স্বামীকে দ্বিখণ্ডিত করলেন স্ত্রী


প্রকাশিত: ০৯:০৭ এএম, ১০ নভেম্বর ২০১৫

বাবাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে স্বামী আলী হোসেনকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে দ্বিখণ্ডিত করেন স্ত্রী। এরপর স্বামীর খণ্ডিত মস্তক পুঁতে রাখেন একটি গর্তে। আর মস্তকবিহীন দেহ ফেলে দেন পাশের জঙ্গলে। এমন রোহমর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে সিলেট শহরতলির পীরেরবাজার শাহ সুন্দর (রহ.) মাজার সংলগ্ন মোকামেরগুল এলাকায়।

এ ঘটনায় পুলিশ আলীর স্ত্রী পারভীন আক্তারকে (৩৬) আটক করে। তার দেয়া তথ্যমতেই পারভীনের স্বামী আলী হোসেনর দ্বিখণ্ডিত দেহ উদ্ধার করে এসএমপির শাহ পরান থানা পুলিশ।

নিহতের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোমবার বিকেলে একটি সাধারণ ডায়েরির (জিডি) সূত্র ধরে পারভীনকে আটক করে শাহপরান থানা পুলিশ। এরপর জিজ্ঞাসাবাদে পারভিন স্বামীকে খুনের কথা স্বীকার করেন। তার দেয়া তথ্যে আলীর খণ্ডিত দেহ ও মস্তক উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চার সন্তানের জনক পাথর ব্যবসায়ী আলী হোসেন বিয়ে করেছেন তিনটি। ছোট স্ত্রী পারভিনকে নিয়ে মোকামেরগুলে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি গোয়াইনঘাট উপজেলার জাফলং ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের মৃত মুক্তিযোদ্ধা শফিকুর রহমানের ছেলে। স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরেই স্বামীকে খুন করেছেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন পারভীন।

মহানগর পুলিশের শাহপরান থানার দাশপাড়া এলাকার সুরুজ আলীর মেয়ে পারভীন আক্তার তিন বছর আগে পাথর ব্যবসায়ী আলী হোসেনের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি আলীর তৃতীয় স্ত্রী। আলীর অন্য দুই স্ত্রী জাফলংয়ে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে অবশ্য তার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে।

পারভিনের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, গত ৪ নভেম্বর ভোরে ঘুমন্ত অবস্থায় দুই কোপে স্বামীর মাথা বিচ্ছিন্ন করেন পারভীন। বিচ্ছিন্ন মাথাটি পার্শ্ববর্তী একটি টিলার গর্তে পুঁতে রাখেন। আর দেহ প্রথমে ঘরের মেঝেতে গর্ত করে পুঁতে রাখেন। এরপর ৫ নভেম্বর রাতে মরদেহ রশি দিয়ে টেনে নিয়ে জঙ্গলে ফেলে রাখেন।

পারভীন জানান, হত্যাকাণ্ডের রাতে তার বাবা (আলীর শ্বশুর) সুরুজ আলী বাসায় অবস্থান করলেও তাকে বেশ কয়েকটি ঘুমের বড়ি খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখেন তিনি। এ ঘটনায় সুরুজ আলীকে আটক করলেও সোমবার রাতে তাকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।

হত্যাকাণ্ডের ছয় দিনের মাথায় সোমবার রাতে মোকামেরগুল বাড়ির পাশের জঙ্গল থেকে আলী হোসেনের মাথাবিহীন দেহ উদ্ধার করা হয়। পারভীনকে আটককালে ঘর থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত রক্তমাখা একটি রামদাও উদ্ধার করে পুলিশ।

আলীর ছোট ভাই জমির হোসেন জাগো নিউজকে জানান, ৪ নভেম্বর থেকে তার ভাইয়ের খোঁজ পাচ্ছিলেন না। অজ্ঞাত নাম্বার থেকে ভাইয়ের বন্ধু পরিচয় দিয়ে এক লোক হত্যাকাণ্ডের কথা জানান। এরপর তারা শাহপরানা থানায় ডায়েরি (নং-৪২৭) করেন।

তিনি বলেন, তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে নিহত আলী হোসেন মেজ। তার প্রথম স্ত্রীর ঔরসজাত তিন সন্তান এবং তৃতীয় স্ত্রীর এক সন্তান রয়েছে। তবে মেজ স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে হলেও পরে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়।

নিহতের পরিবারের দাবি, পারভীন একাই তাকে খুন করে মরদেহ গুম করেছেন, নাকি অন্য কেউ জড়িত রয়েছেন, তা তদন্ত করে বের করা দরকার।

শাহপরান থানা পুলিশের উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) ফজলে মাসুদ জাগো নিউজকে জানান, সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর সোমবার রাত ১০টার দিকে উদ্ধারকৃত খণ্ডিত মরদেহ সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়। মঙ্গলবার মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নিহতের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, পারভীনের তথ্য মতে, সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ির পার্শ্ববর্তী টিলা থেকে বিচ্ছিন্ন মাথা ও জঙ্গলে ফেলা দেহ উদ্ধার করা হয়। এসময় মরদেহের শরীর থেকে মাংস ঝরে পড়ছিল।

ছামির মাহমুদ/এমজেড/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।