ঋণ কি উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর দুর্ভাবনার কারণ হচ্ছে?
দেশের ঋণ নিয়ে বর্তমান অর্থমন্ত্রীদের কী পরিমাণ মাথা ঘামাতে হচ্ছে, তা দেখলে হয়তো পূর্বসূরীরা চমকে উঠবেন। তবে সেই ঋণ কতটা সস্তায় পাওয়া যাচ্ছে, তা দেখলেও সমান আশ্চর্য হওয়ার কথা! অনেক দেশেই সরকারি ঋণের সুদের হার প্রবৃদ্ধি হারের নিচে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। অন্য কথায়, কিছু অর্থনীতিবিদ যেমন বলেছেন, ‘প্রবৃদ্ধি সংশোধিত সুদের হার’ নেতিবাচক হবে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের ধারণা, ২০২৩ সালে সব ধনী দেশেই এটি ঘটবে। এরর কারণেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ অলিভিয়ার ব্লাঞ্চার্ডের মতো কিছু বিশেষজ্ঞ আমেরিকা, জাপান এবং ইউরো সদস্যদের মতো দেশগুলোর আর্থিক সীমা পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছেন।
গত মাসে ভারতের অশোক বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ব্লাঞ্চার্ড বলেছিলেন, ‘ঋণ-থেকে-জিডিপি অনুপাতের কিছু ম্যাজিক সংখ্যার দিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত নয়। এই সংখ্যাগুলো অতীতে প্রতিক্রিয়াশীল ছিল, এখন আরও বেশি হবে।’
আর্থিক হিসাব শুধু ধনী দেশগুলোতেই ওলট-পালট দেখাচ্ছে না। বিশ্বের ৬০টি বৃহত্তম উদীয়মান অর্থনীতির মধ্যে ৫৩টিতেই সুদের হার প্রবৃদ্ধি হারের চেয়ে কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এসঅ্যান্ডপির ধারণা, ২০২৩ সালে ‘প্রবৃদ্ধি সংশোধিত সুদের হার’ ভারতে মাইনাস ৩ দশমিক ৬ শতাংশ, চীনে মাইনাস ৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আর্জেন্টিনায় মাইনাস ৩৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে।
এটা থেকে একটা প্রশ্ন অবশ্যই উঠছে: উদীয়মান অর্থনীতিগুলোর কি তাদের আর্থিক সীমা পুনর্বিবেচনা করা উচিত? ইতোমধ্যে অবশ্য অনেকেই সেটি করে ফেলেছে।
এ মাসে ভারতের বাজেটে চলতি অর্থবছরে জিডিপির ৯ দশমিক ৫ শতাংশ ঘাটতি ধারণা হয়েছে (জেপি মরগান চেজের হিসাবে, সামগ্রিক ঘাটতি জিডিপির ১৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে)। সরকারের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টার সবশেষ অর্থনৈতিক সমীক্ষায় উল্লেখ করা হয়েছে, ভারতে সুদের হার প্রবৃদ্ধি হারের নিচে নেমেছে ‘আদর্শ অনুসারে, ব্যতিক্রমীভাবে নয়’।
ব্লাঞ্চার্ডের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, সমীক্ষাটি নিম্নমুখী প্রবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ঋণ ও আর্থিক ব্যয়ের বিষয়ে সরকারকে আরও স্বচ্ছন্দ হওয়ার জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।
উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে আর্থিক হিসাব স্বস্তিদায়ক হলেও অর্থমন্ত্রীদের অবশ্যই এর ব্যতিক্রম নিয়েও চিন্তা করতে হবে। সুদের হার যখন প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম হয়, তখন বাজেটের হিসাব কিছুটা জটিল হয়ে পড়ে। বাজেট ঘাটতি খুব বেশি না হওয়া পর্যন্ত সরকার ক্রমাগত অতিরিক্ত ব্যয় করেও অর্থনীতির আকারের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে ঋণ স্থিতিশীল রাখতে পারে।
তাদের ঘাটতি (সুদ পরিশোধ বাদে) যদি এই সীমা অস্থায়ীভাবে অতিক্রম করে, তাহলে ঋণের অনুপাত অস্থায়ীভাবে বৃদ্ধি পাবে। তবে এটি ধীরে ধীরে আবারও আগের স্তরে নেমে আসবে। ঘাটতি যদি স্থায়ীভাবে উচ্চতর পর্যায়ে চলে যায়, তাহলে ঋণের অনুপাতও উচ্চ পর্যায়ে গিয়ে স্থির হবে। তবে এটি তুষারগোলকের (স্নোবল) মতো ক্রমেই বড় হবে না, কারণ যৌগিক সুদের শক্তি যৌগিক প্রবৃদ্ধির শক্তির মাধ্যমে ভারসাম্যে থাকে।
আর্থিক এই হিসাবটি অদ্ভুত মনে হতে পারে, তবে এটি নতুন নয়। আইএমএফের পাওলো মওরো এবং জিং ঝৌয়ের মতে, যতদূর দেখা যায়, ৭৫ শতাংশ সময় জুড়েই উদীয়মান অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি সংশোধিত সুদের হার শূন্যের নিচে ছিল।
অলিভিয়ার ব্লাঞ্চার্ড মনে করেন, ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর নীতিনির্ধারকদের নিজেদের কাছে দুটি শক্ত প্রশ্ন করা উচিত: সম্ভাব্য সংকটময় পরিস্থিতিতে প্রবৃদ্ধি হারের তুলনায় সুদের হার কতটা ওপরে উঠতে পারে? এবং প্রতিক্রিয়া বাজেট কতটা শক্ত হতে পারে? এগুলোর উত্তর একটি দেশ স্বাচ্ছন্দ্যে কতটা ঋণ রাখতে পারবে তার মোটামুটি ধারণা দেয়।
এ অর্থনীতিবিদের বিশ্বাস, এই অনুপাত উন্নত দেশগুলোর তুলনায় উদীয়মান অর্থনীতিতে কম হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাদের জন্য রাজস্ব আদায় কঠিন হতে পারে এবং সুদের হার সম্ভাব্য সর্বোচ্চ পর্যায়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।
সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
কেএএ/এমকেএইচ