নাটোরে চার দলের প্রার্থীই প্রচারণায় ব্যস্ত


প্রকাশিত: ১০:৩৯ এএম, ২০ নভেম্বর ২০১৫

পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ার অনেক আগে থেকেই নাটোরে নির্বাচনী হওয়া গায়ে লাগিয়ে মাঠ গরম করতে নেমে পড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। গা গরম করতে শুরু করেছে দৌড়ঝাঁপ। মাঠে নির্বাচনী প্রচারণার সঙ্গে সঙ্গে দলীয় সমর্থনের আশায় মাঠের বাইরেও দলীয় নেতা, এমপি, মন্ত্রী ও প্রভাবশালীদের কাছে ধর্ণা দিচ্ছেন প্রার্থীরা।

দিনের আলোতে নির্বাচনী প্রচারণা চলছে মাঠ পর্যায়ে আর দিনের আলো নিভে যেতে শুরু হতেই প্রার্থীরা ধর্ণা দিচ্ছেন দলীয় কার্যালয়ের সামনে। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা) এবং জামায়াতে ইসলামীর বেশ কয়েকজন প্রার্থী তাদের নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রায় সবকটি দলেই রয়েছে একাধিক প্রার্থী। সব প্রার্থীকেই দেখা যাচ্ছে ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনের পাশাপাশি স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও লেখা পোস্ট করে প্রচারণা চালাতে। হঠাৎ করেই দ্বিধায় পড়ে গেছে প্রার্থীরা। তারা কারণ হিসেবে দলীয় ব্যানারে নির্বাচনের ঘোষণার কথাই বলছেন। এ কারণেই প্রার্থীরা এখন নিজেদের প্রতি নিজেদের আস্থা হারিয়ে নির্ভরশীল হতে যাচ্ছেন দলীয় নেতাদের ওপর। তবে কেউ কেউ মনে করছেন এভাবে নিজেকে বিক্রি করে দিয়ে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন না করাই শ্রেয়। তবে কেউ কেউ আবার আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার সুযোগ হিসেবে মনে করছেন এটাকে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির সমর্থন নিতে এখন অনেককেই ধর্না দিতে দেখা যাচ্ছে দলের সভাপতি, সম্পাদকসহ বিভিন্ন নেতাদের কাছে।

অন্য দলগুলোর প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই একাজে। এদিকে নাটোর পৌর এলাকার মানুষ মনে করছেন এবার নির্বাচন হবে শিমুল ও দুলুর মধ্যে। এরই মধ্যে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে এ নিয়ে। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুল এবং জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক উপ-মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ইচ্ছাই সারা জেলাতে গুরুত্ব পাবে বলে অনেকে মনে করছেন।

নাটোর জেলায় মোট ৮টি পৌরসভার মধ্যে রয়েছে নলডাঙ্গা, গোপালপুর, গুরুদাসপুর, সিংড়া, বড়াইগ্রাম, বনপাড়া, বাগাতিপাড়া ও নাটোর পৌরসভা। এরমধ্যে দুটি পৌরসভা বনপাড়া ও বাগাতিপাড়া পৌরসভায় নির্বাচনের মেয়াদ পূর্ণ না হওয়ায় নির্বাচন হবে না। নির্বাচন হবে মোট ছয়টি পৌরসভায়। এবারের নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার হওয়ার কারণে দলীয় বিরোধের আশঙ্কা করছেন জনগণ। ভোটারদের মধ্যে তেমন কোনো উৎসাহ দেখা না গেলেও প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছে উৎসাহ উদ্দীপনা। এবার জেলার অন্য পৌরসভার চেয়ে নাটোর পৌরসভার নির্বাচন নিয়ে বেশ আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে।

সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের পরিচয়ে নির্বাচনী প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দলের অন্তত প্রায় এক ডজন নেতা। এর মধ্যে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আলোচনায় আছেন সাতজন। তারা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি উমা চৌধুরী জলি, অপর সহ-সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাশিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ শফিকুল ইসলাম শিমুলের নিকট আত্মীয় সাজেদুল আলম খান চৌধুরী বুড়া, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল।

এদিকে বিএনপির দলীয় প্রার্থী হওয়ার আশায় রয়েছেন পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান মেয়র শেখ এমদাদুল হক আল মামুন, সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী শাহ আলম।

জামায়াতের প্রার্থীতা পেতে যুদ্ধ করছেন পৌর জামায়াতের সভাপতি আতিকুল ইসলাম রাসেল।

মেয়র পদে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী উমা চৌধুরী জলি বলেন, জেলার বিশিষ্ট রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান তিনি। তার বাবা নাটোরের রাজনীতিক অঙ্গনের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি প্রয়াত শংকর গোবিন্দ চৌধুরী ও মা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত অনিমা চৌধুরী। তিনিও একাগ্রতার সঙ্গে দলের কাজ করে যাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, এলাকার উন্নয়নসহ মানুষের জন্য রাজনীতি করছেন তিনি। তার বাবা দু`বারের পৌর মেয়র ও দু`বার সংসদ সদস্য ছিলেন। মা-বাবার মতো তিনিও নিঃস্বার্থভাবে মানুষের সেবা করে যেতে চান।

সাবেক মেয়র কামরুল ইসলাম মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক ও পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি।

তিনি জানান, গত নির্বাচনে দলীয় কোন্দলের কারণে পরাজিত হয়েছেন তিনি। এবার মনোনয়ন পেলে অবশ্যই জয়লাভ করবেন।

আওয়ামী লীগের দলীয় টিকিটে নির্বাচন করতে চাওয়া আরেক প্রার্থী সাজেদুল আলম খান চৌধুরী বুড়া গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। এর আগে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দুই বার মেয়র পদে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শিমুলের নিকট আত্মীয় হওয়ায় তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি বলে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

তবে তিনি বলেন, আত্মীয় হিসেবে নয় আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে মনোনয়ন চাইবেন। দলীয় ভাবে সিদ্ধান্ত দিলেই তিনি নির্বাচন করবেন, না দিলে তিনি দলের প্রার্থীর জন্য কাজ করবেন। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচন করবেন না বলেও জানান তিনি।

এদিকে জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বাশীরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দলের স্থানীয় শীর্ষ নেতারা তাকে পৌরসভার মেয়র পদে নির্বাচন করার জন্য বলেছেন। তাই তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে আছেন। নির্বাচন করতে তিনি ইতোমধ্যেই ভোটারদের কাছে যেতে শুরু করেছেন। ভোটাররা তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে নির্বাচন করতে বলেছেন। তিনি শতভাগ আশাবাদী দলীয় সমর্থন পেলে নির্বাচনে জয়লাভ করবেন।

অন্যদিকে সমর্থন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগ নেতা চিত্তরঞ্জন সাহা বলেন, দুর্দিনেও দলের পাশে ছিলেন তিনি। প্রয়াত নেতা শংকর গোবিন্দ চৌধুরীর পাশে থেকে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে অংশ নিয়েছেন। এবার মেয়র পদে প্রার্থী হতে চান।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোস্তাক আলী মুকুল জানান, বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে পরপর দুইবার বিপুল ভোটে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। তাই দল থেকে মেয়র পদে তাকে সমর্থন দেওয়া হবে বলে তিনি আশাবাদি।

তবে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তে বিএনপির দুই সম্ভাব্য প্রার্থী বর্তমান মেয়র ও পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শেখ এমদাদুল হক আল মামুন এবং সাবেক মেয়র ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী শাহ আলমের প্রচারণা অনেকটা থমকে গেছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কি-না এ নিয়ে সন্দিহান এই দুই নেতা।

তারা বলেন, এই সরকারের আমলে সবক`টি নির্বাচন যেভাবে হয়েছে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে নতুন করে স্থানীয় সরকার নির্বাচন। আর তাদের মন মতোই পৌর নির্বাচন হবে বলে আশঙ্কা রয়েছে। সবশেষে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের বিষয়টি দলের ওপর নির্ভর করছে বলে জানান তারা।

জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল মালেক শেখ বলেন, দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সিদ্ধান্ত তৃণমূলের রাজনীতিতে প্রভাব ফেলেছে। আগ্রহী নেতাকর্মীরা সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। সংসদীয় কমিটির আদলে জেলা পর্যায়ে গঠিত (মনোনয়ন বোর্ড) কমিটির সিদ্ধান্তে দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন করা হবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, শফিকুল ইসলাম শিমুল শুধু সংসদ সদস্য নন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও রয়েছেন। তাই সাংগঠনিকভাবে তার সিদ্ধান্তই সবার উপরে।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল হক জানান, তারা আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ সরকারকে দেখিয়ে দিতে চান বিএনপির সমর্থন কতটা। তবে সরকার যদি নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করতে দেয়।

তিনি আরো বলেন, সরকার একদলীয় শাসন ব্যবস্থা নিশ্চিতের জন্য হঠাৎ করেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয়ভাবে করার ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির হাইকমান্ড যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই করে দলের সমর্থন দেওয়া হবে।

জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মজিবর রহমান সেন্টু জানান, নাটোরে মহাজোটের কোনো অস্তিত্ব নেই। তাই আগামীতে স্থানীয় সরকার পর্যায়ের সব নির্বাচনে জাপা এককভাবে অংশ নেবে। যে কয়জন পৌর নির্বাচেন প্রার্থী হতে ইচ্ছুক তাদের নিয়ে বসা হবে অল্প সময়ের মধ্যেই। তবে নির্বাচন নিয়ে এখনও তেমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। উচ্চ পর্যায় থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সেটাই পালন করা হবে।

জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক ইউনুস আলী দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের সিদ্ধান্তের পেছনে সরকারের কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে বলে মনে করছেন।

তিনি জানান, পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে জামায়াত আসন্ন নির্বাচনে অংশ নেবে এবং তাদের প্রার্থী নির্বাচনে জয়লাভ করবেই।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।