করোনাকালে দেশে দেশে ‘রুদ্ধদ্বার’ বর্ষবরণ
অডিও শুনুন
‘বিষময় ২০২০’ বিদায় জানাতে যেভাবে অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় ছিল মানুষ, বিশ্বের ইতিহাসে এমনটি আগে হয়েছে কি না সন্দেহ! অবশেষে শেষ হয়েছে সেই অপেক্ষার পালা। এসেছে নতুন বছর, জেগেছে নতুন আশা। তবে ইংরেজি নতুন বর্ষ বরণে যতটা আগ্রহ ছিল সবার মধ্যে, উদযাপনে দেখা যায়নি তার ছিটেফোঁটাও। বলা যায়, দেখানো সম্ভব হয়নি। কারণ মহামারি এখনও যায়নি, উল্টো অনেক দেশেই বাড়ছে সংক্রমণ। ফলে কড়া বিধিনিষেধের বেড়াজালে অন্যরকম এক বর্ষবরণের সাক্ষী হলো বিশ্ববাসী।
এশিয়া এবং দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় ঘড়ির কাঁটায় রাত ১২টা বাজতেই উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। মুহুর্মুহু আতশবাজি ফুটিয়ে, ফানুস উড়িয়ে নতুন বর্ষকে বরণ করা হয়েছে অনেক দেশে। তবে বেশিরভাগ জায়গাতেই সংক্রমণরোধে বাইরে অনুষ্ঠান-উদযাপনে ছিল কড়া নিষেধাজ্ঞা। একারণে আনন্দ-উৎসব যা হওয়ার, হয়েছে ঘরে অথবা বাড়ির ছাদেই।
গত কয়েক বছর অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বন্দরে আতশবাজি প্রদর্শনী দেখতে কয়েক লাখ মানুষ উপস্থিত হতেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে এবছর স্বশরীরে না গিয়ে টেলিভিশনেই উপভোগ করেছেন অনেকে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন বছর বরণে ঐতিহ্যবাহী ঘণ্টা বাজানোর অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। কোরিয়া যুদ্ধের পর থেকে দেশটিতে প্রতিবছরই জঙ্গো অঞ্চলে লক্ষাধিক মানুষের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। শুধু এবারই প্রথম করোনার হানায় বন্ধ সেই উৎসব।
চীনে ঠিক একবছর আগে প্রথমবারের মতো শনাক্ত হয়েছিল নভেল করোনাভাইরাস। এরপর সেটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে, কেড়ে নেয় লাখ লাখ মানুষের প্রাণ। সেই ক্ষত এখনও শুকায়নি। একারণে অনেকটা নীরবেই ২০২১ বরণ করেছেন চীনারা।
জাপানের বেশিরভাগ এলাকাও ছিল শান্ত। দেশটির রাজধানীতে সম্প্রতি বাড়তে শুরু করেছে ভাইরাসের সংক্রমণ। ফলে কড়া বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে সেখানে। ছুটি কাটাতে বাড়ি ফেরাও বাতিল করেছেন অনেকে।
ভাইরাসের কারণে ঘরবন্দি উদযাপন করেছেন ভারতীয়রা। সম্প্রতি দেশটিতে অতিসংক্রামক করোনার নতুন ধরন শনাক্তের পর রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করা হয়েছে প্রধান শহরগুলোতে, সৈকতে পার্টি করাও নিষিদ্ধ সেখানে।
তবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও মহাধুমধামে ইংরেজি নতুন বছর বরণ করেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাইয়ে বিশ্বের দীর্ঘতম ভবন বুর্জ খলিফা ঘিরে বরাবরের মতোই আতশবাজি প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছিল।
এছাড়া, বাধভাঙা উদযাপন হয়েছে করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল দেশগুলোতেও। নতুন বর্ষ বরণে স্বাভাবিক আয়োজন ছিল নিউজিল্যান্ডে।
বড় পরিসরে অনুষ্ঠান করেছে তাইওয়ান। তাদের রাজধানী শহরে বিখ্যাত তাইপেই ১০১ টাওয়ারে বিশাল আতশবাজি প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তবে ভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে উদযাপনে ভাটা পড়েছে ইউরোপে। ইতালি, তুরস্ক, লাটভিয়া, চেক রিপাবলিকের মতো দেশগুলো আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, স্বাস্থ্য সতর্কতা অমান্য করলে পরিণতি হবে ভয়াবহ।
তারপরও ছোট পরিসরে কিছুটা উদযাপন হয়েছে কোথাও কোথাও। রোমের বিখ্যাত কলোসিয়ামে আতশবাজি প্রদর্শনী হলেও কর্তৃপক্ষের অনুরোধ ছিল, এটি যেন সবাই ঘরে বসে উপভোগ করেন।
ব্রিটিশদের জন্য উদযাপনের উপলক্ষ ছিল দু’টি- নতুন বছর এবং ব্রেক্সিট। ১ জানুয়ারি থেকে আর ইউরোপীয় ইউনিয়নের অংশ নেই যুক্তরাজ্য। তবে দেশটিতে সম্প্রতি করোনার নতুন একটি ধরন আবিষ্কৃত হয়েছে, যা ছড়িয়ে পড়ছে দ্রুতগতিতে। একারণে বেশিরভাগ এলাকাতেই চলছে লকডাউন। স্বাভাবিকভাবেই এ পরিস্থিতিতে বাইরে বেরিয়ে বর্ষ বরণ উদযাপন করতে পারেননি দেশটির বাসিন্দারা।
সূত্র: এবিসি নিউজ
কেএএ/এমএস