আর্জেন্টিনায় করোনা মোকাবিলায় বাড়তি ট্যাক্স দিচ্ছেন ধনীরা
মহামারি মোকাবেলায় সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিদের ওপর বাড়তি কর আরোপ করেছে আর্জেন্টিনা। সম্প্রতি নতুন এই আইন কার্যকর হয়েছে। ধনীদের কাছ থেকে নেয়া বাড়তি এই কর করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় দরকারি চিকিৎসা ও ত্রাণ সামগ্রীর জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানানো হয়েছে। খবর বিবিসির।
দেশটির যেসব ধনী ব্যক্তিদের আর্জেন্টাইন মুদ্রায় ২শ মিলিয়ন পেসো সমপরিমাণ সম্পত্তি রয়েছে তাদের ওপর এই নতুন কর আরোপ করা হয়েছে। তাদের দেশের মোট সম্পদের ওপর ৩ শতাংশ এবং দেশের বাইরের সম্পদের ওপর ৫ শতাংশ কর আরোপ করতে হবে। এক্ষেত্রে দেশটির করদাতাদের ০.৮ শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজারের মতো ব্যক্তি এর আওতায় পড়বেন।
আর্জেন্টিনা প্রশাসনের আশা তারা ধনীদের এই কর থেকে ৩শ কোটি ডলার সংগ্রহ করতে পারবেন। যে পরিমাণ অর্থ জমা পরবে তার ২০ শতাংশ করে ব্যবহার করা হবে চিকিৎসা ও ত্রাণ সামগ্রী ক্রয়, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের সহায়তায় এবং শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদানে।
ধনীদের ওপর আরোপ করা নতুন এই করের নাম দেয়া হয়েছে ‘মিলিয়নিয়ার ট্যাক্স’। দেশটির সংসদে গত ডিসেম্বরে নতুন কর বিষয়ক একটি বিলের পক্ষে ৪২ জন ভোট দিয়েছে। আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে ২৬টি।
দেশটির মধ্য-বামপন্থী প্রেসিডেন্ট আলবার্তো ফার্নান্দেজ নতুন এই কর আরোপের ঘোষণা দেন। কিন্তু বিরোধী দল এ বিষয়ে সমালোচনা করে বলেছে, এভাবে ধনীদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এদিকে আর্জেন্টিনার রুরাল সোসাইটি বলছে, ধনীদের ওপর বাড়তি এই কর আরোপ হয়তো স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই আর্জেন্টিনা বেশ খারাপ পরিস্থিতি পার করছে। দেশটি ইতোমধ্যেই দারিদ্র সীমার ওপরে অবস্থান করছে। ২০১৮ সাল থেকেই আর্জেন্টিনায় অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। তার উপর করোনা মহামারি মোকাবিলায় লকডাউন আরোপ করার পর দেশটিতে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার আরও অবনতি ঘটেছে। দেশটির ৪০ শতাংশ জনসংখ্যা দারিদ্র সীমার নিচে বাস করছে। অপরদিকে দেশটিতে বেকারত্বের হার ১১ শতাংশ।
নতুন এই করের ব্যাপারে যারা বিরোধিতা করছেন তারা বলছেন, এতে বৈদেশিক বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত হবেন। গত নভেম্বরে যখন বাড়তি কর আরোপের প্রস্তাব তোলা হয় তখন এই উদ্যোগের বিপক্ষে দেশটিতে বিক্ষোভও হয়েছে।
অর্থনেতিক বৈষম্যের বিষয়ে অক্সফামের বার্ষিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্তমান সংকটে আর্জেন্টিনা ধনীদের ওপর বাড়তি কর আরোপের মাধ্যমে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ দেখিয়েছে।
আর্জেন্টিনার মতো এমন পদক্ষেপ নিতে পারলে অন্যান্য দেশগুলোও আরও সহজভাবে করোনা মহামারি মোকাবিল করতে পারবে। এই কর আরোপকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে অক্সফাম। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনভাইরাস মহামারির মধ্যে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অর্জিত অতিরিক্ত মুনাফার উপর কর আরোপের মাধ্যমে ১০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের তহবিল গঠন করা সম্ভব। এর মাধ্যমে শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত, দরিদ্র দেশগুলোর শিশু এবং বয়স্ক লোকজনকে অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান করা সম্ভব।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আর্জেন্টিনায় এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৬২। এর মধ্যে মারা গেছে ৪৭ হাজার ৭৭৫ জন। দেশটিতে ইতোমধ্যেই সুস্থ হয়ে উঠেছে ১৭ লাখ ৩ হাজার ৪৫৯ জন। দেশটিতে বর্তমানে করোনার অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ১ লাখ ৬৪ হাজার ১২৮। দেশটিতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ৩ হাজার ৬২৮ জন।
টিটিএন/এমএস