আইএসের পাতানো ফাঁদে ইউরোপ?


প্রকাশিত: ০৬:১৪ পিএম, ১৬ নভেম্বর ২০১৫

বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ফ্রান্সে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) হামলার পর সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব মোড়লদের নীতিতে পরিবর্তন আসছে। সিরিয়া ইস্যুতে সমঝোতায় পৌঁছেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। গত সপ্তাহে বারাক ওবামা বলেছিলেন, ইরাক এবং সিরিয়ায় মূলত আইএস জঙ্গিদের ঘাঁটি। কিন্তু প্যারিসের হামলার মাধ্যমে এই গোষ্ঠীটি যে পশ্চিমা বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি সে বিষয়টির জানান দিলো।

সিরিয়া এবং ইরাকে নিজেদের অঞ্চল রক্ষায় ইসলামিক স্টেট বিশ্বব্যাপি বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। এ কৌশলের অংশ হিসেবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা থেকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় হামলা পরিচালনা করছে। লিবিয়া, মিসর, আফগানিস্তান ও অন্যান্য দেশে এই জঙ্গিরা তাদের চরম নিষ্ঠুরতা দেখাচ্ছে। এরা এখন যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্যে কৌশলগত দক্ষতাও ব্যবহার করছে। এর ফলে পশ্চিমা সমাজ সংস্কৃতি বিরোধী এক ধরনের ধারণাও তারা উৎপাদন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং এর মিত্র দেশগুলো দ্রুতই এ হুমকি কঠোরভাবে মোকাবিলার কথা জানিয়েছে।


বিশ্লেষক হারলিন গম্ভীর নিউইয়র্ক টাইমসে এক নিবন্ধে বলেছেন, ইসলামিক স্টেটের কৌশল হচ্ছে তারা বারবার ধ্বংসাত্মক আক্রমণ চালাবে। এর ফলে নিষ্পাপ মুসলিমদের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) কঠোর প্রতিক্রিয়ার কথা ভাববে। ফলে মহাদেশজুড়ে তারা (আইএস) মুসলিমদের সমর্থন পাবে।

আর এই কৌশলের অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে প্যারিসের হত্যাযজ্ঞ। ইসলামিক স্টেট যোদ্ধা মিসরের সিনাইয়ে ২২৪ আরোহীবাহী রুশ বিমান বিধ্বস্তের দায় স্বীকার করেছে। গাম্ভীর বলেন, এই হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা নীতির বিরুদ্ধে এটাই প্রথম তাদের লক্ষ্যবস্তুও নয়। তারা (আইএস) চরমপন্থার বিস্তার ঘটাতে সংগঠিত সামরিক প্রচারণা চালাচ্ছে। একইসঙ্গে ইউরোপ এবং এর বাইরে নতুন সদস্য নিয়োগ করছে।


ইসলামিক স্টেটের এসব কৌশল এখন বাস্তবে প্রয়োগ করতে দেখা যাচ্ছে। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের ব্যাঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোর অফিসে হামলা চালায় আইএস। সে সময় পত্রিকাটির বেশ কয়েকজন কার্টুনিস্টকে গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখায়।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ডানপন্থি দলগুলোর শক্তি দিনে দিনে বৃদ্ধি পেয়েছে। ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্টি আগামী শীতে দেশটির স্থানীয় সরকার নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে বেশ আশাবাদী। শনিবার দলটির প্রধান ম্যারিন লি পেন ঘোষণা দিয়েছেন, মুসলিমদের সঙ্গে যারা সম্পর্ক রাখবে তারা ফ্রান্সের শত্রু।

এদিকে সুইডেনের দ্য ডেনিস পিপল পার্টিও ইসলাম বিরোধী প্লাটফর্মে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে ২১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। একই সঙ্গে দলটির ইসলামবিরোধী মনোভাবের কারণে জনপ্রিয়তাও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।


প্যারিসের এই হামলা ইউরোপে মুসলিম বিরোধী একধরনের নেতিবাচক ধারণা তৈরি করবে। প্রতিবাদকারীরা ইতোমধ্যে ইউরোপ থেকে মুসলিমদের বহিষ্কারেরও দাবি তুলেছেন। কিছুদিন আগে নেদারল্যাণ্ডের রাজনীতিবিদ গির্ট উইল্ডারস বলেন, ইউরোপে যত কম মুসলিম থাকবে ততই ভালো।

কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে হাজার হাজার শরণার্থী এখন ইসলামিক স্টেটের জন্য দলে ভেড়ানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করেছে। ইসলামিক স্টেট জঙ্গিরা ইউরোপসহ বিশ্ব্যবাপি যে ধরনের হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে ইসলাম বিরোধীরা এখন পর্যন্ত সে ধরনের কোনো হত্যাকাণ্ডের জন্য অভিযুক্ত হয়নি।

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের অবসান ঘটলেই বিশ্বব্যাপি যে অস্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে তা অনেকাংশে কমে আসবে। কেননা সিরিয়ায় আসাদ সরকার তার বিরোধীদের গড়ে ওঠার পরিবেশ তৈরি করেছে। সুতরাং আসাদকেই তা প্রতিহত করতে হবে।

তবে ইসলামিক স্টেটের এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে তা পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে তুলতে পারে। প্যারিস হামলা এবং অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইউরোপ যদি পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায় সেটি ইসলামিক স্টেটের পাতানো ফাঁদে পড়া ছাড়া আর কিছুই নয়।

এসআইএস/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।