শচীনের দেখা পেতে সাংবাদিক সাজতেন অঞ্জলি
আমি আমার মাকে আনতে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলাম। সেখানেই তাকে প্রথম দেখি। আমারা বন্ধুরা বলছিল, ও হচ্ছে ভারতীয় ক্রিকেটর বিস্ময় বালক। আমি বন্ধুদেরকে বললাম, ওয়াও! সে দেখতে ভীষণ মিষ্টি। তারপরই মার কথা ভুলে গিয়ে আমি তার পেছন পেছন ছুটলাম।
এভাবেই স্বামী কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারের সঙ্গে প্রথম দেখার স্মৃতিচারণা করছিলেন স্ত্রী অঞ্জলি টেন্ডুলকার। শচীনের বয়স তখন ১৭।
গতকালই হয়ে গেলে শচীনের আত্মজীবনী ‘প্লেয়িং ইট মাই ওয়ে’ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান। আর সেখানেই স্ত্রী অঞ্জলিকে পাওয়া গেল এমন ভিন্ন মেজাজে। শচীনের সঙ্গে প্রেম, প্রেম থেকে বিয়ে, সংসারের খুঁটিনাটি অনেক কিছুই উঠে এলে অঞ্জলির স্মৃতিচারণায়।
অঞ্জলি বলছিলেন, আমি শচীনের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকছিলাম। ও এতোটাই লজ্জা পেয়েছিল আমার দিকে একবারও ফিরে তাকায়নি। এ ঘটনার পর শচীনের নম্বর সংগ্রহ করে অঞ্জলি তাকে ফোন করেন। সৌভাগ্যবশত শচীন তার ফোন রিসিভও করেছিলেন। আমি তাকে ফোন করলাম এবং বললাম, আমি অঞ্জলি; এয়ারপোর্টে আমি তোমার নাম ধরে ডাকছিলাম।
ও বলল, সে আমাকে চিনতে পেরেছে। যখন জিজ্ঞেস করলাম কীভাবে? কী আশ্চর্য! ও বলল, ওই দিন আমি কমলা রঙের টি-শার্ট পরেছিলাম। সেই টি-শার্ট এখনও যত্ন করে নিজের কাছে রেখেছেন অঞ্জলি।
এর আগে মঞ্চে উঠে স্বামী নিয়ে প্রথম বললেন, শচীন আমাকে প্রায়ই ঠাট্টা করে বলে মাঠে কোনও দিন বিপক্ষের ফাস্ট বোলার আর গ্যালারিতে থাকা কালো কালো মাথার সামনে ব্যাট করেছ? আজ এখানে এত লোকের সামনে আমার ঠিক সেই অনুভূতিটাই হচ্ছে।
এর পর অঞ্জলি বলতে শুরু করলেন প্রেম হওয়ার পর তাদের প্রধান সমস্যা ছিল কোথায় দেখা করবেন? ‘শচীন বুদ্ধি দিল, তুমি সাংবাদিক সেজে বাড়িতে এসো। যেন আমার ইন্টারভিউ নিতে এসেছ। সেটাই করলাম। এমনকি আমরা যে বিয়ে করব, সেটাও ওর বাবা-মাকে বলার জন্য শচীন আমাকে ওর বাড়িতে পাঠাল। নিজে তখন নিউজিল্যান্ডে খেলছিল’। শচীন পাশ থেকে বললেন, ‘আমার সাহসে কুলোয়নি বাড়িতে বলব। তাই ওকে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম।
অঞ্জলি আরো বলেন, ফোনে খরচ বাঁচানোর জন্য শচীন বিদেশে থাকলে চিঠি লিখতাম। একবার ভারতের নিউজিল্যান্ড সফরের সময় শচীনকে ফোন করতে আমাকে অন্ধকারে অনেকটা রাস্তা হাঁটতে হয়েছিল। পথে খারাপ লোকজনদের ভিড় থাকার ভাবনাও আমাকে টলাতে পারেনি।
খেলার সময় শচীনকে কখনও বিরক্ত করতে চাইনি। সারা যখন ছোট তখন শচীন কিছুটা দায়িত্ব আমার কাছ থেকে ভাগ করে নিতে চেয়েছিল। আমি বলেছিলাম, তুমি খেলা নিয়েই থাকো। বাবার মৃত্যুর খবরটা শচীনকে দেওয়াটা সবচেয়ে কষ্টের ছিল বলে জানিয়েছেন অঞ্জলি।