পাকিস্তানের জনগণের চেয়েও কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল সাকা-মুজাহিদ?


প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২৪ নভেম্বর ২০১৫

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা নিয়ে পাকিস্তান সরকারের ক্রোধকে `দ্বৈতনীতি` হিসেবে মন্তব্য করে এর কঠোর সমালোচনা করেছেন দেশটির মানবাধিকারকর্মী ও আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর। সোমবার দেশটির সুপ্রিম কোর্টের সামনে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন। পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক ডন মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।

রোববার রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এর পর পরই এক বিবৃতিতে উদ্বেগের কথা জানায় পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, এর মাধ্যমে (পাক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্বেগ) বোঝা যাচ্ছে, নিজেদের নাগরিকদের চেয়ে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় সদস্যদের জন্য পাকিস্তান সরকারের অতিরিক্ত ভালবাসা রয়েছে।  

পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বারের প্রথম নারী সভাপতি আসমা জাহাঙ্গীর আরো বলেন, পাকিস্তানের সামরিক আদালতে বা সৌদি আরবে অন্যায়ভাবে কারো ফাঁসি কার্যকর হলে সরকারকে উদ্বেগ প্রকাশ করতে দেখা যায় না। আমরা আশা করি এসব ক্ষেত্রেও ভবিষ্যতে সমান উদ্বেগ জানাবে পাকিস্তান সরকার।  

তবে বিরোধীদলীয় সদস্যদের ফাঁসির মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে আরো বেশি মাত্রায় বিভাজন তৈরি হবে বলে মনে করেন পাকিস্তানের এই মানবাধিকার কর্মী। তিনি বলেন, সকল মানবাধিকার কর্মীরা মনে করেন বাংলাদেশ তাদের (সাকা ও মুজাহিদ) ক্ষেত্রে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি।   

তিনি আরো বলেন, সরকার এই আচরণের মাধ্যমে এটাই প্রমাণ করল যে, বাংলাদেশে যাদের ফাঁসি দেওয়া হয়েছে তারা আসলে ছিল রাজনৈতিক চর এবং তারা পাকিস্তানের স্বার্থের জন্য কাজ করেছিল। আসমা জাহাঙ্গীর প্রশ্ন করে বলেন, এই দুই বাংলাদেশি কি পাকিস্তানের জনগণের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রশ্নে উত্তর যদি হ্যাঁ হয় তবে পাকিস্তান সরকারকে এর ব্যাখ্যা দেয়া উচিত।

উল্লেখ্য, আসমা জাহাঙ্গীরের বাবা মালিক গোলাম জিলানী পশ্চিম পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতারের পর তার মুক্তির দাবিতে জেনারেল ইয়াহিয়া খানের কাছে একটি খোলা চিঠি লেখেন তিনি। আর এই চিঠি লেখার কারণে সে সময় তাকে কারাবরণ করতে হয়।

স্বাধীনতা যুদ্ধে বাঙালির পাশে দাঁড়ানোর জন্য ২০১৩ সালে ১৩ বিদেশি বন্ধুকে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়। ওই বছর ২৪ মার্চ ঢাকায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে বাবার পক্ষে সম্মাননা নেন আসমা জাহাঙ্গীর।

আসমা জাহাঙ্গীর বলেন, আমরা মৃত্যুদণ্ড এবং প্রশ্নবিদ্ধ ট্রাইব্যুনালের বিপক্ষে, সেটা পাকিস্তান, বাংলাদেশ অথবা পৃথিবীর যে দেশেই হোক না কেন।  আমরা জানি, বাংলাদেশের দুই রাজনীতিকের বিচারের ট্রাইব্যুনাল ত্রুটিপূর্ণ ছিল। কিন্তু এ নিয়ে পাকিস্তানের ভূমিকা পরিষ্কার নয়।

এসআইএস/এআরএস/এএইচ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।