নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটাতে পারবেন প্রাপ্তবয়স্ক নারী : আদালত

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ০৯:৪৪ এএম, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০

অডিও শুনুন

একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী যদি স্বামীর সঙ্গে থাকতে চান, নিজের ইচ্ছায় জীবন কাটাতে চান, সেই স্বাধীনতা তার আছে। ‘লাভ জিহাদ’-এর অজুহাতে ভারতে একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলো যখন বিয়ের নামে ধর্মান্তর প্রতিরোধী আইন কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে ঠিক সে সময়ই ভিন্নধর্মী এক দম্পতিকে নিয়ে মামলার শুনানিতে এমন রায় দিয়েছে এলাহাবাদের উচ্চ আদালত। রায়ে আদালতের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীর সিদ্ধান্তে কোনও তৃতীয় ব্যক্তির নাক গলানোর অধিকার নেই।

উত্তরপ্রদেশে ধর্মান্তর প্রতিরোধী আইন কার্যকর হওয়ার আগে ইটা এলাকায় সালমান নামের এক তরুণের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শিখা নামের এক তরুণী। তা নিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে সালমানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন শিখার পরিবারের লোকজন। তারা অভিযোগ করেন, তাদের মেয়েকে অপহরণ করেছেন সালমান। জোর করে শিখাকে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে বাধ্য করেছেন তিনি। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে শিখাকে শিশু কল্যাণ কমিটির হেফাজতে পাঠিয়ে দেন জেলার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট। সেখান থেকে বাবা-মায়ের হাতেই আসে শিখার হেফাজতের ভার।

জেলা আদালতের সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি এলাহাবাদ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন সালমান। বেআইনিভাবে তার স্ত্রীকে আটকে রাখা হয়েছে এবং ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাকে বাবা-মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। সোমবার ওই মামলার শুনানি চলাকালীন উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন এবং মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটকে একহাত নিয়েছেন এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি পঙ্কজ নকভি এবং বিবেক অগরওয়ালের ডিভিশন বেঞ্চ। তারা জানান, মাথা খাটানো তো দূরের কথা মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এবং শিশু কল্যাণ কমিটির সিদ্ধান্তে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, আইন-কানুন সম্পর্কে তারা কতটা শ্রদ্ধাশীল!

শিখার সঙ্গেও কথা বলেছেন ওই দুই বিচারপতি। আদালতে শিখা জানান, সম্পূর্ণ নিজের ইচ্ছায় সালমানকে বিয়ে করেছেন তিনি। আদালতে শিখা জানান, ১৯৯৯ সালের ৪ অক্টোবর তার জন্ম। সে হিসেবে আইনত প্রাপ্তবয়স্ক তিনি। তার পরেও জোর করে স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে বাধ্য করা হচ্ছে তাকে। সালমানের সঙ্গে শিখা শ্বশুরবাড়ি না ফেরা পর্যন্ত ওই দম্পতিকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

এর আগে, গত সপ্তাহেই ধর্মান্তরণ প্রতিরোধী আইনে ৩২ বছরের এক মুসলিম যুবককে গ্রেফতার না করার নির্দেশ দিয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্ট। আদালত জানায়, ধর্মান্তরের জন্য কাউকে জোর করেছেন এমন কোনও প্রমাণ মেলেনি ওই যুবকের বিরুদ্ধে।

মুসলিম ছেলের সঙ্গে হিন্দু মেয়ের বিয়েকে ‘লাভ জিহাদ’ আখ্যা দিয়েছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। তাদের দাবি, ধর্মান্তরের উদ্দেশ্য নিয়েই হিন্দু মেয়েদের ভালবাসার জালে ফাসায় মুসলিম যুবকরা। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক করে আসছেন। শেষমেশ চলতি বছরের নভেম্বরে রাজ্যে বিতর্কিত বিয়ের নামে ধর্মান্তরণ আইন পাস করে তার সরকার। উত্তরপ্রদেশের দেখাদেখি, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা এবং কর্নাটকও বিয়ের নামে ধর্মান্তর আইন কার্যকর করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

টিটিএন/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।