নওগাঁয় আমনের বাম্পার ফলন হলেও দাম কম
মাঠে মাঠে আমন ধানের সোনালী রঙে ভরে গেছে কৃষকের ক্ষেত। ফলন ভালো হওয়ায় নওগাঁয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক আনন্দ লক্ষ্য করা গেছে। নতুন ধান ঘরে তুলতে কাটা এবং মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণি।
সেই সঙ্গে নতুন ধানে শুরু হয়েছে নবান্ন উৎসবের আমেজ। ভালো ফলনের সঙ্গে ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন কৃষকরা।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবার আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। যথা সময়ে ধান ঘরে তুলতে পারবেন কৃষকরা। ভালো ফলনের আশা করলে বাজারে তেমন ভালো দাম নেই বলে জানা গেছে। বাজারে নতুন ধানের দাম তুলনামূলক কম। তবে মাস খানেক পর ধান বিক্রি করতে পারলে দাম কিছুটা বেশি পাওয়া যাবে এমনটাই আশা করছেন কৃষকরা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নওগাঁর ১১টি উপজেলায় আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২ লাখ তিন হাজার ৭২০ হেক্টর জমিতে। আবাদ দুই লাখ ৫ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কথা থাকলেও বন্যায় তিনটি উপজেলায় ফসলের কিছুটা ক্ষতি হয়। ফলে এক লাখ ৯৩ হাজার ৭১৩ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। গত বছর ২ লাখ চার হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছিল।
মান্দা উপজেলার দাশপাড়া গ্রামের কৃষক আবুল কাশেম জাগো নিউজকে জানান, তিনি চার বিঘা জমিতে মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ ও চিকন জাতের জিরাশাইল ধান দুই বিঘা জমিতে আবাদ করেছেন। শ্রমিকের মজুরি, হাল চাষ, সার ও কীটনাশকসহ বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার টাকার মতো। মোটা জাতের ধান বিঘা প্রতি ফলন হয়েছে ২০ থেকে ২২ মণ। এছাড়া ফসল একটু খারাপ হলে ১৫ থেকে ১৬ মণের মতো হয়।
একই গ্রামে কৃষক আনিছার জাগো নিউজকে জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে লাল স্বর্ণা জাতের ধানের আবাদ করেছেন। ফসলে তেমন রোগ বালাই দেখা না দেয়ায় ফলনও ভালো হয়েছে। এছাড়া সময়মতো বৃষ্টি হওয়ায় খরচটাও একটু কম হয়েছে। গ্রামের পাশে জোকাহাট বাজারে স্বর্ণা শুকনা ধানের দাম ৫৫০ টাকা থেকে ৫৮০ টাকা বলে জানান তিনি।
মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাসিয়া গ্রামের কৃষক সামছুল হক জাগো নিউজকে জানান, এবার পাঁচ বিঘা জমিতে মোটা জাতের স্বর্ণা-৫ ও গুটি স্বর্ণার আবাদ করেছেন তিনি। আবাদে বিঘা প্রতি উৎপাদন খরচ হয়েছেপ্রায় ছয় হাজার টাকার মতো। আর বিঘা প্রতি ফলন পেয়েছেন ১৮ থেকে ২০ মণ।
এছাড়া সাপাহার উপজেলার বৌকণ্টপুর গ্রামের কৃষক কামরুজ্জামান জাগো নিউজকে জানান, চার বিঘা জমিতে গুটি স্বর্ণা ও স্বর্ণা-৭ জাতের ধানের আবাদ করেছেন। বিঘা প্রতি ২০ মণের মতো ফলন হয়েছে। ধান নতুন হওয়ায় বাজারে দাম একটু কম। সংসারের কাজে খরচের জন্য আশ্রন্দ বাজারে ৫৫০ টাকা দরে দুই মণ ধান বিক্রি করেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে জানান, এ মৌসুমে আমন ধানের কি পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে এবং গুদামে মজুদ হবে সে তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে গুদামে মজুদ চাল উৎপাদনের তথ্য পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন।
তিনি জানান, গত বছর (২০১৪ সালে) ৩২ টাকা কেজি দরে ২০ হাজার ৮৯ মেট্রিকটন আমনের চাল মজুদ করা হয়েছিল। কিন্তু শ্রীলঙ্কায় চাল রফতানি হওয়ায় আমন মৌসুমে আরো ছয় হাজার মেট্রিকটন বেশি চাল গুদামে মজুদ করা হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক সত্যব্রত সাহা জাগো নিউজকে জানান, এ বছর আমনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার কথা থাকলেও বন্যার কারণে কিছুটা কম হয়েছে। কৃষকরা ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। মোটা জাতের (গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ ও ৭, বিআর-১১, সুমন) ধানের ফলন ভালো হয়েছে। চিকন জাতের জিরাশাইল ও সুগন্ধী ধান না পাকায় কাটতে একটু সময় লাগবে। এছাড়া মাঠে যে পরিমাণ ফসল আছে কৃষকের ঘরে উঠতে আগামী দুই সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে বলে জানান তিনি।
এমজেড/এমএস