করোনা প্রতিরোধে হিমায়িত খাদ্যে কড়া নজর চীনের

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
আন্তর্জাতিক ডেস্ক আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ১১:৫০ এএম, ১৪ নভেম্বর ২০২০

করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে গত কয়েকমাস ধরে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে চীন। তবে সীমান্তে ব্যাপক কড়াকড়ি আর কোয়ারেন্টাইন নীতি সত্ত্বেও ছোট ছোট সংক্রমণের ঘটনা যেন থামছেই না। এর জন্য বহিরাগত ভ্রমণকারীদের পাশাপাশি আরেকটি জিনিসের দিকে কড়া নজর চীনা কর্মকর্তাদের- আমদানি করা হিমায়িত খাদ্য।

যদিও চীনাদের এ দাবি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার সঙ্গে মিলছে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, খাবার ও ফুড প্যাকেজিং থেকে মানুষের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রও (সিডিসি) বলছে, এগুলো থেকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি কম। হিমায়িত খাদ্য ও ফুড প্যাকেজিং থেকে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, এখনও এমন প্রমাণ মেলেনি বলে জানিয়েছে সংস্থা দু’টি।

তবে চীনের দাবি, তারা ফুড প্যাকেজিং থেকে করোনা ছড়াতে পারে তা প্রমাণ করতে পেরেছে এবং ইতোমধ্যেই এর বিস্তার রোধে সুরক্ষা ব্যবস্থা দ্বিগুণ করেছে।

চলতি সপ্তাহেই চীনা সিডিসির প্রধান মহামারি বিশেষজ্ঞ উ জুনইউ বলেছেন, একের পর এক প্রমাণে দেখাচ্ছে, হিমায়িত সামুদ্রিক খাবার বা মাংস সংক্রমিত দেশ থেকে চীনে ভাইরাস নিয়ে আসতে পারে।

China-1

গত পাঁচ মাস ধরে চীন বলছে, তারা আমদানি করা হিমায়িত খাদ্যপণ্য বা সেগুলোর প্যাকেজিংয়ে করোনাভাইরাসের নমুনা খুঁজে পাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ইকুয়েডরের চিংড়ি, রাশিয়ার স্কুইড, নরওয়ে ও ইন্দোনেশিয়ার মাছ এবং ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গরুর মাংস ও মুরগির পাখনা।

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনের নিউক্লিয়িক অ্যাসিড টেস্টে মৃত ভাইরাসের অংশ ধরা পড়তে পারে, যা থেকে আর সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা নেই।

কিন্তু, গত মাসে শিংদাও শহরে একটি সংক্রমণের উৎস চিহ্নিত করে চীনা সিডিসি ঘোষণা দেয়, তারা আমদানি করা হিমায়িত কডফিশে জীবিত করোনাভাইরাস খুঁজে পেয়েছে। এ ঘটনাকে তারা বিশ্বে প্রথমবার প্যাকেজিংয়ের মাধ্যমে করোনা ছড়াতে পারে- এর প্রমাণ হিসেবে দাবি করেছে।

তবে চীনা সিডিসির বক্তব্যে কিছু প্রশ্নের উত্তর অজানাই থেকে গেছে। শিংদাও কর্মকর্তরা জানিয়েছেন, ডকের দুইজন কর্মী করোনা পজিটিভ শনাক্ত হওয়ার সূত্র ধরেই সংক্রমণের ঘটনা চিহ্নিত করা হয়েছিল। তবে তারা প্যাকেট বা এর ভেতরে থাকা খাদ্যপণ্য থেকেই আক্রান্ত হয়েছিলেন নাকি অন্য কোনও মাধ্যমে, তা নিশ্চিত করে বলা হয়নি।

China-2

ইউনিভার্সিটি অব হংকংয়ের ভাইরোলজির অধ্যাপক জিন ডংইয়ান বলেছেন, যদিও এধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, তবে চীনা সিডিসি সংক্রমণের বিষয়ে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ দেয়নি।

তিনি বলেন, ডক কর্মীরা বাইরে থেকে আক্রান্ত হতে পারেন এবং পরে তাদের মাধ্যমেই প্যাকেজিংয়ে ভাইরাস যেতে পারে। এখানে যে বিষয়টি নেই তা হচ্ছে, শিংদাও কর্মীদের শরীরে থাকা ভাইরাস এবং উৎসস্থলে যারা খাবারটি প্যাকেটজাত করেছেন তাদের শরীরে থাকা ভাইরাসের জেনেটিক সিকোয়েন্স।

অধ্যাপক জিন বলেন, প্রতিটি ভাইরাসের নিজস্ব চিহ্ন থাকে। সেগুলো যদি মিলে যায়, তবেই আমরা বলতে পারি- যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

সংক্রমণের উৎস নিয়ে বিতর্ক থাকলেও শিংদাও কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই হিমায়িত খাদ্যপণ্য আমদানিতে সুরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করেছে এবং প্রতিটি পণ্য পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। এছাড়া, যেসব কর্মী পণ্যগুলো নামাবে, বহন করবে বা পরিবহনে যুক্ত থাকবে, তাদের সবাইকে তিন থেকে পাঁচদিন পরপর শারীরিক নমুনা পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সূত্র: সিএনএন

কেএএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।