ব্যস্ততা বেড়েছে নওগাঁর লেপ-তোষক কারিগরদের
পূর্ব আকাশে কুয়াশা ঢাকা ম্লান মুখ আর সকালে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু জানান দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা। শীতের আগমনকে বরণ করে নেয়ার সময় হয়ে এসেছে। শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে। দিনে গরমের সঙ্গে সঙ্গে সন্ধ্যার শুরুতে পড়তে শুরু করেছে হালকা কুয়াশা। পরদিন সকাল ৭/৮টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে। শীতের আগমনীতে লেপ-তোষকের কারিগররা ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
শীতের আগমনী বার্তায় হালকা পাতলা কাপড় ছেড়ে দিয়ে শীতের ভারি কাপড় গায়ে জড়িয়ে বের হচ্ছেন অনেকেই।
এদিকে শীতকে সামনে রেখে অনেকেই যারা পুরনো শীত বস্ত্র তুলে রেখেছেন সেগুলো বের করছেন। কেউ কেউ আবার নতুন করে লেপ-তোষক তৈরি করছেন। তাই মনে করিয়ে দিচ্ছে শীত আর বেশি দূরে নয়।
গ্রামের নারীরা সংসারের কাজের ফাঁকে পুরনো লেপ কাঁথাগুলো নতুন করে ছেঁড়া শাড়ি-লুঙ্গি দিয়ে জোড়া তালি দিয়ে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্য কিছুটা ব্যস্ততা দেখা গেছে।
নওগাঁ শহরের তুলাপট্টির দোকানগুলোতে লেপ তৈরির কাপড় ও তুলা কিনতে দেখা গেছে মানুষদের। কেউ কিনে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন এবং কেউ কারিগর দিয়ে লেপ তৈরি করে নিচ্ছেন। শহরের তুলাপট্টির একটি মার্কেটের ছাদে গিয়ে দেখা যায় ১৫/১৬ জন কারিগর যে যার মতো কাজ করছেন। তুলা রোদে দিয়ে কেউ লাঠি দিয়ে বাড়ি দিচ্ছেন, কেউ লেপের কাপড়ে তুলা ভরছেন, কেউ লেপ সেলাই করছেন।
কারিগর আব্দুর রশিদ জাগো নিউজকে জানান, প্রায় ২৮ বছর থেকে এ কাজ করছেন। এখন প্রায় সারা বছর এ তোশক, বালিশ, যাজিম গদির কাজ করা হয়। লেপের মজুরি ১৫০ থেকে ৩শ টাকা। তোশক তৈরি করতে সময় কম লাগে এবং ১২০টাকা মজুরি। লেপ তৈরি দুজনের মিলে কাজ করলে ঘণ্টা খানেক সময় লাগে। আর একা করলে প্রায় ২ ঘণ্টার মতো লাগে। শীতের মৌসুমে দিনে ৮/১০টা পর্যন্ত লেপ তৈরি করেন।
বোয়ালিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম জাগো নিউজকে জানান, তাদের তিনজনেরে একটা দল আছে। প্রায় সারা বছরই তারা এ কাজ করেন। এ কাজ করেই সংসার চালান। প্রতিদিন ৫/৭টা করে কাজ করেন। গরমের সময় যাজিমের কাজ এবং শীতের সময় লেপ ও তোষকের কাজ বেশি হয় বলে জানান।
শহরের আরজি-নওগাঁ থেকে রানী নামে এক নারী লেপ তৈরি করে নিতে এসে অপেক্ষা করছেন। তিনি জানান, বাড়িতে লেপ তৈরি করলে কারিগরদের মতো সুন্দর হয় না এবং সৌন্দর্য ফুটে উঠে না। এজন্য বাজার থেকে তুলা ও লেপের কাপর কিনে ৩শ টাকা মজুরি দিয়ে কারিগর দিয়ে লেপ তৈরি করে নিচ্ছেন।
কারিগর ফেরদৌস জাগো নিউজকে জানান, তার দলে চারজন আছেন। লেপ কার্পাস তুলা ৬-৭ ফিট মাপের ১০-১৫ কেজি তুলা ১৩০টাকা, ১৫-২০ কেজি তুলা ১৫০ টাকা এবং কালার তুলা ৬-৭ ফিট মাপের ৪০-৫০ কেজি তুলা ২৬০ টাকা মজুরি নেয়া হয়। আবার রঙিন তুলা হলে মজুরি একটু বেশি। এছাড়া পুরাতন কাপড় ও তুলা দিয়ে লেপ, তোশক গদি তৈরিতে মজুরি বেশি নেয়া হয়।
লেপ-তোশক-গদি ও বালিশ কারিগর সমিতির সভাপতি কারিগর আব্দুল করিম জাগো নিউজকে জানান, ৩০ জন কারিগর নিয়ে সমিতি গঠন করেছেন। হঠাৎ নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে গেছে। সে তুলনায় তাদের মজুরি একটু কম হচ্ছে। তিন বছর পর পর মজুরি বাড়ানো হয় এবং কাপড়, তুলা দোকানে মজুরি তালিকা দেয়া আছে। তবে নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় কারিগর ও দোকানদারদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
আব্বাস আলী/এমজেড/পিআর