হয়রানির অভিযোগ করেছে ৩ হাজার ৯৩০ গ্রাহক
গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহকরা আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে ৩ হাজার ৯৩০টি অভিযোগ করেছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রোববার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স রুমে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদন-২০১৫ প্রকাশকালে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনটির মোড়ক উন্মোচন করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
প্রতিবেদন অনুযায়ী- ব্যাংকিং খাতে গত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে গ্রাহকরা আর্থিক অনিয়ম ও হয়রানির শিকার হয়ে মোট ৩ হাজার ৯৩০টি অভিযোগ করেছে। এ অভিযোগগুলো শতভাগ নিষ্পত্তি হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এর আগে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের গ্রাহকরা ৪ হাজার ৪৭৬টি অভিযোগ করেছিল। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছিল ৪ হাজার ২৯১টি। অথ্যাৎ নিষ্পত্তির হার ছিলো ৯৫ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় অভিযোগ কমেছে। এর পাশাপাশি নিষ্পত্তি হয়েছে শতভাগ।
প্রতিবেদন অনুযায়ী- সবচেয়ে বেশি অভিযোগ এসেছে বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে। যা মোট অভিযোগের ৫৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ। রাষ্ট্রয়াত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। বিদেশি বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
বিশেষায়িত ব্যাংকের বিরুদ্ধে ৩ দশমিক ৮২ শতাংশ এবং ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫ দশমিক ৮২ শতাংশ।
প্রতিবেদন সূত্র্রে জানা আরও গেছে, গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার পর থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৯২০টি অভিযোগ এসেছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে সবগুলো নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় গ্রাহকের হয়রানি ও ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদান ব্যাংকিং খাতের একটি অঙ্গীকার হওয়া উচিত। আর এ অঙ্গীকার পূরণে সহায়তা করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বদ্ধপরিকর।
গভর্নর বলেন, গ্রাহকদের প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিয়ে ব্যাংকগুলোও প্রতিযোগিতামূলক উন্নত সেবাদানের মাধ্যমে গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন ও গ্রাহক ভিত্তি প্রশস্ত করতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
প্রতি তিন মাস পরপর একটি গ্রাহক সমাবেশ করার আহ্বান জানিয়ে গভর্নর বলেন, যাতে করে ব্যাংকার ও গ্রাহক সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হয়।
অদৃশ্য চার্জ (হিডেন চার্জ) সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা আছে গ্রাহককে না জানিয়ে কোনো ব্যাংক কোনো প্রকার চার্জ কর্তন করতে পারবে না।
এ ধরণের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে সেই ব্যাংকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানটিতে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক এ কে এম আমজাত হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এস কে সুর চৌধুরী, কনজুমার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি গোলাম রহমান এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের সভাপতি আলী রেজা ইফতেখারসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১১ সালের ১ এপ্রিল গঠন করে গ্রাহক স্বার্থ সংরক্ষণ কেন্দ্র। পরে এর পরিধি বাড়তে থাকায় আরও বৃহৎ পরিসরে একে ঢেলে সাজিয়ে ২৫ জুলাই ২০১২ সালে গঠন করা হয় ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিস বিভাগ (এফআইসিএসডি)।
ফ্যাক্স (০০৮৮-০২-৯৫৩০২৭৩), ই-মেইল ([email protected]), এসএমএস এবং ১৬২৩৬ নম্বরে ডায়াল করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো অনিয়ম ও হয়রানির বিরুদ্ধে গ্রাহকরা অভিযোগ করতে পারেন। ব্যাংক এ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এ সেবা চালু করা হয়েছে।
এসআই/একে/আরআইপি