ঢামেক মর্গে অপ্রয়োজনীয়ভাবে লাশ কেটে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে


প্রকাশিত: ০৩:৪৫ পিএম, ০৯ নভেম্বর ২০১৫

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে অপ্রয়োজনীয়ভাবে লাশ কেটে ছিন্নভিন্ন করা হচ্ছে! ময়নাতদন্তকালে ফরেনসিক মেডিসিন চিকিৎসকরা মৃতদেহের বাইরের ও ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ মাথা, গলা, উদর গহবর, বক্ষ গহবর কেটে ভেতরে বাইরে হাতিয়ে আঘাতের চিহ্ন খুঁজে বেড়ান।

সব ধরনের লাশের ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রেই এমনটি হচ্ছে তা নয়, বিশেষ ধরনের কিছু স্পর্শকাতর লাশের (রিভলবার বা পিস্তলের গুলি, বোমা বিস্ফোরণ, অগ্নিদগ্ধ, পঁচা-গলা, আর্সেনিক, মারকারি কিংবা লিড সেবনজনিত কারণে যাদের মৃত্যু হয়) ময়নাতদন্তের ক্ষেত্রে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাটা-ছেঁড়া করা হয়। জাগো নিউজের নিবিড় অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায় এ ধরনের লাশের সুষ্ঠু ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করতে পোর্টেবল এক্সরে মেশিন থাকা অত্যাবশ্যক হলেও ঢামেক মর্গে তা নেই। ফলে সুষ্ঠু ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরির দোহাই দিয়ে সংশ্লিষ্ট ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক নিরুপায় হয়ে এহেন অমানবিক কাজটি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানান, পিস্তল বা রিভলবারের গুলিতে নিহত ব্যক্তির লাশের ময়নাতদন্তকালে সমস্যা বেশি হয়। গুলির আকার খুবই ছোট হওয়ার কারণে এক্সরে ছাড়া গুলি খুঁজে বের করা দুরূহ হয়ে পড়ে।  

তারা জানান, পুলিশ সুরতহাল রিপোর্টে একাধিক গুলিতে মৃত্যু হয়েছে লিখে দেয়। তখন নিরুপায় হয়েই গুলি খুঁজে বের করতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে কাটা-ছেঁড়া করতে হয়। একইভাবে বোমা বিস্ফোরণে নিহত ব্যক্তির শরীরের বোমার স্প্লিন্টার, অগ্নিদগ্ধ কিংবা বোমাহত হয়ে মৃত্যু হলে মৃতদেহে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে কিনা তা দেখতে সেগুলোকে সাধারণ লাশের চেয়ে বেশি কাটা-ছেঁড়া করতে হয়।

DMC
চিকিৎসকরা সম্প্রতি মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেলের এক কর্মচারী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার উদাহারণ তুলে ধরে বলেন, পুলিশ সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীরের নির্দিষ্ট একটি অঙ্গে গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুর কথা উল্লেখ করলেও ময়নাতদন্তকালে মানবদেহের ওই অঙ্গ বা তার আশেপাশে প্রথমে গুলি খুঁজে পাননি। মাথা থেকে পা পর্যন্ত লাশ কাটা-ছেঁড়া করে পরে এক অংশে ছোটসাইজের গুলি আটকে থাকতে দেখা যায়।

একাধিক ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক অনেকটা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢামেকের মতো একটি খ্যাতনামা মেডিকেল কলেজ মর্গে পোর্টেবল এক্সরে মেশিন না থাকাটা সত্যিই দুর্ভাগ্যেজনক। তারা বলেন, ময়নাতদন্তকালে তারা যেভাবে সারা শরীর কাটা-ছেঁড়া করে তথ্যপ্রমাণ খুঁজে বেড়ান তা যদি আত্মীয়-স্বজন সচক্ষে দেখতেন তবে নিশ্চিতভাবে তারা চিকিৎসকের ওপর চড়াও হতেন!

অপ্রয়োজনীয় লাশ কাটা-ছেঁড়ার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ফরেনসিক বিভাগীয় প্রধান ডা. কাজী মোহাম্মদ আবু শামা সরাসরি অস্বীকার না করে বলেন, পোর্টেবল এক্সরে মেশিন থাকলে সহজেই মৃত্যুর কারণ বা তথ্যপ্রমাণ জানা সহজ হতো। বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে তারা যা করছেন তা ময়নাতদন্তেরই একটি অংশ। খুব শিগগিরই পোর্টেবল এক্সরে মেশিন মর্গে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

এমইউ/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।