ফুলবাড়ীয়ায় দলীয় সমর্থন পেতে ব্যস্ত প্রার্থীরা


প্রকাশিত: ০৫:২২ এএম, ১১ নভেম্বর ২০১৫

স্থানীয় সরকার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে এ ঘোষণা দেয়ার পর থেকে ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়া পৌরসভার সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের ঘুম ভাঙে। শুরু হয় মহল্লায় মহল্লায় ছুটোছুটি। বিয়ের অনুষ্ঠান, ক্রীড়ানুষ্ঠান, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, জানাযা নামাজ, বিভিন্ন সমাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে রীতিমতো উপস্থিত হচ্ছেন সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রার্থীরা। ভোটারদের মন কাড়তে নানা কৌশল অবলম্বনের পাশাপাশি প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি দিচ্ছেন তারা।

এদিকে, ভোটাররা হিসাব নিকাশ কষছে কাকে ভোট দিলে এলাকার উন্নয়ন হবে। পৌর সদরে হোটেল মোটেল ও চায়ের দোকনসহ বিভিন্ন আড্ডায় চলছে পৌর নির্বাচনের আলোচনা। কে হবে কোন দলের সমর্থিত প্রার্থী। দল সমর্থিত ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা ভোটের মাঠে ছুটছে যেভাবে, তার চেয়ে বেশি ছুটছে দলীয়ভাবে সমর্থন পাওয়ার জন্য।  

নির্বাচনী মাঠের দৌঁড়ে আছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী বর্তমান মেয়র উপজেলা আ. লীগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম কিবরিয়া, শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা, সাবেক পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মো. মজিবুর রহমান, ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্য চাঁন মাহমুদ, পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব একেএম শমসের আলী, বিএনপিতে যোগদানকারী উমর ফারুক ও সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম।

সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে বিএনপি নেতা চান মাহমুদ ও উমর ফারুকের মুখে শোনা যায় ভিন্ন কথা। অন্যান্যদের মুখের সুর একটাই- দল সমর্থন দিলে পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হবেন, আর সমর্থন না দিলে প্রার্থী হবেন না। এদের মধ্যে বর্তমান মেয়র গোলাম কিবরিয়া, গোলাম মোস্তফা ও চান মাহমুদ সরকার সব চেয়ে বেশি ভোটারদের কাছে দৌঁড়াচ্ছেন।

ফুলবাড়ীয়া পৌরসভার ১৫.৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ৯টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ৫শ ১৫ জন। গত দুইবারের পৌর নির্বাচনে দলের পাশাপাশি আঞ্চলিকতার টান কাজ করেছে বলে জানা গেছে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ বছর দল সমর্থিত প্রার্থী ও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে সেক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার টান না পড়াটাই স্বাভাবিক।

মেয়র গোলাম কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, গ শ্রেণির পৌরসভা খ শ্রেণিতে উন্নীতকরণ, তিন কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা পৌর ভবনের নির্মাণ কাজ শেষের পথে, রাস্তাঘাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থা, কালভার্ট, কাঁচা বাজার, মাছ ও মাংস মহলে সেট নির্মাণসহ গত ৭ বছর যে সকল উন্নয়ন হয়েছে তাতে পৌরবাসী আমার পক্ষে আছে। এরপরও যদি দল সমর্থন না দেয় তাহলে নির্বাচন করবো না।  

শহর আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা ৪/৫ বছর আগেই পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই নির্বাচনের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি দলের পরীক্ষিত সৈনিক। আমার বিশ্বাস, দল আমাকে সমর্থন দেবে। তারপরও দল যাকে ভাল মনে করবে তাকেই সমর্থন দিবে। দলের বাইরে আমি কিছু করবো না।

পৌর বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব একেএম শমসের আলী ওর্য়াড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়াভাবে আলোচনা করে নির্বাচনী  প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, দলের প্ররক্ষিত সৈনিক আমি। দলের জন্য সব সময় শ্রম দেই। দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমার বিশ্বাস।

সাবেক পৌর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক মেয়র মজিবুর রহমানের সাফ কথা বিএনপি সমর্থন দিলে নির্বাচন করবে তা নাহলে নির্বাচন করবেন না।

ঢাকঢোল পিটিয়ে সম্প্রতি বিএনপিতে যোগদানকারী অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলামকে নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বিএনপির একটি মহলের সবুজ সংকেত পেয়েই দলে যোগদান করছেন বলে রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে। তবে এ নিয়েও বিএনপির ভিতরে বাইরে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপি সমর্থন দিলে মেয়র পদে নির্বাচন করবো, তা নাহলে নির্বাচন করবো না।

বিএনপি নেতা উমর ফারুকজোগো নিউজকে বলেন, যেহেতু গত পৌর নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তৃতীয় স্থানে ছিলাম কাজেই দল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে বিশ্বাস করি। বিএনপি সমর্থন দিলেও নির্বাচন করবো সমর্থন না দিলেও নির্বাচন করবো।

জেলা বিএনপির সদস্য চাঁন মাহমুদ বলেন, দলীয়ভাবে সমর্থন চাইবো। যদি দল সমর্থন দেয় তাহলেও নির্বাচন করবো, যদি সমর্থন না দেয় তাহলেও নির্বাচন করবো।

২০০১ সালের পর থেকেই পাবলিক পাঠাগারে চলছে ফুলবাড়ীয়া পৌরসভার কার্যক্রম। ২০১০ সালে গ শ্রেণির পৌরসভা খ শ্রেণিতে উন্নীতকরণ করা হয়। ২০১৩ সালের ৩০ মে পৌরসভার তিন নং ওয়ার্ডে ৫২ শতাংশ জমির উপর তিন কোটি ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে তিন তলা বিশিষ্ট পৌর ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। কবে নাগাদ পৌর ভবনের কাজ শেষ হবে তা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে মেয়র গোলাম কিবরিয়া বলেন, যত দ্রুত সম্ভব পৌর ভবনের নির্মাণ কাজ শেষ করার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে সারাদেশে ফুলবাড়ীয়া পৌরসভাসহ ৮টি পৌরসভার মডেল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আ. লীগ সমর্থিত প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া ফুলবাড়ীয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রায় ২ বছর আগেই বর্তমান মেয়রের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার পর সীমানা নির্ধারণী জটিলতার কারণে এখনো মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

এসএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।