মিটার না দেখেই দেয়া হচ্ছে বিলের কাগজ!
বিদ্যুৎ অফিসের অনিয়মে অতিরিক্তি বিদ্যুৎ বিলে ভোগান্তি পোহাতে হয় গ্রাহকদের। গত সেপ্টেম্বর এবং অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে নওগাঁয় অনেক গ্রাহক এ সমস্যার শিকার হয়েছেন। এ ঘটনায় গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিল রিডার মিটারে না এসে ঘরে বসে বিদ্যুৎ বিল নিজের ইচ্ছেমতো লেখায় এখন এ ভোগান্তি। বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভলোপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি) ও নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
সরজমিনে এলাকায় গিয়ে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিলের কাগজে লেখা ইউনিটের সঙ্গে মিটারের ইউনিটের কোনো মিল পাওয়া যায় না। যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় তার চেয়ে বিলের টাকার পরিমাণ অনেক সময় বেশি লেখা থাকে। এছাড়া বিদ্যুৎ বিলের টাকা পরিশোধ করা হলেও লাইনম্যান মিটার থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনার উপক্রম হয়েছে। আদৌ কোনো বিল রিডার গ্রামে গ্রাহকদের মিটার দেখে বিল লিখেন না বলেও জানা যায়।
নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁপানিয়া ইউনিয়নের চক-বালুভরা গ্রামের সাখাওয়াত হোসেন জাগো নিউজকে জানান, তিনি বাড়িতে পাঁচটি বাল্ব, তিনটি ফ্যান এবং একটি কালার টেলিভিশন চালান। গত সেপ্টেম্বর মাসে এক হাজার টাকা এবং অক্টোবর মাসে ৭৩৮ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
গ্রাহক জহুরুল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, গত দুই মাসে নিয়মিত চারটি বাল্ব এবং তিনটি ফ্যান চালিয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসে ৪১২ টাকা এবং একটু শীত পড়ায় অক্টোবর মাসে ৩৭৫ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে।
তিনি আরো জানান, জানুয়ারি মাসের বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা হলেও নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে মার্চ মাসে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য লাইনম্যান এসেছিল। বিল পরিশোধের কাগজ দেখানো হলে তারা বলেন এটা ভুয়া কাগজ। পরে অবশ্য লাইনম্যানরা ভুল স্বীকার করে বলেন ব্যাংকে বিল পরিশোধের সময় কম্পিউটার অপারেটর এরকম ভুল করে থাকেন।
শহরের কুমাইগাড়ী মহল্লার (বিপিডিবি) গ্রাহক ডিজিটাল মিটার ব্যবহৃত আনিছুর রহমান সূর্য জাগাে নিউজকে জানান, বাড়িতে তিনটি বাল্ব, একটি ফ্যান, একটি কালার টেলিভিশন, ফ্রিজ ও মাঝে মধ্যে রাইস কুকার চালান। গত সেপ্টেম্বর মাসে ৮শ টাকা এবং অক্টোবর মাসে এক হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। বিল রিডাররা মিটার দেখে ইউনিটের পরিমাণ লিখেন না। ফলে অফিসে বসে কম্পিউটারে বিদ্যুৎ বিলের কাগজে নিজেদের ইচ্ছেমতো বিল লেখায় ভোগান্তি পোহাতে হয়।
এছাড়া মান্দা উপজেলার ভারশোঁ গ্রামের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহক জানবক্স সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৬শ টাকা এবং অক্টোবর মাসে ৩ হাজার ৭শ টাকা, বালিচ গ্রামের ছমির মণ্ডলের সেপ্টেম্বর মাসে ১ হাজার ৪শ টাকা এবং অক্টোবর মাসে ১ হাজার ২শ টাকা বিদ্যুৎ বিল এসেছে। বেশি ভোগান্তি পোহাতে হয় ডিসেম্বর মাসে।
বিল রিডাররা মিটার দেখে ইউনিট না লেখায় সারা বছরের ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ইউনিটের অবশিষ্ট ইউনিটগুলো গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিলের কাগজে তুলে দেয়া হয়। হঠাৎ করে বেশি টাকা বিদ্যুৎ বিল আসায় গ্রাহকদের চোখ কপালে উঠে যায়। নিয়ামতপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে জানানো হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও জানান।
নওগাঁয় পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন বিল রিডার জানান, আগে অফিসে বসে অনুমানের উপর বিদ্যুৎ বিল লেখা হতো। এখন বিল রিডাররা প্রতি মাসে প্রতিটা মিটার দেখে ইউনিট লিখেন। বিল নিয়ে গ্রাহকদের সমস্যা না হওয়ারই কথা।
নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার এনামুল হক প্রামাণিক জানান, গ্রাহকদের কাছ থেকে এরকম কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে কেউ অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আরো জানান, গ্রাহকদের সুবিধার জন্য সরকার থেকে একটা কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে বিল রিডাররা প্রতি মাসে গ্রাহকদের বাড়িতে গিয়ে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ ইউনিটের পরিমাণ লিখে দিবেন। যেটা স্বল্প পরিমাণ গ্রাহককে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে সব গ্রাহককে দেয়া হবে।
বিপিডিবি, নওগাঁ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী শংকর কুমার দেব জাগো নিউজকে জানান, প্রতি মাসে মিটার দেখে বিল রিডারদের ইউনিট লিখার নিয়ম থাকলেও সেটা অনেক সময় সম্ভব হয় না। সে কারণে অনুমান করে বিদ্যুৎ বিলের কাগজে ইউনিট লিখা হয়। এতে কম বেশি হতে পারে। কোনো গ্রাহকের এ ধরনের সমস্যা হয়ে থাকলে তারা অফিসে আসলে বিলের কাগজ ঠিক করে দেয়া হয় বলে জানান।
এমজেড/আরআইপি