটনাটি ঘটেছে মহারাষ্ট্রের নাগপুরে। ওই বৃদ্ধের নাম নারায়ণ দভালকর। তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একজন সদস্য ছিলেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকদিন আগে শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে নাগপুরের ইন্দিরা গান্ধী সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু সেই হাসপাতালেই একজন নারী তার ৪০ বছর বয়সী স্বামীকে ভর্তির জন্য নিয়ে আসেন। হাসপাতালে খালি বেড না থাকায় ওই নারীর স্বামীকে ভর্তি নিতে অস্বীকৃতি জানায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যদিও ওই নারী হাসপাতালের চিকিৎসকদের খুব করে অনুরোধ করছিলেন কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি।
আর এই ঘটনা দেখে বৃদ্ধ নারায়ণ দভালকর হাসপাতাল প্রশাসনের কাছে তার বেডটি ওই নারীর স্বামীকে দেয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আমার জীবন যাপন করে নিয়েছি। আমার এখন ৮৫ বছর বয়স। আর এই নারীর স্বামী এখনো যুবক। তার ওপর পরিবারের দায়িত্ব আছে। সুতরাং তাকে আমার বেডটি দেয়া উচিত।’
এরপর প্রশাসন তাকে একটি কাগজে লিখিয়ে নেয়, ‘আমি স্বেচ্ছায় অন্য একজন রোগীর জন্য আমার বিছানা খালি করছি।’ যদিও হাসপাতাল থেকে ফিরে তিনদিন পরেই ওই বৃদ্ধ মারা যান।
প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে নারায়ণ দভালকরের শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তার অক্সিজেনের মাত্রা কমে এসে ৬০-এ দাঁড়ায়। এরপর তার জামাই এবং মেয়ে তাকে ইন্দিরা গান্ধী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে অনেক কষ্টে একটি বেডের ব্যবস্থা করতে পারেন তারা। কিন্তু এক যুবক যাতে বেড পেতে পারেন সেজন্য নিজের বেডটি ছেড়ে দিয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছিলেন দভালকর।
দভালকরের স্বজনরা জানিয়েছেন, তিনি শিশুদের মধ্যে চকোলেট বিতরণ করতেন। এজন্য বাচ্চারা তাকে ‘চকোলেট চাচা’ নামে ডাকত। তার জীবনেও চকোলেটের মতো মিষ্টতা ছিল। এ কারণেই শেষসময়েও তিনি সেবার কাজে ব্রতী হয়েছিলেন।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে মৃত্যু ও শনাক্তের অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। একদিনে নতুন করে মারা গেছেন তিন হাজার ৬৪৫ জন। আক্রান্ত হয়েছেন তিন লাখ ৭৯ হাজারের বেশি মানুষ।
বৃহস্পতিবার (২৯ এপ্রিল) সকালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রচারিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে দেশটির গণমাধ্যমগুলো। এর ফলে ভারতে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ৪ হাজার ৭৩২ জনে।
এমআরআর/এমকেএইচ