এফবিআইয়ের ‘সোর্স’ হতে রাজি না হওয়ায় কালোতালিকায় মুসলিম যুবক!
যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারি এবং সন্দেভাজনদের তথ্য সরবরাহের জন্য এক মুসলিম যুবকের কাছেই প্রস্তাব দিয়েছিল দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এফবিআই)। কিন্তু সেই প্রস্তাবে রাজি হননি তিনি। এরপর থেকে সেই যুবককে নানাভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন ভুক্তভোগী। খবর সিএনএনের।
৩২ বছর বয়সী আমেরিকান বংশোদ্ভূত ওই যুবকের নাম আহমদ চেবলি। মামলার এজাহারে তিনি অভিযোগ করেছেন, বছর তিনেক আগে এফবিআই কর্মকর্তারা প্রথমবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এসময় মুসলিম যুবকটির সঙ্গে লেবানিজ হিজবুল্লাহর যোগসাজশ রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়, যাদের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী বলে মনে করে যুক্তরাষ্ট্র।
এমন অভিযোগ শুনে রীতিমতো চমকে ওঠেন আহমদ। মিশিগানের এ বাসিন্দা দুই সন্তানের বাবা। তবে পরিবার ও শিক্ষাগত দিক থেকে লেবাননের সঙ্গে যোগসূত্র রয়েছে তার। একারণেই এ যুবকের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহ-যোগের অভিযোগ আনা হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
আহমদ সঙ্গে সঙ্গেই অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তবে এরপরও পিছু ছাড়েনি এফবিআই। মার্কিণ গোয়েন্দারা তার ভাষাগত দক্ষতা ও ধর্মীয় পরিচয় কাজে লাগিয়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নজরদারি চালানোর পরিকল্পনা করেন।
আহমদ বলেন, তার ওপর এফবিআইয়ের চাপ ক্রমেই বাড়তে থাকে। তিনি ভয়ের পাশাপাশি হিজবুল্লাহ-যোগের অভিযোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার আশায় এফবিআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তত সাতবার দেখা করেন। তবে শেষপর্যন্ত সোর্স (তথ্যদাতা) না হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এ মুসলিম যুবক।
তিনি বলেন, এফবিআই এজেন্টরা আমাকে এবং আমার পরিবারকে হুমকি দেন। তারা আমাকে আমার সম্প্রদায়ের তথ্যদাতা হিসেবে কাজ করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু আমি সরকারি জবরদস্তিতে অস্বীকৃতি জানাই, এরপর তারা আমাকে ‘নো-ফ্লাই’ তালিকাভুক্ত করে। ফলে এখন আমি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে, আমার কাজ করতে বা মুসলিম হিসেবে ধর্মীয় দায়িত্ব পালনে (হজ) প্লেনে চড়া থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষিদ্ধ।
আহমদের পক্ষে ওয়াশিংটন ডিসির জেলা আদালতে মামলাটি দায়ের করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন। তাদের মতে, সামান্য ‘যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ’-এর ভিত্তিতে মানুষজনকে নো ফ্লাই তালিকাভুক্ত করা অসাংবিধানিক। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও বাসিন্দাদের মধ্যে এই তালিকাভুক্তদের বেশিরভাগই মুসলিম এবং আরব, মধ্যপ্রাচ্য বা দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত।
আহমদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি এবং এফবিআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল সিএনএন। এর মধ্যে শুধু এফবিআই সাড়া দিয়েছে। তবে সংস্থাটির মুখপাত্র জানিয়েছেন, তারা তদন্তাধীন কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি নন।
কেএএ/জিকেএস