ভাবের সুরে মজেছে মধ্যরাতের উৎসব


প্রকাশিত: ০৮:০০ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৫

মধ্যরাত। ঘড়ির কাঁটায় পরের দিনের তারিখ। মঞ্চ থেকে ভেসে আসছে রব ফকিরের সুরেলা কণ্ঠের ভাবের গান। গানের কথার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মঞ্চের পেছনে ভাসছে নানা ধরনের আবহ। সুফি গানের তালে তালে ইহলোকের মায়ার বৈপরীত্য তুলে ধরেছেন সঙ্গীতের এই সাধক। জাগতিক চেতনাকে ভুলে সৃষ্টিকর্তার গভীর প্রেমে ধাবিত হওয়ার জন্য গায়ক গানে গানে দর্শক শ্রোতাদেরকে আহ্বান জানান।


‘তোমার দয়া বিনে গুরু বিনে চলবো কেমনে’ গানটির পরিবেশনায় সমগ্র অনুষ্ঠানে সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রেমের অমোঘ বাণী তুলে ধরেন। আধ্যাত্মিক গানের পাশাপাশি তিনি দেহতত্ত্বের বেশ কয়েকটি গানও পরিবেশন করেন। রব ফকির ছাড়াও মঞ্চে আসেন ভারতের শিল্পী অর্ক মুখার্জী কালেক্টিভ।


‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে রে তুই আল্লা, তুমি জানোনারে প্রিয় তুমি মোর জীবনের সাধনা ইত্যাদি গানে গানে সমগ্র আর্মি স্টেডিয়ামের প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক দর্শক শ্রোতাদের হৃদয়ের মন্দিরে সুরের ধারা প্রবাহিত করেন। মঞ্চ থেকে শিল্পীর ছড়াচ্ছেন সুরের মূর্চ্ছনা আর আর্মি স্টেডিয়ামের সমগ্র মাঠে নৃত্যের উন্মাদনা আর আনন্দের উল্লাসে জেগে উঠেছিল তারুণ্য।


তারুণ্যের এই নৃত্য যেন গোটা আর্মি স্টেডিয়ামকে কাঁপিয়ে তুলেছিল। রাত্রি দ্বিপ্রহরের এমন সুরের আবেশ ছড়িয়ে পড়ে আর্মি স্টেডিয়ামের আশপাশের এলাকাতেও। যেন নির্ঘুম রজনী কাটানোর জন্যই জেগে আছে সুরপ্রেমীরা।


‘আজ ফিরবোনা ঘরে, আজ সুরের সমুদ্রে ডুবে রবো নিরন্তর’ এমন প্রত্যয় নিয়েই যেন সুরস্রোত হতে স্টেডিয়ামে এসেছিল সঙ্গীতানুরাগীরা। প্রিয় শিল্পীর প্রিয় গানের জন্য রজনী বিনিদ্র গেলেই বা ক্ষতি কী?


মেরিল নিবেদিত, সান ইভেন্টস ও মাছরাঙা টেলিভিশন আয়োজিত তিন রাতের ‘ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ফোক ফেস্ট, আন্তর্জাতিক লোকসঙ্গীত উৎসব ২০১৫’ এর প্রথম রাতের মধ্যভাগের চিত্রটা ছিলো এমনই।


বাংলাদেশের রব ফকির ও ভারতের অর্ক মুখার্জী কালেক্টিভের পর মঞ্চে আসেন পাকিস্তানের সুফি শিল্পী সাঁই জহুর। ‘আল্লাহু, আল্লাহু হু আল্লাহ’ ধ্বনির গানে গানে অনুষ্ঠানস্থলকে কিছু সময়ের জন্য হলেও সাধনার স্থানে পরিণত করেন এই সুফি শিল্পী।


উল্লাস আর উন্মাদনার পরিবর্তে দর্শক-শ্রোতারা পিনপতন নীরবতায় মন্ত্রমুগ্ধের মতো উপভোগ করেন পাকিস্তানী এই শিল্পীর গান। যেন গান শোনা নয় কোনো সাধনায় আসা। সুরের এই যাদুকর তার কন্ঠের যাদুতে সৃষ্টিকর্তার গুনগান পরিবেশন করে অনুষ্ঠানের মোড়টা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেন। সন্ধ্যা থেকে যেসব দর্শক শ্রোতারা নৃত্যের উন্মাদনায় মেতে উঠেছিলো সেই দর্শক শ্রোতারাই কেমন যেন পাল্টে গেছে সাঁই জহুরের পরিবেশনায়।


প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বর্ণাঢ্য এই সুরের আসরের উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। উদ্বোধনী আসরে বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পী ফেরদৌসী রহমান। এতে স্বাগত বক্তৃতা করেন মাছরাঙা টেলিভিশন ও সান ইভেন্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী।


উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘সঙ্গীতের প্রতি আমাদের যে আকর্ষণ তা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। লোকসঙ্গীতে এক ধরনের আন্তর্জাতিক সমতা রয়েছে। কিছুদিন আগে আজারবাইজানে এমনই এক লোকসঙ্গীত উৎসবে গিয়েছিলাম। সেখানে গান ও নাচ দেখে আমাদের নিজস্ব লোকসঙ্গীতের কথাই মনে পড়ে যায়।’


এর আগে সন্ধ্যায় অনুষ্ঠানের শুরুতেই লালন সম্রাজ্ঞীখ্যাত ফরিদা পারভীন পরিবেশন করেন ‘পাড়ে লয়ে যাও আমায়’, ‘মিলন হবে কত দিনে’ ও ‘সময় গেলে সাধন হবে না’সহ তিনটি গান। চন্দনা মজুমদার পরিবেশন করেন ‘মানুষ ছাড়া খেপারে তুই মূল হারাবি’, ‘সোনা বন্ধু ভুইলোনা আমারে’,সহ তিনটি গান। চন্দনার পরে মঞ্চে আসেন কিরন চন্দ্র রায়, লাবিক কামাল গৌরব, শফি মন্ডল, ভারতের পাপন এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রমুখ।


‘নাও ছাড়িয়া দে পাল উড়াইয়া দে’, ‘টেউ খেলানি দিয়া নাচে গোলাপি’, ‘তোর মাদলেরই তালে আমার মন ঝুমুর নাচে উঠলো মেতে’ গানের সাথে মিনু হক ও পল্লবী ড্যান্স গ্রুপের দলীয় নৃত্যের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা ঘটে।


শনিবার শেষ হবে তিনরাতের এই ফোক ফেস্ট।

এনই/এলএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।