ইঞ্জিন বিকলের পর বিশ্বজুড়ে বোয়িং ৭৭৭ বিমানের উড্ডয়ন বন্ধ
চলতি সপ্তাহে ইউনাইটেড এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৭৭ মডেলের একটি যাত্রীবাহী বিমানের ইঞ্জিন মাঝআকাশে ভেঙে পড়ায় একই মডেলের বিমানগুলোর উড্ডয়ন বন্ধ করে দিয়েছে বিভিন্ন দেশ। গত শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভার বিমানবন্দরের ওই ঘটনায় ইতোমধ্যে তদন্ত শুরু করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
জানা যায়, ২৩১ যাত্রী এবং ১০ জন ক্রু নিয়ে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরেই বিমানটির ডান দিকের ইঞ্জিনে হঠাৎ আগুন ধরে যায় এবং সেটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে।
এর পরপরই বিমানটি জরুরিভাবে ডেনভার বিমানবন্দরে ফিরে আসতে বাধ্য হয়। সৌভাগ্যবশত এ ঘটনায় কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে বিমানটি থেকে ছিটকে পড়া টুকরোগুলো আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় বিমান প্রশাসন বা ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (এফএএ) তথ্যমতে, ইউনাইটেড এয়ারলাইনসই দেশটির একমাত্র বিমান সংস্থা যারা বোয়িং ৭৭৭ মডেলের বিমান ব্যবহার করছে। এর বাইরে জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়া একই মডেলের বিমান চালিয়ে থাকে।
তবে শনিবারের ঘটনার পর ইউনাইটেড, কোরিয়ান এয়ার এবং জাপানের প্রধান দু’টি বিমান সংস্থা নিশ্চিত করেছে, তারা তাদের বহরে থাকা বোয়িং ৭৭৭ মডেলের সবগুলো বিমানের উড্ডয়ন স্থগিত রেখেছে।
মার্কিন বিমান নির্মাতা সংস্থা বোয়িং নিজেই সতর্ক করেছে, এফএএ’র তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই মডেলের বিমানগুলোর উড্ডয়ন যেন বন্ধ রাখা হয়।
এক বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, এনটিএসবির (যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবহন সুরক্ষা বোর্ড) তদন্ত চলাকালে প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি ৪০০০ ইঞ্জিনে (পিডব্লিউ৪০০০) চালিত চালু ৬৯টি এবং সংরক্ষিত ৫৯টি ৭৭৭ মডেলের বিমানের কার্যক্রম স্থগিত রাখার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
জাপান এয়ারলাইনস এবং অল নিপ্পন এয়ারওয়েজ জানিয়েছে, তারা যথাক্রমে ১৩টি এবং ১৯টি পিডব্লিউ৪০০০ ইঞ্জিনধারী বিমানের উড্ডয়ন বাতিল করেছে। তবে বিকল্প বিমান ব্যবহার করে ফ্লাইটগুলো চালু রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ইউনাইটেড এয়ারলাইনস জানিয়েছে, তারা স্বেচ্ছায় বোয়িং ৭৭ মডেলের ২৪টি বিমানের উড্ডয়ন স্থগিত করেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, আপাতত ওই মডেলের বিমানের উড্ডয়ন নিষিদ্ধ করার মতো কোনো পরিকল্পনা তাদের নেই। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে কর্তৃপক্ষ।
তবে দেশটির রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা কোরিয়ান এয়ার জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘটনার পরপরই তারা বোয়িং ৭৭৭ মডেলের ছয়টি বিমানেরই উড্ডয়ন বন্ধ করে দিয়েছে।
এফএএ জানিয়েছে, গত শনিবারের ঘটনায় প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি ৪০০০ ইঞ্জিনযুক্ত বোয়িং ৭৭৭ বিমানগুলো পরীক্ষা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির ব্যবস্থাপক স্টিভ ডিকসন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত সব তথ্য পর্যালোচনা করছি। প্রাথমিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ওই মডেলের ইঞ্জিনে যে বিশেষ ধরনের পাখা ব্যবহৃত হয়, সেগুলোর ব্লেড আরও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
এছাড়া, বোয়িং এবং প্র্যাট অ্যান্ড হুইটনি কর্মকর্তাদের সঙ্গেও দেখা করার কথা রয়েছে এফএএ প্রশাসনের।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি
কেএএ/জিকেএস