তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে মাংস কম খাওয়ার পরামর্শ


প্রকাশিত: ০৬:০৭ এএম, ২৬ নভেম্বর ২০১৫

বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে মাংস খাওয়া কমানোর পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি গবেষণা সংস্থা। চ্যাথম হাউজ নামের ওই গবেষণা সংস্থাটি বলছে, আরো দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঠেকাতে মাংস কম খেতে হবে।

চেইঞ্জিং ক্লাইমেট, চেইঞ্জিং ডায়েটস: পাথওয়েস টু লোয়ার মিট কনজাম্পশন শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার এই বিপদ সম্মিলিত পদক্ষেপের মাধ্যমে শনাক্ত করতে পারলে তা জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। আর তা না পারলে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিপদসীমা অতিক্রম ঠেকানো প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ৩০ নভেম্বর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ২১তম  সম্মেলন শুরু হতে যাচ্ছে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সম্মেলন ঘিরে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক বেশ গুরুত্ব পাচ্ছে। কিন্তু এর আগে ২০০৯ সালের কোপেনহেগেন সম্মেলনে সেরকম গুরুত্ব পায়নি।

কার্বন নিঃসরণ কমাতে আন্তর্জাতিকভাবে জীবাশ্ম জ্বালানি ও পরিবহন খাত এ সম্মেলন ঘিরে গুরুত্ব পেলেও গবাদিপশু খাতের বিষয়টি রয়েছে আড়ালে। অথচ বিশ্বের মোট গ্রিনহাউজ গ্যাসের প্রায় ১৫ শতাংশ গবাদি পশুর কারণেই নিঃসরিত হয়। যা সব গাড়ি, ট্রেন, জাহাজ ও উড়োজাহাজের নিঃসরিত মোট গ্যাসের প্রায় সমান।

উন্নয়নশীল দেশগুলো অনেকদিন ধরেই বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর অনিয়ন্ত্রিত শিল্পায়নকে দায়ী করে আসছে। দূষণের ভয়াবহ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দূষণকারী দেশগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের দাবিও জানিয়ে আসছে তারা।

চ্যাথম হাউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, দূষণের মতো মাংস খাওয়ার দিক দিয়েও বিশ্বে এগিয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির প্রত্যেক নাগরিক প্রতিদিন গড়ে ২৫০ গ্রাম মাংস খান। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে যা প্রয়োজনের তুলনায় প্রায় চারগুণ। মাংস ভোজনে যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে খুব একটা পিছিয়ে নেই ইউরোপ বা দক্ষিণ আমেরিকার গবাদিপশু উৎপাদনকারী দেশগুলো। আর ভারতীয়রা প্রতিদিন গড়ে ১০ গ্রামেরও কম মাংস খান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পোন্নত দেশে মাংস ভোজনের হার বেশি হলেও সম্পদ ও খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে সাধারণ একটি আন্তঃসম্পর্ক রয়েছে। উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর মানুষের আয় যতো বাড়ছে, তাদের মাংস ভোজনের হারও বাড়ছে। আর ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে মাংস ভোজনের হার এখনকার তুলনায় ৭৫ শতাংশেরও বেশি বেড়ে যেতে পারে।

আর অধিকাংশ দেশই এ বিষয়টিতে এখন পর্যন্ত  কোনো উদ্যোগ নেয়নি। প্যারিসের জলবায়ু সম্মেলন সামনে রেখে গত ২১ অক্টোবর পর্যন্ত যে ১২০টি দেশ পরিকল্পনা জমা দিয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ২১টিতে গবাদিপশু খাতের কার্বন নিঃসরণ কমানোর অঙ্গীকারের কথা উল্লেক করা হয়েছে।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, সরকারগুলো ভোটারদের ব্যক্তিগত পছন্দে হস্তক্ষেপ করতে ভয় পায়। আর জলবায়ু পরিবর্তনের সঙ্গে খাদ্যাভ্যাসের সম্পর্ক নিয়ে জনগণের মধ্যে সচেতনতা না থাকায় এ নিয়ে সরকারগুলোও তেমন চাপে নেই। এ পরিস্থিতিতে প্রথমত জনসচেতনা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিয়েছে চ্যাথম হাউজ।

চারটি দেশে ওই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। সরকারের দিক থেকে খাদ্যাভ্যাস সংক্রান্ত নতুন নীতি করা হলে এবং তাতে যথেষ্ট যুক্তি থাকলে তা মানতে জনগণের আপত্তি নেই।

এসআইএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।